ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ জুন ২০২৪, ৩ আষাঢ় ১৪৩১

ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনালে রেফারিং নিয়ে ক্ষোভ মোহামেডান কোচ আলফাজের

মোহামেডানকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা

রুমেল খান, ময়মনসিংহ থেকে

প্রকাশিত: ০০:২০, ২৩ মে ২০২৪

মোহামেডানকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা

শেষের জাদুতে মোহামেডানকে হারিয়ে ফেডারেশন কাপের চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের ট্রফি নিয়ে বাঁধভাঙা আনন্দ

রেফারি জসিম আখতার খেলা শেষের বাঁশি বাজাতেই শুরু হয়ে গেল বিশেষ জার্সি পরে উল্লাস। এই উল্লাসের বিশেষ তাৎপর্য আছে। সেটা পরে বলা হবে। গ্যালারিতে হচ্ছে ‘স্মোক ফ্লেয়ার। বিজয়ী দলের খেলোয়াড়রা গ্যালারির দর্শকদের সঙ্গে নিজেদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন। স্টেডিয়ামজুড়ে গগণবিদারী উল্লাস। বুধবারের পড়ন্ত বিকেলে এই ছিল ফেডারেশন কাপের ফাইনাল ম্যাচের পরের দৃশ্য।

ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভুঁইয়া স্টেডিয়ামে অনুুষ্ঠিত তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফাইনালে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে ২-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বসুন্ধরা কিংস। এই আসরে এটা তাদের চতুর্থ শিরোপা। ম্যাচের প্রথমার্ধে কোনো গোল হয়নি। 
চ্যাম্পিয়ন দল কিংসের হাতে ট্রফি তুলে দেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি ইমরুল হাসান। 
এবারের আসরে ম্যান অব দ্য ফাইনাল হন কিংসের মিগুয়েল ফেরেইরা। সেরা গোলরক্ষক কিংসের মেহেদী হাসান শ্রাবণ। সর্বোচ্চ গোলদাতা আবাহনী লিমিটেডের ওয়াশিংটন বান্দ্রাও (৫ গোল)। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হন কিংসের রবসন রবিনহো। ফেয়ার প্লে ট্রফি পায় আবাহনী লিমিটেড।   
প্রখর রোদ। প্রচ- গরম (৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। তারপরও গ্যালারিতে হাজির প্রচুর দর্শক (প্রায় ১৫ হাজার)। তাদের ভুভুজেলা বাজানো ও ড্রামে পেটানোর ছন্দে মুখরিত হয়ে ওঠে স্টেডিয়াম। খেলার শুরুতে দুদলই কিছুটা সতর্ক-ধীরগতির ও কিঞ্চিৎ বলপ্রয়োগ করে খেলার চেষ্টা করে। পরে উভয় দলই সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে খেলার গতি বাড়ায়।

ছাদখোলা ও এসিবিহীন প্রেসবক্সের এক কোনায় চুপচাপ বসে খেলা দেখছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের স্প্যানিশ কোচ জাভিয়ের ক্যাবরেরা। উদ্দেশ্য এই ম্যাচের মাধ্যমে যদি নতুন-প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড়ের সন্ধান পাওয়া যায়। 
শুরুতে কিংসই বেশি আধিপত্য বিস্তার করে খেলে। বেশি আক্রমণ তারাই করে। কিন্তু কিছুতেই মোহামেডানের ডিফেন্স ভাঙতে পারছিল না। তবে ২৭ মিনিটে গোল করার প্রথম সুযোগ পায় তারা। রাকিবের চোরা থ্রু পাস ধরে বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন ডরিয়েলটন গোমেজ।

