এবাদত হোসেন চৌধুরী
টেস্ট ক্রিকেট দিয়ে বাংলাদেশের জার্সিতে যাত্রা শুরু করেন এবাদত হোসেন চৌধুরী। দারুণ লাইন-লেংন্থে দীর্ঘ সময় ধরে বোলিং করে যাওয়ার ক্ষমতার কারণে তিনি হয়ে ওঠেন টেস্ট স্পেশালিস্ট বোলার। ডানহাতি এই পেসার অবশ্য বেশ কয়েকবার ওয়ানডে দলেও ডাক পেয়েছেন, কিন্তু একাদশে নামা হচ্ছিল না। তবে সদ্য সমাপ্ত জিম্বাবুইয়ে সফরে এ ডানহাতি পেসারের অভিষেক হয়েছে ওয়ানডেতে।
দলের বাকি পেসাররা যখন আলগা বোলিংয়ে স্বাগতিক জিম্বাবুইয়ে ব্যাটারদের কাছে নাজেহাল হয়েছেন, তখন এই ডানহাতি পেসার অভিষেকেই দুর্দান্ত বোলিং করে নজর কাড়েন। ৮ ওভারে মাত্র ৩৮ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করেন একটি মেডেনসহ। তার এই সুশৃঙ্খল বোলিংয়ের পুরস্কার হিসেবে নির্বাচকরা আসন্ন টি২০ এশিয়া কাপের দলে রেখেছেন। প্রথমবার টি২০ ফরমেটের দলে সুযোগ পেয়েছেন তিনি। এবার এই ক্ষুদ্র ফরমেটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও যাত্রা শুরুর অপেক্ষায় আছেন এবাদত। তিনি আশাবাদী টি২০ ক্রিকেটেও অচিরেই ওয়ানডে দলের মতো ছন্দ পাবে বাংলাদেশ।
১৭ টেস্ট খেলার পর অবশেষে রঙ্গিন পোশাকে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছে ২৮ বছর বয়সী এবাদতের। ক্রমেই তিনি অপরিহার্য বোলারে পরিণত হচ্ছেন একটানা দারুণ লাইন-লেংন্থে বল করে যাওয়ার সামর্থ্যরে কারণে। এবার জিম্বাবুইয়ে সফরে বাংলাদেশ দল দুঃসহ সময় কাটিয়েছে। র্যাঙ্কিংয়ে এবং গত কয়েক বছরের পারফর্মেন্সে অনেক দুর্বলতর হয়েও এবার জিম্বাবুইয়ে সফরকারী বাংলাদেশকে নাকানি-চুবানি খাইয়েছে। প্রথমবার টি২০ সিরিজ জিতেছে এবং ৯ বছর পর ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশের বিপক্ষে। টি২০-তে ব্যাটারদের ধীরগতির ব্যাটিংটাকেই মূলত দায়ী করা হয়েছে।
তবে পেসারদের আলগা ও অনিয়ন্ত্রিত বোলিং ছিল দৃষ্টিকটু। পরে ওয়ানডে সিরিজেও বাংলাদেশ দল হেরেছে ২-১ ব্যবধানে। প্রথম দুই ওয়ানডেতে ৩০৩ ও ২৯০ রান করেও জিম্বাবুইয়ের ব্যাটারদের আটকাতে পারেননি বাংলাদেশী বোলাররা। বিশেষ করে পেসারদের বেদম পিটুনি হজম করা ছিল চোখে পড়ার মতো। অথচ সম্মান বাঁচানোর ম্যাচে তৃতীয় ওয়ানডেতে অভিষেক হতেই দুর্দান্ত বোলিং করেছেন বদলি হিসেবে জিম্বাবুইয়ে যাওয়া এবাদত। তাই ২৫৬ রান করেও বাংলাদেশ জয় তুলে নেয় ১০৫ রানে।
এরই পুরস্কার হিসেবে প্রথমবারের মতো টি২০ দলেও সুযোগ পেয়েছেন এবাদত। এশিয়া কাপের মতো বড় আসরে অভিষেকের অপেক্ষায় তিনি। তাকে দলে নেয়ার ব্যাপারে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ইতিবাচক কথাই বলেছেন এবং সে সময় সর্বশেষ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) এবাদতের ভাল বোলিং করার বিষয়টিও তুলে ধরেন। যদিও সর্বশেষ বিপিএলে মাত্র ৫ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন এবাদত। ১৮ ওভারে ওভারপ্রতি ৭.৬১ করে ১৩৭ রান দিয়েছেন এবং ৬ উইকেট শিকার করেছেন। সেদিক থেকে খুব আহামরি কিছু করেছেন এমনও নয়। তবে লাইন-লেংন্থে অনেকটাই যত্নশীল এবাদত। তাই সুযোগটা পেয়েছেন। এখন টি২০ অভিষেকের অপেক্ষা তার।
এবাদত এ বিষয়ে বলেন,‘টেস্টে সারাদিন বল করতে হয়। টি২০ হচ্ছে সংক্ষিপ্ত ফরমেট। বুদ্ধি খাটিয়ে বল করতে হবে।’ স্কিলের সঙ্গে জরুরী বিষয় হচ্ছে বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার। আর সেটি করতে পারলেই টি২০ ক্রিকেটে ভাল বোলিং করা সম্ভব। এবাদত বললেন,‘উইকেট যেহেতু ভাল থাকবে, ব্যাটাররা আগ্রাসী থাকবে। পরিকল্পনামাফিক খেলাই মূল বিষয়। ওখানে আমাদের চেয়ে অনেক ভালো ভাল বোলার আছে। তারা কী করে, তাদের পরিকল্পনা কী দেখব। তবে আমরা আমাদের পরিকল্পনা মতোই কাজ করব।’ টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল টানা পরাজয়ের মধ্যেই বন্দী। সর্বশেষ ১৬ ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র ২টি। কিন্তু এবাদত মনে করেন এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠবে বাংলাদেশ দল। তিনি বলেন,‘আমরা দল হিসেবে ভাল খেলছি না মানে এই না যে আমরা টি২০ খেলতে পারি না।
আমরা অদূর ভবিষ্যতে ভাল দল হয়ে উঠব ইনশাআল্লাহ। টেস্টে পেসাররা নিয়মিত ভালো করছি। এবার ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতে ভাল করার চেষ্টা করব। ভালোর তো শেষ নেই। সবাই সবার জায়গা থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছে।’ আরব আমিরাতে ভিন্নরকম পরিবেশে এবার চ্যালেঞ্জ টি২০ ক্রিকেটের। অত্যধিক গরম থাকবে মরুর দেশটিতে। তবে এসবকে পাত্তা দিচ্ছেন না এবাদত,‘গরম কোনও অজুহাত না। আমাদের দেশেও অনেক গরম। গরমকে আমার কাছে তেমন কিছুই মনে হচ্ছে না। আমরা বোলাররা প্রতিপক্ষকে কম রানে আটকে রাখতে পারলে ব্যাটারদের কাজ সহজ হয়ে যায়।’