ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমিরাতের বিরুদ্ধে সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় ২০টি আজ

চাপের মধ্যে ব্যাটিং উপভোগ করেন আফিফ

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০২:০২, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

চাপের মধ্যে ব্যাটিং উপভোগ করেন আফিফ

আফিফ হোসেন

 ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দুই দলের মধ্যে যোজন পার্থক্য। এলিট ক্লাবের সদস্য বাংলাদেশ এখন প্রতিষ্ঠিত এক শক্তি। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত দলটা মূলত অভিবাসী ভারতীয় ও পাকিস্তানী বংশোদ্ভূতদের নিয়ে গড়া। সিরিজ শুরুর আগে তবু প্রতিপক্ষকে সমীহ করছিলেন নুরুল হাসান সোহান। কারণ টি২০তে নিজেদের সাম্প্রতিক ব্যর্থতা সম্পর্কে সচেতন তিনি। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে পুঁচকে দলটা এভাবে ঘাম ঝরিয়ে ছাড়বে, সেটি হয়তো ভাবেননি। দুবাইয়ে প্রথম দেখায় ৫ উইকেটে ১৫৮ রান করার পর প্রতিপক্ষকে ১৫১-এ গুটিয়ে দিয়ে জয় মাত্র ৭ রানে। এমন পারফর্মেন্সে মোটেই তৃপ্ত হতে পারছেন না সোহান। সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে ছোট্ট ফরমেটে নেতৃত্ব দেয়া এ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান জানিয়েছেন, সিরিজ ফয়সালার দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে আজ আরও ভাল খেলতে মুখিয়ে তার দল। অন্যদিকে প্রথম ম্যাচের লড়াকু পারফর্মেন্সই আমিরাত অধিনায়ক সিপি রিজওয়ানকে ভাল কিছুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
‘পাওয়ার প্লেতে ওরা (আমিরাত) ভাল বোলিং করেছে, আমরা তিন উইকেট হারিয়েছি। শিশির থাকায় আমাদের বোলারদের বল গ্রিপ করতে সমস্যা হচ্ছিল। বুঝতে পারছিলাম যে ১০-১৫ রান কম হয়ে গেছে। কিন্তু শরিফুল ও মিরাজ ডেথ ওভারে খুব ভাল বোলিং করেছে। তার আগে ব্যাট হাতে আফিফ সত্যিই ভাল খেলেছে। স্ট্রাইক রোটেট করেছে, এটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পরের ম্যাচে আমরা ভাল ক্রিকেট খেলে আরও ভালভাবে জিততে চাই।’ বলেন অধিনায়ক সোহান। টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার সঙ্গে পাওয়ার প্লেতে দ্রুত উইকেট হারানো বাংলাদেশের ক্রিকেটের নিয়মিত চিত্র। শক্তিতে পিছিয়ে থাকা আমিরাতের বিপক্ষেও বদলায়নি সেই ছবি। ওপেনিংয়ে মেহেদি হাসান মিরাজ ২ চারে ১২ রান করলেও রানের খাতাই খুলতে পারেননি সাব্বির রহমান। ইনজুরি কাটিয়ে ফেরার পর ওয়ান ডাউনে নামা লিটন কুমার দাস করেন ১৩ রান। ইয়াসির আলি রাব্বি (৪) ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (৩) যখন সাজঘরে ১১তম ওভারে বাংলাদেশের রান তখন ৫ উইকেটে ৭৭। অথচ অন্য প্রান্তে আফিফ হোসেন ধ্রুব ছিলেন দূরন্ত। তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম টি২০ থেকে অবসরে, সাকিব ছাড়া সেই অর্থে সিনিয়র কেউ নেই। বরবারের মতো চাপের মধ্যে সাবলীল আফিফ ৫৫ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় খেলেন অপরাজিত ৭৭ রানের ইনিংস।
অধিনায়ক সোহানকে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে ৫৪ বলে গড়েন অবিচ্ছিন্ন ৮১ রানের জুটি। ‘চাপের মধ্যে ব্যাট করতে আমার ভালই লাগে। ম্যাচের শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করতে চেয়েছি। ভাল লাগছে যে সফল হতে পেরেছি।’ বলেন ম্যাচসেরা আফিফ। ক্যারিয়ারে ৫০টি২০ খেলে ফেললেও খুব বেশি সময় উপরের দিকে ব্যাটিং করার সুযোগ পাননি। বেশিরভাগ সময়ই ব্যাটিং করতে হয়েছে ৬ নম্বরে। অথচ সবচেয়ে বেশি গড় ৪ নম্বরে। ৪৬.৬০ গড়ে রান তোলা আফিফ চারে নেমে ৭ ম্যাচে করেছেন ২৩৩ রান। লম্বা সময় চারে ব্যাটিং করেছেন মুশফিক, ‘কয়েকজন সিনিয়র না থাকলেও বাড়তি কোন চাপ অনুভূব করিনি। আমরা সব সময় নিজেদের সেরা একাদশ নিয়ে খেলি। আশা করি সামনের ম্যাচেও রান পাব।’ ১৫৯ রানের জয়ের লক্ষ্যে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল আমিরাত। ২ বল বাকি থাকতে স্বাগতিকরা অলআউট হয় ১৫১ রানে। চিরাগ সুরি ২৪ বলে ৩৯, আয়ান আফজাল খান ১৭ বলে ২৫ এবং শেষ দিকে কার্তিক মায়াপ্পন ৯ বলে ১২ ও জুনাইদ সিদ্দিক ৯ বলে করেন ১১ রান। বাংলাদেশের হয়ে পেসার শরিফুল ও স্পিনার মিরাজ নেন ৩টি করে উইকেট।
আমিরাত অধিনায়ক সিপি রিজওয়ান বলেন, ‘পারফম্যান্স নিয়ে অনেকটাই খুশি। আমাদের দাপট ছিল। তবে উন্নতির জায়গা সবসময়ই থাকে। ছোট ছোট বিষয় শেষ পর্যন্ত পার্থক্য গড়ে দেয়। আমরা এই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘুরে দাঁড়াব।’ আইসিসির সহযোগী দেশ আরব আমিরাত। বড় দলগুলোর বিপক্ষে তাদের খুব একটা খেলা হয় না। তাই খেলায় উন্নতি জন্য বাংলাদেশের মতো মানসম্পন্ন দলের বিপক্ষে বেশি বেশি ম্যাচ  খেলতে চান রিজওয়ান। তিনি আরও বলেন, ‘ক্যাচ হাতছাড়া করলে ভাল ব্যাটাররা সেই সুযোগ কাজে লাগাবে। তবে আমাদের ছেলেরা ব্যাট হাতে ভাল করেছে। মাঝখানে অনেক উইকেট হারিয়ে ফেলেছি, তবে শুরুটা ভাল ছিল। আমরা যদি বাংলাদেশের মতো মানসম্পন্ন দলের বিপক্ষে বেশি বেশি ম্যাচ খেলি, আমাদের ক্রিকেটের অনেক উন্নতি হবে।’

 

×