ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ দোহার এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরু বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায়

স্পেন-মরক্কো কো. ফাইনালে ওঠার লড়াই

রুমেল খান

প্রকাশিত: ২৩:৪৬, ৫ ডিসেম্বর ২০২২

স্পেন-মরক্কো কো. ফাইনালে ওঠার লড়াই

দুই কোচ স্পেনের লুইস এনরিক ও মরক্কোর ওয়ালিদ রেগরাগুই

একদিকে ৭ নম্বর ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী, একবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন (২০১০) এবং ‘লা রোজা’ খ্যাত স্পেন। অন্যদিকে ২২ নম্বর ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী, একবারের ফিফা আরব কাপ চ্যাম্পিয়ন (২০১২) এবং ‘দ্য এটলাস লায়ন্স’ খ্যাত মরক্কো। চলমান কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে ইউরোপ বনাম আফ্রিকার মধ্যে লড়াইয়ে জিতবে কে? সেটার নিষ্পত্তি হবে আজ মঙ্গলবার আল রাইয়ানের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় আর্জেন্টিনার রেফারি ফার্নান্দো রাপাল্লিনির বাঁশি বাজলেই শুরু হবে ম্যাচটি।
ই-গ্রুপের রানার্র্সআপ হিসেবে স্পেন উঠে এসেছে এবারের দ্বাবিংশতম আসরের নকআউট স্টেজে। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই তারা কোস্টারিকাকে ৭-০ গোলে বিধ্বস্ত করে শুভসূচনা করে। দ্বিতীয় ম্যাচে তারা জার্মানির সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে হোঁচট খায়। তৃতীয় ম্যাচে অবস্থা হয় আরও খারাপ। এবার জাপানের কাছে ১-২ গোলে হেরে অঘটনের শিকার হয়। ৩ ম্যাচে ১ জয়, ১ ড্র ও ১ হারে তাদের অর্জিত হয় ৪ পয়েন্ট।

সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট হয়ে যায় জার্মানিরও। কিন্তু গোলপার্থ্যকে এগিয়ে থাকায় (স্পেন +৬, জার্মানি +১) কপাল খুলে যায় স্পেনেরই। জার্মানিকে পয়েন্ট টেবিলের তিনে নামিয়ে তারা চলে যায় দুইয়ে। সেই সঙ্গে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে পৌঁছে যায় কাক্সিক্ষত দ্বিতীয় রাউন্ডে।
পক্ষান্তরে এফ-গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে রাউন্ড অব সিক্সটিনে নাম লেখায় মরক্কো। নিজেদের প্রথম গ্রুপ ম্যাচে তারা গোলশূন্য ড্র করে গত আসরের রানার্সআপধারী ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে। দ্বিতীয় ম্যাচে গত আসরের তৃতীয় স্থান অধিকারী বেলজিয়ামকে ২-০ গোলে হারিয়ে দেয় অঘটন ঘটায়। তৃতীয় ম্যাচে কানাডাকে হারায় ২-১ গোলে। ৩ ম্যাচে ২ জয় ও ১ ড্রতে ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নাম লেখায় শেষ ১৬ তে। এবার আসা যাক দুদলের মুখোমুখি লড়াইয়ের প্রসঙ্গে।

এ পর্যন্ত উভয় দল তিনবার (১৯৬১-২০১৮) মুখোমুখি হয়েছে। দুবার জিতেছে স্পেন। মরক্কো জয়হীন। অপর ম্যাচটি ড্র হয়। বিশ্বকাপের মূলপর্বে দুদল এর আগে একবারই পরস্পরকে মোকাবিলা করেছে। ২০১৮ আসরে গ্রুপ পর্বের সেই ম্যাচে শেষ মুহূর্তে গোল করে মরক্কোর বিরুদ্ধে কোনোমতে হার এগিয়েছিল স্পেন (২-২)। আজ যে দলই জিতবে, তারাই বিশ্বকাপের হেড টু হেডের পরিসংখ্যানে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে স্পেনের চেয়ে ১৫ ধাপ পিছিয়ে থাকলেও মরক্কো কিন্তু আজ স্পেনকে হারানোর মতোই দল, এমনটাই মনে করছেন অনেক ফুটবলবোদ্ধা। যেখানে স্পেন গ্রুপ পর্বে এক ম্যাচ হেরে দ্বিতীয় পর্বে এসেছে, সেখানে গ্রুপ পর্বে কোন ম্যাচেই হারেনি মরক্কো। তাছাড়া আজকের ম্যাচে তারা আন্ডারডগ হিসেবেই নামবে বিধায় তাদের ওপর বাড়তি চাপ থাকবে না। বরং এই চাপটা বেশি থাকবে স্পেনের ওপরেই।

