ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সৌদিকে হারিয়ে রেসে থাকল পোল্যান্ড

এমবাপের জোড়া গোলে শেষ ষোলোয় ফ্রান্স

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০১:৩৮, ২৭ নভেম্বর ২০২২

এমবাপের জোড়া গোলে শেষ ষোলোয় ফ্রান্স

ডেনমার্কের বিপক্ষে ফরাসিদের জয়ের নায়ক কিলিয়ান এমবাপে

এনগোলো কন্তে নেই, নেই পল পগবা, শেষ মুহূর্তের ইনজুরিতে ওই তালিকায় যুক্ত হন ব্যালন ডি’অর জয়ী করিম বেনজেমা। অথচ সবার আগে কাতার বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় নাম লেখালো ফ্রান্স। ‘ডিফেন্ডিং’ চ্যাম্পিয়নদের উদ্ভাসিত এ সাফল্যের নায়ক একজন কিলিয়ান এমবাপে। শনিবার ডেনমার্ককে ২-১ গোলে হারানোর পথে দুটি গোলই করেছেন তারকা স্ট্রাইকার। ৬১ মিনিটে ডেডলক ভাঙার পর ৮৬ মিনিটে ডেনিশদের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন এমবাপে।

এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪-১এ জয়ের ম্যাচেও একটি গোল করেছিলেন তিনি। এ জয়ে ডি- গ্রুপ থেকে ৬ পয়েন্ট নিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই শেষ ষোলোয় উঠে গেল দিদিয়ের দেশমের দল। ওদিকে দিনের আরেক ম্যাচে সৌদি আরবকে ২-০ গোলে হারিয়ে সি- গ্রুপ থেকে রেসে ফিরেছে পোল্যান্ড। পোলিশদের হয়ে ৩৯ মিনিটে প্রথম গোলটি করেন পিওতর জেলিনস্কি। ৮২ মিনিটে ব্যবধান দিগুণ করেন অধিনায়ক রবার্ট লেভানডোস্কি। সর্বোপরি নিজের দ্বিতীয় বিশ্বকাপে এসে গোলের গেঁরো খুললেন এ তারকা স্ট্রাইকার।
২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্সের দ্বিতীয় ট্রফি জয়ের মিশনে এমবাপে করেছিলেন ৪ গোল। এবার দুই ম্যাচে ৩ গোল মিলিয়ে তার মোট গোল ৭টি। বয়স ২৪ পূর্ণ হওয়ার আগেই বিশ্বকাপে ৭ গোল করে গ্রেট পেলের পাশে নাম লেখালেন তিনি। আগামী ১৮ ডিসেম্বর কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালের দুদিন পর ২৪ পূর্ণ হবে এমবাপের। গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর ৬১তম মিনিটে থিও এরনঁদেজের সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে বক্সে ঢুকে পড়েন এমবাপে।

এরপর বাইলাইন থেকে সতীর্থের কাটব্যাক পেয়ে দারুণ ফিনিশিংয়ে দলকে এগিয়ে নেন পিএসজি তারকা। এ নিয়ে জুস্ত ফঁতেনের পর মাত্র দ্বিতীয় ফরাসি ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে টানা তিন ম্যাচেগোল করলেন এমবাপে; ৬০ বছরের মধ্যে প্রথম। ১৯৫৮ বিশ্বকাপে টানা ৬ ম্যাচে গোল করেছিলেন গ্রেট ফরোয়ার্ড ফঁতেন। একটু পর ডেনমার্ক ১-১এ সমতা টালে পয়েন্ট হারানোর শঙ্কায় পড়েছিল ফ্রান্স।

শেষ দিকে আবারো দলকে পথ  দেখান এমবাপে। ৮৬তম মিনিটে আতোয়া গ্রিজম্যানের ক্রসে খুব কাছ  থেকে সহজেই জয়সূচক  গোলটি করেন তিনি। তাতেই ছুঁয়ে ফেলেন পেলের ওই রেকর্ড; বয়স ২৪ বছর পূরণের আগে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি তার ৭ গোলে সঙ্গী হলেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তীর।
ওদিকে পরাশক্তি আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ২-১ গোলের জয়ে বিশ্বকাপে সৌদি আরবের শুরুটা ছিল চমক জাগানো। ফুটবল বিশ্বকেই চমকে দিয়েছিল হার্ভে রেনার্ডের শিষ্যরা। যেটিকে বলা হচ্ছে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঘটন। কিন্তু এবার আর পোলিশদের সঙ্গে পেরে উঠল না তারা। সৌদিকে ২-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ-সি থেকে শেষ ষোলোর রেসে টিকে থাকল নিজেদের প্রথম ম্যাচে মেক্সিকোর সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করা পোল্যান্ড।

