ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফাইনালের নায়ক কৃষ্ণা রানী

জিএম মোস্তফা

প্রকাশিত: ০১:০৬, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফাইনালের নায়ক কৃষ্ণা রানী

কৃষ্ণা রানী

অবশেষে স্বপ্নের শিরোপায় চুমো আঁকল বাংলাদেশের মেয়েরা। ফাইনালে নেপালকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরল বাংলার বাঘিনীরা। শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে সোমবার বাংলাদেশ ৩-১ গোলে বিধ্বস্ত করে স্বাগতিক নেপালকে। এই ম্যাচেই যেন ত্রাণকর্তার ভূমিকায় আবির্ভূত হলেন বাংলাদেশের তারকা ফুটবলার কৃষ্ণা রানী সরকার। বাংলাদেশের জয়ে তিন গোলের দুটিই যে এসেছে তার পা থেকে। তার জোড়া গোলের সৌজন্যেই নেপাল বধ করে দেশের ফুটবলের ইতিহাসে রচিত হলো নতুন এক সাফল্যের গল্প।
টাঙ্গাইলের মেয়ে কৃষ্ণা রানী সরকার। অনুর্ধ-১৪ ও ১৬ দল পেরিয়ে এখন আলো ছড়াচ্ছেন জাতীয় দলে। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের নিয়মিত মুখ। নিজের স্কোরিং প্রতিভা দেখিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। জাতীয় দল হোক কিংবা ক্লাব পর্যায়ে, প্রতিপক্ষকে গোল বন্যায় ভাসানোই যেন তার কাজ।

এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও ঠিক তাই। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চার গোল করেছেন বসুন্ধরা কিংসের এই তারকা ফরোয়ার্ড। এবারের আসরে ভারতের বিপক্ষে নিজের প্রথম গোলের দেখা পেয়েছিলেন কৃষ্ণা রানী। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ ৩-০ গোলে হারিয়েছিল ভারতকে। সেইসঙ্গে ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়ের নজিরও গড়েছিল সাবিনা খাতুনের দল।    সিনিয়র পর্যায়ে সেটাই ছিল কৃষ্ণার ক্যারিয়ারসেরা ম্যাচ। অসাধারণ পারফর্মেন্সের সৌজন্যে ম্যান অব দ্য ম্যাচও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। সিনিয়র পর্যায়ে যা তার জীবনের প্রথম। এরপর ভুটানের বিপক্ষে ব্যক্তিগত দ্বিতীয় গোল করেছিলেন টাঙ্গাইলের এই প্রমীলা ফুটবলার।

নেপালে অনুষ্ঠিতব্য এবারের আসরে সর্বোচ্চ গোল বাংলাদেশের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের। দুই হ্যাটট্রিকসহ ৮ গোল করে দলকে ফাইনালে তুলতে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেন এই তারকা ফরোয়ার্ড। যে কারণে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচেও সাবিনার দিকে বাড়তি নজর ছিল ফুটবলভক্তদের। কিন্তু ফাইনালে বাজিমাত করলেন কৃষ্ণা রানী সরকার।
নেপালের ঐতিহ্যবাহী দশরত স্টেডিয়ামে স্বাগতিক সমর্থকদের স্তব্ধ করে ১৪ মিনিটেই প্রথম এগিয়ে যায় বাংলাদেশ শামসুন্নাহারের গোলে। এরপরই শুরু হয় কৃষ্ণার শো। ৪১ মিনিটে গোল ব্যবধান দ্বিগুণ করেন টাঙ্গাইলের এই নারী ফুটবলার। সাবিনার ডিফেন্স চেরা পাস ধরে বক্সে ঢোকেন কৃষ্ণা। দুর্দান্ত হাওয়ায় ভাসানো শটে প্রতিপক্ষের গোলকিপারের মাথার ওপর দিয়ে বল জালে জড়ান তিনি। দ্বিতীয়ার্ধের ৬৯ মিনিটে একটি গোল পরিশোধ করে স্বাগতিক শিবির। এরপর জেগে ওঠে দশরথ স্টেডিয়াম।

কিন্তু সেই উল্লাস বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেননি তারা। শেষের দিকে নেপালের জালে ব্যক্তিগত দ্বিতীয় আর দলের তৃতীয় গোলটিও করেন কৃষ্ণা রানী সরকার। আর তাতেই বড় জয়ে এশিয়ার সেরার মুকুট পরে গোলাম রব্বানী ছোটনের দল। টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার পাথালিয়া গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে ২০০১ সালের ১ জানুয়ারিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কৃষ্ণা। বাবা পেশায় দর্জি বাসুদেব সরকার। গৃহিণী মা নমিতা রানী সরকার। জীবনযুদ্ধে অনেক বাধা সংগ্রাম ছিল তার।

কিন্তু সব বাধা অতিক্রম করেই আলো ছড়িয়েছেন কৃষ্ণা রানী সরকার। ২০১১ সালে খেলা শুরু করেন তিনি। জাতীয় দলে জায়গা করে নেন ২০১৪ সালে। এর পরের গল্পটা শুধুই এগিয়ে চলার। তবে এবার শিরোপা জয়ের ব্যাপারে দারুণ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন এই তারকা ফরোয়ার্ড। শেষ পর্যন্ত ফাইনাল জয়ের নায়কও কৃষ্ণাই।

×