বিপদ বুঝে ততক্ষণে সামনে এগিয়ে এসেছেন মোহামেডান গোলরক্ষক সুজন হোসেন। ডরিয়েলটন দেরি না করে ডান পায়ের পাতা দিয়ে বল ঠেলে দেন সুজনের দু’পায়ের ফাঁক দিয়ে। কিন্তু সুজন সেই বল ঠিকই আটকে দিয়ে দলকে রক্ষা করেন। 
৪৩ মিনিটে মোহামেডানের আরিফ বা প্রান্তের বক্সে ঢুকে যে উঁচু ক্রসটি করেন তাতে গোলমুখে শট নেন দিয়াবাতে। বল জালে ঢোকার আগ মুহূর্তে কোনোমতে সেই বল প্রতিহত করেন কিংস গোলরক্ষক। ৬৩ মিনিটে অবশেষে কাক্সিক্ষত গোলের সন্ধান পায় মোহামেডান। ডি-বক্সের বাইরে থেকে একক প্রচেষ্টায় ড্রিবলিং করে ‘গ্যাপ’ খুঁজে পান সানডে। বা পায়ের জোরালো প্লেসিং-বুদ্ধিদীপ্ত শটে কিংসের জাল কাঁপান এবং ফেটে পড়েন উল্লাসে (১-০)। কিংস গোলরক্ষক প্রাণপণ ঝাঁপিয়ে পড়েও বলের নাগাল পাননি। 
৮১ মিনিটে কিংসের রবসন প্রায় ৪০ গজ দূর থেকে দূরপাল্লার যে তীব্র উড়ন্ত শটটি নেন, তা মোহামেডানের পোস্টে লেগে ফিরে আসে। সঙ্গে সঙ্গেই প্রতি আক্রমণে যায় মোহামেডান। দিয়াবাতে বল নিয়ে ঢুকে পড়েন কিংসের বক্সে। তবে দুর্বল শট নেয়ায় তার প্রচেষ্ট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

৮৭ মিনিটে সমতায় ফেরে কিংস। বক্সের বাইরে থেকে অসাধারণভাবে বল নিয়ে দ্রুতগতিতে ড্রিবলিং করে বক্সে ঢুকেই বা পায়ের দর্শনীয় শটে মোহামেডানের জাল কাঁপিয়ে কিংসকে উল্লাসের উপলক্ষ এনে দেন মিগুয়েল (১-১)। সংযুক্তি সময়ে মুজাফফারফের কাছ থেকে বল পেয়ে বাঁ প্রান্তে বক্সের ভেতরে সানডের নেয়া আচমকা শট কোনমতে ফেরান কিংস গোলরক্ষক। 
অতিরিক্ত সময়ের ১০৫ মিনিটে রবসন ডি-বক্সের মাথা থেকে আচমকা শট নেন, সুজন ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। মিগুয়েলের কর্নারের বল সুজন ধরতে গেলে ভারসাম্য হারান। বল পান কিংসের বদলি মিডফিল্ডার জাহিদ হোসেন। কালবিলম্ব না করে বল জালে জড়িয়ে দেন তিনি (২-১)। 
কিন্তু এই গোল মানতে পারেনি মোহামেডান। ফাউলের দাবিতে (সহকারী রেফারি ফাউলের জন্য পতাকা উঠিয়েছিলেন, কেননা দিয়াবাতে বক্সে ফেলে দেন কিংসের উজবেক ডিফেন্ডার ববুরবেক) তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়ে তারা। রেফারিকে ঘিরে ধরেন মোহামেডানের কোচ, কর্মকর্তা, খেলোয়াড়রা। মোহামেডান সমর্থকরা গ্যালারি থেকে কিংসের উদ্দেশ্যে পানির বোতল ছুঁড়ে মারে। মোহামেডান খেলতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে অবশ্য প্রায় ১০ মিনিট পর তারা আবারও খেলতে মাঠে নামে। 
বাকি সময়টায় আর কোনো গোল না হলে শেষ পর্যন্ত জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে কিংস। এটা ছিল তাদের মৌসুমের তৃতীয় শিরোপা, যাকে বলে ‘ডমেস্টিক ট্রেবল’। মোহামেডান (১৯৮২) এবং শেখ রাসেলের (২০১২) পর তৃতীয় দল হিসেবে ট্রেবল জিতল ‘দ্য কিংস’ খ্যাত বসুন্ধরা। মোহামেডানের দুর্ভাগ্যÑ এগিয়ে গিয়েও ম্যাচে জিততে পারেনি তারা।

জিতলে শিরোপা ধরে রাখার পাশাপাশি ফেডারেশন কাপে তারা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর মতো সর্বাধিক ১২টি শিরোপার মালিক হতে পারতো। তাছাড়া শিরোপাও অক্ষুণœ রাখতে পারতো। কিন্তু একটি মাইলফলকও অর্জন করতে পারেনি সাদা-কালোরা! কাকতালীয়ভাবে মৌসুমের শুরুতে অনুষ্ঠিত স্বাধীনতা কাপের ফাইনালেও এই কিংসের কাছে একই ব্যবধানে (২-১) হেরেছিল মোহামেডান!

×