বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের
গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়াম- কোন দলের জন্য পয়মন্ত? স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়েও এই ভেন্যুতে সফল বাংলাদেশ দল! এমনকি ঐতিহাসিক এক বিজয়ে এই মাঠকে স্মরণীয় করে রেখেছেন টাইগাররা। ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবার নকআউট পর্বে উঠে পরাক্রমশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকে এই মাঠেই হারিয়ে চমক দেয় বাংলাদেশ। সেখানেই এবার উইন্ডিজের বিপক্ষে টি২০ সিরিজ হার ঠেকানোর লড়াই।
এ মাঠে ৩ ওয়ানডে খেলে দুটিতেই জয়, একটি হার বাংলাদেশের। আর উইন্ডিজ ৩ ফরমেটে ১০ জয়ের বিপরীতে এখানে ১১ বার হেরেছে। কিন্তু এবার নানাবিধ কারণে কোণঠাসা বাংলাদেশ। এর মধ্যে অন্যতম আবহাওয়া ও পরিবেশ। ঐতিহাসিক ভেন্যুতে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদরা দারুণ কিছু করে জয়ে ফিরবেন এমন প্রত্যয় থাকলেও ময়দানী লড়াই বৈরী প্রকৃতির কারণে ভেস্তে যেতে পারে। গত কয়েকদিন বৃষ্টি এবং আজ সারাদিন বৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনায় পরিত্যক্ত হতে পারে ম্যাচটি।
বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ৩০ মিনিটে শুরু হতে যাওয়া এই ম্যাচেও অবশ্য উজ্জীবিত উইন্ডিজ জিততে চায়। কারণ বাংলাদেশ দল এখানে কোন টি২০ খেলেনি আগে। ক্যারিবীয়রা ৬ টি২০ খেলে ২টি করে জয়-পরাজয় দেখলেও বাকি ২ ম্যাচ হয়েছে পরিত্যক্ত।
প্রভিডেন্সে সর্বশেষ ৩টি আন্তর্জাতিক ম্যাচই হয়েছে পরিত্যক্ত। এর মধ্যে ২ টি২০ ও ১টি ওয়ানডে। ডোমিনিকা থেকে ৩ দিন আগেই এখানে এসেছে দুদল। কিন্তু বৃষ্টির দাপটে অনুশীলন ব্যাহত হয়েছে। ডোমিনিকায় ভয়াল সমুদ্রযাত্রায় আতঙ্কিত বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ভুলে গেছেন পরবর্তীতে সেই স্মৃতি। এখন শুধুই মাঠের পারফর্মেন্স ভাল করার চ্যালেঞ্জ।
ডোমিনিকা থেকে নির্বিঘ্নেই বিমানে করে গায়ানা এসেছে বাংলাদেশ দল এবং সাগর সঙ্গমেও গেছেন তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, এনামুল হক বিজয়, মেহেদি হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসানরা। তাছাড়া সেন্ট লুসিয়ায় সফরের শুরুতে এসে সাগরে সার্ফিং থেকে শুরু করে বোটিংও করেছেন। আর সে কারণেই ডোমিনিকাতে দুই টি২০ ম্যাচে আটলান্টিক পাড়ি দেয়ার ভয়াল ঘটনার কোন রেশই খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু এবার যেন বৈরী প্রকৃতি পিছুই ছাড়ছে না বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে।
টেস্ট সিরিজেও কিছুটা বৈরিতা দেখেছে উভয় দল। প্রথম টি২০ ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে। দ্বিতীয় টি২০ অবশ্য পুরোপুরিই হয়েছে। এখন সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচের ওপরেও বৈরী প্রকৃতির খড়গ নেমে আসছে। গায়ানায় কয়েকদিন ধরেই বৃষ্টি। আবহাওয়া পূর্বাভাস বলছে গায়ানার সময় অনুসারে বুধবার গভীর রাত থেকেই তুমুল বৃষ্টি হবে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায়ও আছে ভারি বৃষ্টিপাত এবং সারাদিন থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি বাধার সৃষ্টি করবে খেলায়।
এই প্রকৃতির সঙ্গে লড়াইয়ের মধ্যেই বাংলাদেশের লড়াই সিরিজ হার ঠেকানোর। ওয়ানডে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে একমাত্র জয়ের সেই ভেন্যুতেই এবার কোণঠাসা বাংলাদেশ সিরিজ বাঁচাতে নামবে। অনেক পরীক্ষাতেই উতরে যেতে হবে। টপঅর্ডারদের ব্যাটিংয়ে উন্নতি, অন্যতম দুই পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুলের বোলিংয়ে শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার বিষয়টি রয়েছে।
অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের নিজেকে ফিরে পাওয়ার চ্যালেঞ্জ। তবে ভাল ব্যাপার হচ্ছে আফিফ হোসেন ধ্রুব নিজেকে ফিরে পেয়েছেন টানা ব্যর্থতার পর। সাকিব বেশ ফর্মে আছেন। এখন দলগতভাবে জ্বলে উঠে বিজয় ছিনিয়ে আনাটাই হচ্ছে না। সর্বশেষ ১২ টি২০ ম্যাচে মাত্র ১টি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। সেখান থেকে বেরিয়ে উইন্ডিজের বিপক্ষেও চলতি সিরিজে ভাল করতে পারছে না বাংলাদেশ দল।
অথচ ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে টি২০ ফরমেটে বেশ ভাল খেলে বাংলাদেশ সবসময়। এই সিরিজের আগে ১২ ম্যাচে জয়-পরাজয়ের পরিসংখ্যানে ৭-৫ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল উইন্ডিজ।
তাদের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ৬ বার দ্বিপক্ষীয় সিরিজে টি২০ ক্রিকেটে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৩ বার করে ট্রফি ঘরে তুলেছে উভয় দল। তবে এইবার পিছিয়ে পড়বে একটা দল। ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে ইতোমধ্যেই ভাল অবস্থানে স্বাগতিকরা। রোভম্যান পাওয়েল, ব্র্যান্ডন কিং আর অধিনায়ক নিকোলাস পুরান ফর্মে আছেন। রোভম্যান, ওডিয়ান স্মিথদের বিস্ফোরক ব্যাটিং ঠেকানোই বাংলাদেশী বোলারদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আর সেই চ্যালেঞ্জে বড় পরীক্ষা দিতে হবে পেসারদেরই।
এখন পর্যন্ত ৩৬টি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এর মধ্যে ৯টি সিরিজ জিতেছে, হেরেছে ২০টি। বাকি ৭ সিরিজ হয়েছে ড্র। তবে এর মধ্যে সিরিজে ১ ম্যাচই ছিল ১৩ বার। বাকিগুলো ছিল একাধিক ম্যাচের। ৩ ম্যাচের টি২০ সিরিজ এর আগে বাংলাদেশ খেলেছে ৯টি, জিতেছে ৩টি কিন্তু হেরেছে বাকি ৬টি। এবার আরেকটি হারের শঙ্কা।
ক্যারিবীয়রা নিজেদের মাঠে জেতার জন্যই নামবে। ২০১৮ সালে সর্বশেষবার উইন্ডিজ সফরে এসে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে দেশে ফেরে বাংলাদেশ। এবার সেই সিরিজ হারের প্রতিশোধ নিতে উন্মুখ পুরানের দল।