আর্জেন্টিনার জয়ে বাংলাদেশে উৎসব
৩২ দেশের বিশ্বকাপ। কিন্তু ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার বাইরে আর দু-চারটি দলের নাম বলতে পারবেন বাংলাদেশে এমন মানুষের সংখ্যা খুব বেশি নয়! অনেকের মতে, গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে লাল-সবুজের দেশটি আসলে দুই ভাগে বিভক্ত। সেটা কি সমান দুই ভাগে? সঠিন উত্তর নেই, কারণ এখনো পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো জরিপ হয়নি। তবে এই দুই দলের জয়ে মধ্যরাতেও ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনাসহ দেশের আনাচে-কানাচে যেভাবে মিছিল-স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠছে, তাতে এটি পরিষ্কার এখানেও লড়াইটা সেয়ানে-সেয়ানে।
কিছুদিন আগে আর্জেন্টিনার জয়ে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যাপনের ছবি দিয়ে সেটি বাংলাদেশকে ট্যাগ করেছিল ফিফা। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবার কাতার বিশ্বকাপে সুইজারল্যান্ডকে হারিয়ে ব্রাজিলের শেষ ষোলো নিশ্চিতের ম্যাচে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরের জনসমুদ্রের একাধিক ছবিসহ পোস্ট দিয়েছে। দুদিন আগে আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন এডিট করে মেসির হাতে তুলে দেয় বাংলাদেশের পতাকা। এতে বিশ্ব ফুটবলে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের প্রতি এ দেশের মানুষের তুমুল আগ্রহের বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে। উন্মাদনা বেড়ে যায় বহুগুণে।
গত পরশু দোহার ৯৭৪-স্টেডিয়ামে ইউরোপিয়ান শক্তি পোল্যান্ডকে ২-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে শেষ ষোলোয় নাম লেখায় আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশ সময় রাত তিনটায় রেফারির শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে পটকার আওয়াজে, মিছিলে, নাচে, গানে উৎসবের নগরীতে রূপ নেয় ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক এলাকা। বিশ্বকাপের সব খেলা দেখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় দুটি ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের মাঠে একটি ডিজিটাল স্ক্রিন বসানো হয়েছে।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও তার আশপাশেও আছে খেলা দেখার ব্যবস্থা। পছন্দের দলের খেলা দেখতে রোজই ক্যাম্পাসে ভিড় জমছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকছেন ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। আর্জেন্টিনা-পোল্যান্ডের খেলা দেখতে রাত সাড়ে ১২টা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা ও মুহসীন হলের মাঠে জড়ো হতে শুরু করেন আর্জেন্টিনার সমর্থকরা।
আর্জেন্টিনার পতাকাসহ ক্যাম্পাসের সড়কে পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলের শোডাউন দেন সমর্থকরা। সঙ্গে বাজছিল ভুভুজেলা বাঁশি। সমর্থকরা টিএসসি এলাকার রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিয়ে আর্জেন্টিনার বড় আকারের একটি পতাকা উড়িয়ে আর্জেন্টিনার পক্ষে নানা স্লোগান দেন।
রাত তিনটার দিকে রেফারির শেষ হুইসেল বেজে ওঠে, আর্জেন্টিনার ২-০তে জয়ের পর প্রায় ১০ মিনিট টিএসসি এলাকায় বিরতিহীনভাবে ভুভুজেলা বাঁশি বাজান সমর্থকরা। এর মধ্যেই সমর্থকদের একাংশ টিএসসিতে স্থাপিত ডিজিটাল স্ক্রিনের সামনে মেতে ওঠেন উল্লাসে। আর্জেন্টিনা সমর্থকদের আরেকটি অংশ রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিয়ে প্রিয় দলের জয়ের আনন্দে ভুভুজেলা ও হর্ষধ্বনিতে মাতেন। এ সময় তারা ‘মেসি, মেসি’ বলে স্লোগানও দেন। টিএসসি এলাকায় ঘণ্টাখানেক ধরে চলে আর্জেন্টিনার বিজয় উদ্যাপন।
ওদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরান ঢাকার নারিন্দা, ওয়ারী, ভিক্টোরিয়া পার্ক, মুরগিটোলা মোড়, রায় সাহেবের বাজার, কলতাবাজার, লক্ষ্মীবাজারের প্রতিটি গলিতে টিভি, প্রজেক্টর, এলইডি স্ক্রিনে খেলা দেখার ব্যবস্থা করে স্থানীয়রা। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোতে জায়গা করে নেওয়ায় পুরান ঢাকাকে মিছিলের নগরীতে পরিণত করে আর্জেন্টাইন সমর্থকরা। এ সময় নাচ-গান, বাঁশির শব্দে বিভিন্ন সড়ক মুখরিত করে তোলেন তারা। আনন্দ মিছিল হয়েছে চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, জাহাঙ্গীরনগরসহ প্রতিটি বড় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়।