
.
ইয়াঙ্গুনে স্বপ্নের মতো সময় কাটছে মেয়েদের। এএফসি নারী এশিয়া কাপের বাছাইয়ে যোজন যোজন ধাপ এগিয়ে থাকা বাহরাইনকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পর ফুটবলে এই অঞ্চলের অন্যতম পরাশক্তি মিয়ানমারকে ২-১ গোলে হারিয়েছে বাঘিনীরা। নারী ফুটবলের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এশিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চ এশিয়া কাপে জায়গা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। টানা দুই জয়ে স্বপ্ন পূরণের পরও অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার, জোড়া গোলে ইতিহাস গড়ার নায়ক ঋতুপর্ণা চাকমা কিংবা নেপথ্যের কারিগর কোচ পিটার বাটলারÑ কেউই উচ্ছ্বাসে ভেসে যাননি। জানিয়েছেন, গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানকে হারিয়ে জয়ের হ্যাটট্রিক পূরণের পরই হবে আসল উদ্যাপন। দুই প্রতিপক্ষের জালে ৮ গোল দিয়ে ১ গোল হজম করা বাংলাদেশ ‘সি’ গ্রুপের শীর্ষে। দুইয়ে স্বাগতিক মিয়ানমারের যাত্রা শুরু হয়েছিল তুর্কমেনিস্তানকে ৮-০ গোলের বন্যায় ভাসিয়ে। বাহরাইন-তুর্কমেনিস্তান ম্যাচ ২-২ গোলে ড্র হলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই শীর্ষস্থান নিশ্চিত করে কোয়ালিফাই করে বাংলাদেশ।
‘সি’ গ্রুপের সার্বিক চিত্রই বলে দেয়, প্রতিপক্ষ হিসেবে তুর্কমেনিস্তান মোটেই আহা মরি নয়। তবে সিরিয়াস বাটলার,‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিনয়ী থাকা, বিনম্র থাকতে হবে আমাদের। কেননা, কাজের অর্ধেক হয়েছে। বাকিটা শেষ করতে হবে। পরের ম্যাচের প্রতিপক্ষকে শ্রদ্ধা করতে হবে। এখনো আমাদের অনেক কিছু পাওয়ার বাকি আছে। তার জন্য প্রস্তুত হতে হবে।’ র্যাঙ্কিংয়ে ৭৩ ধাপ এগিয়ে থাকা মিয়ানমারের (৫৫) বিপক্ষে জয়ের পর বলছিলেন কোচ। বাংলাদেশ ১২৮ আর আজকের প্রতিপক্ষ তুর্কমেনিস্তান ১৪২। বুধবার মিয়ানমারের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় সেই সাফল্যের পর বৃহস্পতিবার সুইমিং করে কিছুটা রিল্যাক্স সময় কাটানো মেয়েরা শুক্রবারই অনুশীলনে ঘাম ঝরিয়েছে। প্রতিপক্ষ গ্রুপের তলানির দল তুর্কমেনিস্তান। তবে প্রতিপক্ষকে মোটেও হালকাভাবে মেয়েরা নিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন উজ্জ্বল,‘দলের পরিস্থিতি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। ছোটখাট কিছু চোট সমস্যা আছে, কোচ ওই সকল খেলোয়াড়কে রিকভারি করার সময় দিয়েছে এবং বাকিদের নিয়ে আমরা মাঠে কাজ করেছি। তুর্কমেনিস্তানকে নিয়ে মেয়েরা খুবই সিরিয়াস এবং মনোযোগী। আমরাও তাদের প্রতিনিয়ত বলছি, আমাদের বাছাই এখনো শেষ হয়নি এবং যেহেতু উদ্যাপন করিনি, ইনশাল্লাহ জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করে আমরা উদ্যাপনটা করতে চাই।’ ইতিহাস গড়ে বাঁধনহারা উদ্যাপনে মেয়েরা মাতেনি বটে, তবে অধিনায়ক আফঈদার কণ্ঠে ছিল উচ্ছ্বাস।
শুক্রবার অনুশীলনের ফাঁকে এই ডিফেন্ডার বলেন,‘এই আনন্দ আসলে বলে বোঝানোর মতো নয়। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল ইতিহাসে এই প্রথম এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করেছে, এটা খুবই আনন্দের। গর্ববোধ করছি। দেশের মানুষ আমাদের অনেক সমর্থন দিয়েছে। দলের পরিস্থিতি খুবই ভালো। সবাই খুব ফুরফুরে মেজাজে ভালোই অনুশীলন করলাম। আগামীকাল (আজ) আমাদের শেষ ম্যাচ। এ ম্যাচের জন্য সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’ এশিয়ান কাপের মূল পর্ব আগামী মার্চে অনুষ্ঠিত হবে অস্ট্রেলিয়ায়। সেরা ছয় দলের মধ্যে থাকলে মিলবে ২০২৭ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ। কাজটা সহজ নয় মোটেও। তবে আফঈদা দেখছেন বড় স্বপ্ন, বাংলাদেশকে দেখতে চান ব্রাজিলে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপে।‘সমর্থকদের বলব, সবাই যেভাবে আমাদের সমর্থন করছেন, সেভাবেই সাপোর্ট করবেন। আমরা যেন আরও এগিয়ে যেতে পারি, সবাই দোয়া করবেন। দলকে আমি বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখতে চাই। যেহেতু আমাদের সামনে সুযোগটা আসছে, আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব সুযোগ কাজে লাগাতে।’
টিম ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান লিটু জানিায়েছেন, দুর্দান্ত প্রাপ্তির আনন্দে খোশ মেজাজেই আছে মেয়েরা,‘ মেয়েরা ভালো মুডে আছে। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ একটা ম্যাচ গেছে। এজন্য আমরা রিকভারি করছি। স্ট্রেচিং করে সুইমিং করেছে। এটা (বাছাই পেরুনো) আমি বলব, আমাদের মেয়েদের এতদিনের যে কষ্ট, এতদিনের যে জার্নি, যে পরিশ্রম মেয়েরা করেছে, তার ফসল আমরা পেয়েছি। মেয়েরা একটা ইতিহাস গড়েছে, আমাদের আরেকটা ম্যাচ আছে। এ ম্যাচটাকেও গুরুত্ব দিচ্ছি।’ উল্লেখ্য, আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় এশিয়ান কাপে অংশ নেবে ১২টি দল। স্বাগতিকসহ ইতোমধ্যে চারটি দল পেয়ে গেছে মূল পর্বের টিকিট। বাকি দলগুলো হলো ২০২২ সালে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন চীন, রানার্সআপ দক্ষিণ কোরিয়া ও তৃতীয় স্থান পাওয়া জাপান।
মূল মঞ্চে তাদের সঙ্গী হবে বাছাইপর্বের আটটি গ্রুপের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ আটটি দল। বাংলাদেশই যেখানে প্রথম দল হিসেবে তাদের সঙ্গী হয়েছে।