ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তৃপ্তি নিয়েই বিদায় নিচ্ছেন ছোটন!

রুমেল খান

প্রকাশিত: ০০:০৮, ২৮ মে ২০২৩

তৃপ্তি নিয়েই বিদায় নিচ্ছেন ছোটন!

গোলাম রব্বানী ছোটন

বাংলাদেশের ফুটবলের গর্ব নারী ফুটবল। সেই নারী ফুটবলের জন্য ২৬ মে তারিখটা নিঃসন্দেহে অপ্রত্যাশিত, বিস্ময়কর এবং বেদনাদায়ক হয়ে থাকবে। কেননা এদিন বাংলাদেশের নারী ফুটবলের সব সাফল্যের রূপকার, বহু জয়ের সারথি, কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন হঠাৎ করেই ঘোষণা দেন জাতীয় নারী দলের হেড কোচ হিসেবে কাজ করবেন না। তার এই ঘোষণায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় দেশের ফুটবলে।  
গত ১৪ বছরে যা হয়নি, শনিবার সেটাই হলো। সাবিনা-মারিয়া-মনিকারা অনুশীলন করলেন। কিন্তু অনুশীলনে ছিলেন না ছোটন। এটা কতটা মিস করেছেন, কতটা আলোড়িত করেছে আপনাকে? জনকণ্ঠকে ছোটন বলেন, ‘না, আমি এটা মিস করিনি। তেমন কোন প্রতিক্রিয়া নেই। বাসায় দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন বলতে গেলে বিশ্রামেই ছিলাম। পরিবারকে সময় দিয়েছি। রিলাক্স মুডে ছিলাম। অবশ্য আপনাদের মিডিয়ার সাংবাদিক ভাইদেরও ইন্টারভিউর জন্য সময় দিতে হয়েছে!’ ছোটন আরও যোগ করেন, ‘বহুদিন পর একটা চাপমুক্ত দিন কাটালাম। বাফুফেতে থাকার সময়ে ভোর থেকেই নানা শিডিউল, ট্রেনিং, জিম, মিটিং, কাউন্সিলিং, প্ল্যানিং... এগুলো করেই রাত হয়ে যেত। প্রচ- পরিশ্রম ও চাপ। 
বাফুফে ইতোমধ্যেই ছোটনকে অনুরোধ করেছে পদত্যাগ না করে কাজ চালিয়ে যেতে। কিন্তু ছোটন বিনয়ের সঙ্গে সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন। এখন যদি বাফুফে ছোটনের বেতন বাড়িয়ে দেয় বা দ্বিগুণ করে দেয়, তাহলে কি ছোটন কামব্যাক করবেন? ‘না।’ দৃঢ়কণ্ঠে জানালেন ৫৩ বছর বয়সী ছোটন, ‘আমার সেরকম কোন ইচ্ছে নেই। সিদ্ধান্ত চূড়ান্তভাবেই নিয়েছি। আগের সিদ্ধান্তেই অটল আছি।’
জাতীয় নারী ফুটবল দলকে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপসহ ৮টি শিরোপা ও ৫টি রানার্সআপ ট্রফি এনে দিয়েছেন ছোটন। গত বছরে নেপালে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলার বাঘিনীরা অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ঈষর্ণীয় উচ্চতায় পৌঁছে যান ছোটন। রূপনা-আঁখি-মাসুরা-নার্গিস-তহরাদের যে অবস্থানে রেখে যাচ্ছেন, তাতে নিজেকে পরিপূর্ণ তৃপ্ত মনে করেন ছোটন, ‘আমি যখন মেয়েদের দল নিয়ে কাজ শুরু করি, তখন থেকেই আপনারা আমার সঙ্গে থেকে আমার কাজ দেখে আসছেন। শুরুতে যে মেয়েরা বলে ঠিকমতো লাথি মারতে পারত না, বল রিসিভ করতে পারত না বেসিক ছিল না ... সেই অবস্থা থেকে আমি শুরু করে আজ সেই দলকে সাফে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছি।

কমলাপুর স্টেডিয়ামে মেয়েদের ফুটবলশৈলী উপভোগ করতে হাজারো দর্শকের ভিড় হয়। তারা মেয়েদের খেলা নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা করে। বিদেশের মাঠে যেমন সর্বশেষ সিঙ্গাপুরে খেলতে গেলে আমাদের মেয়েদের খেলা দেখতে দর্শকরা হুমড়ি খেয়ে মাঠে ঢোকে। টিকেটের অভাবে মাঠের সমান দর্শক স্টেডিয়ামের বাইরে দাাঁড়িয়ে ছিল, স্টেডিয়ামে ঢুকতে পারেনি। অনূর্ধ্ব-১৪ থেকে সিনিয়র দল পর্যন্ত প্রতিটি নারী দলই বিভিন্ন পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এগুলো বিবেচনায় নিলে বলব অবশ্যই আমি তৃপ্ত।’ ক্যাম্প ছাড়ার ঘোষণা শুনে নারী ফুটবলারদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? ছোটন বলেন, ‘আমি ইচ্ছে করেই তাদের কিছু বলিনি। সামনাসামনি বললে হয়তো তারা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়বে, আমিও তাই হবো। এগুলো আমি সবসময়ই এড়িয়ে চলি।

আমি এসব বলা-টলা পছন্দ করি না। তাদের সঙ্গে ছিলাম, তাদের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম। এখন আমি নেই, এখন তারা অন্য কারোর অধীনে খেলবে।’ গত নভেম্বরে বসুন্ধরা কিংস নারী ফুটবল দলের কাছ থেকে হেড কোচ হওয়র প্রস্তাব পেয়েছিলেন ছোটন। এখন কি ওই ক্লাবে যাবেন? ‘যখন প্রস্তাব পেয়েছিলাম, তখন ফেডারেশন আমাকে ছাড়েনি। ফলে কিংস তখন অন্য কোচ নিয়ে নেয়।’
গুঞ্জন রটেছে, ছোটনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পদত্যাগ করতে পারবেন নারী ফুটবল দলের দুই সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমান লিটু এবং মাহমুদা আক্তার অনন্যা। এ প্রসঙ্গে ছোটনের ভাষ্য, ‘তারা দুজনেই প্রাপ্তবয়স্ক। তারা থাকবে নাকি থাকবে না, সেটা তাদের ব্যাপার। এ নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’ শুক্রবার ছোটনের পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ার ঘণ্টা তিনেক আগে জাতীয় দল থেকে আকস্মিক অবসরের ঘোষণা দেন তারকা ফরোয়ার্ড সিরাত জাহান স্বপ্না।

এটাকে নারী ফুটবলের জন্য ‘নেতিবাচক বার্তা’ বলে মনে করেন ছোটন, ‘ফর্মে থাকা খেলোয়াড় যখন ক্যাম্প ছেড়ে চলে যায় এবং অকালে অবসর নিয়ে ফেলে, তখন বিষয়টা অবশ্যই উদ্বেগের। কেন এটা হলো, এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে। ৫-৬ বছর ধরে বাফুফে এত কষ্ট করে একটা ফুটবলারকে গড়ে তোলে, আর সেই ফুটবলার যদি এভাবে চলে যায়, তাহলে সেটা অনেক হতাশার। স্বপ্না ছিল দলের কি-প্লেয়ার। এরকম প্লেয়ার না থাকলে দলের অবস্থা তো আগের মতো হয়ে গেল!’
নিজের পদত্যাগের কথা বাফুফেকে মৌখিকভাবে জানালেও লিখিত পদত্যাগপত্র ছোটন জমা দেবেন ২৯ বা ৩০ মে।

×