ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আর্জেন্টিনার বাঁচা-মরার লড়াই

জিএম মোস্তফা

প্রকাশিত: ২৩:০১, ২৯ নভেম্বর ২০২২

আর্জেন্টিনার বাঁচা-মরার লড়াই

লিওনেল মেসি

দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে শিরোপা-খরায় ভুগছে আর্জেন্টিনা। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার নৈপুণ্যে চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলটি এরপর কখনোই স্বপ্নের শিরোপায় চুমো আকতে পারেনি। তবে এবার লিওনেল মেসির শেষ বিশ্বকাপে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে আলবিসেলেস্তেরা। টানা ৩৬ ম্যাচে অপরাজিত থাকা লিওনেল স্কালোনির শিষ্যদের পারফর্মেন্সও ছিল তুঙ্গে।

কিন্তু সেই অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটে চলা দলটাই ২০২২ বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় অঘটনের শিকার হয় নিজেদের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হেরে। তবে দ্বিতীয় ম্যাচেই মেক্সিকোর বিপক্ষে জিতে ঘুরে দাঁড়ায় ম্যারাডোনার উত্তরসূরিরা। গ্রুপ পর্বের বাধা পেরুনোর লক্ষ্য নিয়ে আজ আবারও মাঠে নামছে লিওনেল স্কালোনির দল। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী পোল্যান্ড। বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় ৯৭৪ স্টেডিয়ামে একে অপরের মুখোমুখি হবে এই দুই দল।

শেষ ষোলোর টিকিট কাটতে হলে পোল্যান্ডের বিপক্ষে এই ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। ড্র হলেও সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সেজন্য নির্ভর করতে হবে অন্য ম্যাচের ফলাফলের ওপর। কাতার বিশ্বকাপে ‘সি’ গ্রুপে সবচেয়ে ফেভারিট দলের ট্যাগ মাখানো ছিল আর্জেন্টিনার গায়ে। অন্যদিকে তুলনামূলকভাবে দুর্বল দল হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল সৌদি আরবকে। কিন্তু সেই সৌদি আরবই প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা জয় তুলে নেয়।

সেইসঙ্গে জটিল হয়ে পড়ে গ্রুপের সমীকরণও। আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে গোটা ফুটবল দুনিয়াকে চমকে দেওয়া সৌদি আববের জয়রথ থেমে যায় দ্বিতীয় ম্যাচেই। রবার্ট লেভানডোস্কির জাদুতে পোল্যান্ড ২-০ গোলে সৌদিকে হারালে ‘সি’ গ্রুপের লড়াইও জমে ওঠে। এখন পর্যন্ত এই গ্রুপের চার দল পোল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, সৌদি আরব এবং মেক্সিকোরও নকআউট পর্বে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে আজ ফুটবলপ্রেমীদের বাড়তি নজর থাকবে ৯৭৪ স্টেডিয়ামে।

এখানেই যে রবার্ট লেভানডোস্কির পোল্যান্ডের মুখোমুখি হবে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১১ ম্যাচে মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা ও পোল্যান্ড। এগিয়ে অবশ্য আর্জেন্টিনাই। আলবিসেলেস্তাদের ৬ ম্যাচে জয়ের বিপরীতে পোল্যান্ডের জয় ৩টিতে। বাকি দুটি ম্যাচের ফলাফল ড্র। ১৯৬৬ সালে প্রথম দেখা হয় তাদের। সর্বশেষ সাক্ষাৎ ২০১১ সালে। শেষের এই প্রীতি ম্যাচে ২-১ গোলে হারে আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপে আজ তৃতীয়বারের মতো একে অপরের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা-পোল্যান্ড।

আগের দুই দেখায় দুই দলেরই সমান একটি করে জয়। বিশ্বকাপে ১৯৭৪ সালে প্রথমবার মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা-পোল্যান্ড। সেই ম্যাচে ৩-২ গোলে জিতেছিল পোলিসরা। পরের বিশ্বকাপেই অবশ্য সেই হারের মধুর প্রতিশোধ নিয়ে নেয় আর্জেন্টিনা। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে আলবিসেলেস্তেরা ২-০ গোলে জেতে তারা। সুতরাং শক্তির দিক দিয়ে কোনো দলকেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তবে এবার বিশ্বমঞ্চে লড়াইটা হবে দীর্ঘ ৪৪ বছর পর।

এই সময়ে দুই দলের মধ্যে বদলেছে অনেক। এই সময়ে দুইবার বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা। কিন্তু পোলিসদের কাছে বিশ্বকাপের শিরোপাটা এখনো অধরা। সর্বশেষ ২০১৪ সালেও ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল মেসি-অ্যাগুয়েরোরা। কিন্তু সেবার জার্মানদের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল ম্যারাডোনার উত্তরসূরিরা। এরপর রাশিয়া বিশ্বকাপেও নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি স্কালোনির দল।

তবে এবার হার দিয়ে শুরু করলেও দারুণ আশাবাদী আর্জেন্টাইন ফুটবলের ভক্ত-অনুরাগীরা। সেক্ষেত্রে আজ জয়ের বিকল্প নেই মেসিদের। ১ ম্যাচ জিতে ৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুইয়ে থাকা আর্জেন্টিনার শেষ ষোলোতে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ড্র করলেও। সেক্ষেত্রে ভাগ্য নির্ধারণ করবে সৌদি আরব-মেক্সিকোর ম্যাচ। ইউরোপের দলের বিপক্ষে বৈশ্বিক আসরে সবশেষ দুই সাক্ষাতেই হারের তেতো স্বাদ পেয়েছে আর্জেন্টিনা।
২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩-০ এবং ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে হেরেছিল তারা। এসব পরিসংখ্যানে অবশ্য পোল্যান্ডই এগিয়ে থাকবে। তাছাড়া চলতি বিশ্বকাপেও এখন পর্যন্ত হারেনি পোল্যান্ড। প্রথম ম্যাচে মেক্সিকোকে
রুখে দেয় তারা। সেই ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে মাঠ ছাড়ার পর উড়তে থাকা সৌদি আরবকেও মাটিতে নামায় রবার্ট লেভানডোস্কির দল। সেই ম্যাচে ২-০ গোলের জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন বার্সিলোনার এই পোলিস স্ট্রাইকার। সেই ম্যাচে বিশ্বকাপের ইতিহাসে নিজের প্রথম গোলেরও দেখা পান তিনি। তাই ফর্মের তুঙ্গে থাকা লেভানডোস্কিও আজ বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবেন আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগের সামনে। এক ম্যাচে জয় আর ড্রয়ের সৌজন্যে ৪ পয়েন্ট নিয়ে ‘সি’ গ্রুপের শীর্ষে
অবস্থান করছে পোল্যান্ড। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ড্র করলেই শেষ ষোলোর টিকিট নিশ্চিত হয়ে যাবে তাদের। আর জয়ের দেখা পেলে তো গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই শেষ ষোলোতে জায়গা করে নিবে বিশ্বকাপে দুইবারের সেমিফাইনালিস্টরা।

সম্পর্কিত বিষয়:

×