আজ স্পেন জিতলে তারা ষষ্ঠবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠবে। এর আগে তারা শেষ আটে খেলেছে ১৯৩৪, ১৯৮৬, ১৯৯৪, ২০০২ ও ২০১০ সালে (১৯৫০ আসরে চতুর্থ হলেও সেবার খেলা হয়েছিল লিগ পদ্ধতিতে)। তার মানে আজ জিতলে স্প্যানিশরা শেষ আটের খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে পাক্কা এক যুগ পর!
আজ মরক্কো জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলে তারা নিশ্চিতভাবেই ইতিহাস পড়বে। কেননা এর আগে কখনই তারা শেষ আটে উঠতে পারেনি। এবার তারা দ্বিতীয়বারের মতো শেষ ১৬ তে ওঠে ৩৬ বছর পর (১৯৮৬ সালের পর)। যদি তারা কোয়ার্টারে ওঠে, তাহলে ক্যামেরুন এবং সেনেগালের পর তৃতীয় আফ্রিকান দল হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করতে পারবে তারা।

স্পেন ২০১৮ বিশ্বকাপে শেষ ১৬ তে বাদ পড়েছিল। কিন্তু কোচ লুইস এনরিকে পেছনের ইতিহাস নিয়ে ভাবতে নারাজ। তিনি আজকের ম্যাচে জয়ের কথাই ভাবছেন। মরক্কো কোচ ওয়ালিদ রেগ্রাগুই-ও জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।
মরক্কোর এক নম্বর গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনু বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে জয়ের ঠিক আগে অসুস্থ বোধ করেছিলেন এবং শেষ সেকেন্ডে মাঠ ছেড়েছিলেন। তবে কানাডার বিরুদ্ধে পুরো ৯০ মিনিট খেলেছেন। আজ তাকেই গোলপোস্টের নিচে দেখা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ডিফেন্ডার আচরাফ হাকিমির গোড়ালির চোট কাটিয়ে আজ খেলার সম্ভাবনা আছে। ফরোয়ার্ড হাকিম জিয়েচ, মিডফিল্ডার সোফিয়ান আমরাবাত এবং ফরোয়ার্ড সোফিয়ান বুফাল... এই ত্রয়ীকে বিগত ম্যাচগুলোতে বিশ্রামে রাখা হয়েছিল। আজ তাদের একাদশে নামিয়ে তাদের ওপর ভরসা করবেন কোচ রেগ্রাগুই।
স্পেনের সর্বশেষ ট্রেনিং সেশনে দানি ওলমো, ডেভিড রায়া এবং সিজার আজপিলিকুয়েটাকে দেখা যায়নি। আজপিলিকুয়েটা জাপানের বিপক্ষে হাফ টাইমে নেমেছিলেন। তার অবশ্য কিঞ্চিৎ চোট-সমস্যা আছে। তবে ফেরাস টোরেস এবং জর্ডি এলবা প্রথম একাদশে ফিরে আসার কথা। এনরিকের আজকের মূল ভরসা আলভারো মোরাতা। তিনি স্পেনের হয়ে তার শেষ চারটি খেলাতেই গোল করেছেন, এবং চলমান আসরে ৬টি শটের চেষ্টা থেকে ৩টি গোল করেছেন।
স্পেনের জন্য প্লাস পয়েন্ট হলো তারা কখনো মরক্কোর বিরুদ্ধে কোনো অফিসিয়লি ম্যাচ হারেনি। আফ্রিকান দলের বিরুদ্ধে তাদের প্রথম দুটি জয় ১৯৬১ সালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে এসেছিল। স্পেন এই প্রথমবারের মতো ফিফা বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে একটি আফ্রিকান দলের মুখোমুখি হতে চলেছে। যদিও তারা গ্রুপ পর্বে এই মহাদেশের দলের বিরুদ্ধে তাদের পাঁচটি খেলায় অপরাজিত।

×