দোহার এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে সালমান আল-ফারাজদের শুরুটা ছিল বেশ চনমনে, আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু প্রথমার্ধের ৩৯ মিনিটে এগিয়ে যায় পোল্যান্ড। ডান দিক থেকে সতীর্থের পাস বক্সে পান অধিনায়ক রবার্ট লেভানডোস্কি। তবে গোলরক্ষক এগিয়ে আসায় শট নিতে পারেননি তিনি। বাইলাইনের কাছাকাছি থেকে বার্সেলোনা ফরোয়ার্ডের কাটব্যাকে জোরাল শটে বল জালে পাঠান মিডফিল্ডার পিওতর জেলিনস্কি। ফুটবল যে গোলের খেলা ম্যাচে সেটিই প্রমাণ করেছে পোল্যান্ড।

শুরুতে প্রায় ৭০ শতাংশ এবং সর্বোপরি ৬৩ শতাংশ বল দখলে রেখে, পেনাল্টি পেয়ে, ৫টি অন টার্গেট শট করেও গোলের দেখা পায়নি সৌদি আরব। উল্টো আল ফারাজদের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন লেভনডোস্কি। সৌদির রক্ষণভাগের খেলোয়াড়ের ভুলে ম্যাচের ৮২ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ হয়  পোল্যান্ডের। এ সময় বক্সের সামনে রক্ষণভাগের খেলোয়াড়ের পা ফঁসকে চলে আসা বলের নিয়ন্ত্রণ নেন লেভানডোস্কি। সৌদির গোলরক্ষক কিছুটা এগিয়ে আসেন। ঠাণ্ডা মাথায় তাকে পরাস্ত করে বল জালে জড়ান বার্সেলোনার এই ফরোয়ার্ড। বিশ্বকাপের মঞ্চে তার প্রথম গোল আর বিশ্বকাপের ইতিহাসে ২৬০০তম গোল।
২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হয় লেভানডোস্কিার। তবে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে তাকে অপেক্ষা করতে হয় ২০১৮ আসর পর্যন্ত। কারণ ২০১০ ও ২০১৪ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি পোল্যান্ড। রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত গত বিশ্বকাপে (২০১৮) অবশ্য আলো ছড়াতে পারেননি। জালের দেখা পাননি একবারও।

গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়া পোল্যান্ড গোল করেছিল মোটে দুটি। এবার অবশ্য সবখানেই দারুণ ছন্দে ছিলেন লেভানদোভস্কি।  কাতার বিশ্বকাপে এবার মেক্সিকোর বিপক্ষে দলের প্রথম ম্যাচেই সুযোগ এসেছিল বিশ্বকাপে প্রথম গোলের দেখা পাওয়ার। পেনাল্টি পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে অবশ্য ব্যর্থ হন। অথচ তিনি তার দেশের পক্ষে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৭৬ গোলের মালিক।  অবশেষে বিশ্বকাপে কাক্সিক্ষত গোলের দেখা পেলেন বার্সিলোনা ফরোয়ার্ড। ম্যাচের শুরু থেকেই দাপট দেখাতে থাকে সৌদি আরব। ৪৩ মিনিটে পেনাল্টি পায় তারা।

কিন্তু পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন সালেম আল দাওসারি। তার নেওয়া শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে  দেন সেজেসনি। তার ফিরিয়ে দেওয়া বল সামনে পান মোহাম্মদ আল-বুরাইক। তিনি শট নেন। দারুণ দক্ষতায় তার নেওয়া শট কর্নারের বিনিময়ে রুখে  দেন পোল্যান্ডের গোলরক্ষক। দ্বিতীয়ার্ধে বল দখলে রাখলেও কাজের কাজটাই করতে পারেনি সৌদি।

সম্পর্কিত বিষয়:

×