মুশফিকুর রহিম
আসন্ন এশিয়া কাপ টি২০ আসরের জন্য কয়েকদিন আগে ১৭ জনের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সেই দলটিতে সবচেয়ে বড় ঘাটতি ওপেনারের অভাব। নিয়মিত লিটন কুমার দাস কিংবা গত ৩ সিরিজে ওপেনিং করা মুনিম শাহরিয়ার নেই। এরপরও এই ঘোষিত দলে মাত্র দুইজন ওপেনার- এনামুল হক বিজয় ও নবাগত পারভেজ হোসেন ইমন।
এ কারণে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে সাবেক অধিনায়ক ও বাংলাদেশ দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন দাবি করেন বিকল্প ওপেনার হিসেবে সাকিব আল হাসান এবং এমনকি মিডলঅর্ডার স্তম্ভ মুশফিকুর রহিমও আছেন পরিকল্পনায়। বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা শুরু হলেও এই দু’জনের শিক্ষাগুরু ও প্রখ্যাত কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম দাবি করেছেন, ওপেনার হিসেবেই ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয়েছে মুশফিকের এবং প্রয়োজন হলে জাতীয় দলেও ওপেনিং করতে পারবেন।
এশিয়া কাপের মতো বড় আসরে ১৭ জনের দীর্ঘ স্কোয়াড ঘোষণা করেছেন নির্বাচকরা ওপেনার ঘাটতি দিয়ে। এত বড় দলে যে দুইজন ওপেনার হিসেবে বিবেচিত, সেই বিজয় আর ইমনকে নিয়েই কি ভরসা করতে পারবে বাংলাদেশ দল? বিজয় এবার জাতীয় দলে ফেরার পর টি২০ ম্যাচ খেলেছেন যার মধ্যে ওপেনার হিসেবে ৩টি এবং ওয়ানডাউন ব্যাটার হিসেবে ৩টি ম্যাচ খেলেন। কোন ম্যাচেই তার ব্যাট থেকে ভাল ইনিংস পায়নি বাংলাদেশ। যদিও বিজয়ের খেলার মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব দেখা গেছে এবং প্রতি ম্যাচেই বেশ ভালভাবে শুরু করেছেন। তাছাড়া ওয়ানডে সিরিজে দু’টি অর্ধশতাধিক রানের ইনিংস খেলে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। আরেক ওপেনার ২০ বছর বয়সী ইমন মাত্র একটি ম্যাচ খেলেছেন। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে এবার টি২০ সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে অভিষেক হয় এ বাঁহাতি তরুণের এবং ২ রানেই সাজঘরে ফেরেন। অথচ ইমন-বিজয় ব্যতীত আর কোন ওপেনার নেই এবার এশিয়া কাপের দলে।
সেক্ষেত্রে অবশ্য সাকিব, মুশফিক ছাড়াও মেহেদি হাসান মিরাজ, শেখ মেহেদিরা আছেন বিকল্প ওপেনার হিসেবে পরিকল্পনায়। এমনটাই জানান টিম ডিরেক্টর সুজন। এর আগে সাকিব ও শেখ মেহেদি একবার টি২০ ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিং করেছেন। শেখ মেহেদি প্রায়ই ঘরোয়া টি২০ আসরে ওপেনিং কিংবা ওয়ানডাউনে খেলেন মারকুটে স্বভাবের কারণে। মিরাজকেও বিভিন্ন সময়ে ওপেনিং করতে দেখা গেছে ঘরোয়া টি২০ আসরে এবং জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডেতে একবার ওপেনিং করেছেন। সাকিব-মুশফিকেরও জাতীয় দলের হয়ে ওপেনিং করার ঘটনা আছে।
সাকিব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩৮৩ ম্যাচে ৪২৩ ইনিংস ব্যাট করেছেন ৩ ফরমেটে। একবারই ওপেনিং করেন গত টি২০ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ৯ রান করতে পেরেছিলেন এ বাঁহাতি অলরাউন্ডার। ২০০৯ সালে মুশফিক জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ওপেনিং করে ৯৮ রানের ইনিংস খেলেন। এছাড়া আর ওপেনিংয়ে দেখা যায়নি তাকে। ২০০১৯ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি২০ ম্যাচে ওপেনিংয়ে নেমে ৫ রান করেন মুশফিক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪১৮ ম্যাচের ৪৬৩ ইনিংসে ব্যাট করা মুশফিকের ওপেনিং করার ঘটনা এ দুটিই। এ দু’জনকে আসন্ন এশিয়া কাপে বিকল্প ওপেনার হিসেবে পরিকল্পনায় রেখেছে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট।
বিকেএসপিতে ভর্তির সময় মুশফিক ওপেনার ছিলেন এমনটাই মনে করিয়ে দিয়েছেন ফাহিম। বিকেএসপির এই প্রখ্যাত কোচ বুধবার নেটে সাকিব-মুশফিকের ব্যাটিং পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর তিনি সাংবাদিকদের বলেন,‘মুশফিকও হতে পারে। বিকেএসপিতে যখন মুশফিক খেলা শুরু করে তখন কিন্তু সে ওপেনার হিসেবেই খেলেছে।
ব্যক্তিগতভাবে এটা আমি জানি। পরে ক্যারিয়ারের কারণেই সে মিডল অর্ডারে চলে গেছে। অবশ্যই সে মিডল অর্ডারের একজন ব্যাটার। ওপেনিং ব্যাটিং করাটা একটা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। আমি জানি না, নিজেকে ও কতটুকু প্রস্তুত করতে পারবে। ওর অভিজ্ঞতা অবশ্যই কাজে লাগবে। যদি প্রয়োজন হয় মুশফিক করতে পারে, তবে অন্যরাও আছে।’ বিকল্প ওপেনার হিসেবে তাদের ভাবলেও নিয়মিতদের বাদ দেওয়ার পক্ষপাতী নয় ফাহিম।
তিনি মনে করেন এ বিষয়ে আলোচনা করলে ওপেনাররা চাপে থাকবেন। ফাহিম বলেন, ‘আসলেই করবে কিনা আমি জানি না। দুজন স্বীকৃত ওপেনার আছে আমাদের দলে। আমরা যদি আলোচনাটা মুশফিককে নিয়ে করি, তাহলে ওই দুই ওপেনার স্বস্তিতে থাকবে না। ওদের পক্ষে থাকা উচিত। যেন ওরা ভালো করতে পারে। ওরা যদি ভাল করতে পারে, সেটাই সবচেয়ে সেরা হবে। ওদের মধ্যে কেউ যদি ব্যর্থ হয় বা অসুস্থ হয় তখন অন্য ওপেনার নিয়ে ভাববে টিম ম্যানেজমেন্ট। অনেক অপশনই আমাদের হাতে আছে যারা এমনিতে নিচের দিকে খেলে, কিন্তু মাঝেমধ্যে উপরে খেলেছে। সুতরাং অপশন আছে।’