ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আনুচিং-সাজেদার বাদ পড়া প্রসঙ্গে কোচ ছোটনের মন্তব্য

‘ফুটবলে আবেগের কোন জায়গা নেই’

রুমেল খান

প্রকাশিত: ০০:৪৩, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩

‘ফুটবলে আবেগের কোন জায়গা নেই’

কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন

মানুষ শুধু সামনের দিকেই এগুতে পারে, নতুন দরজা খুলতে পারে, নতুন আবিষ্কার করতে পারে, কারণ মানুষ কৌতূহলী। আর এই কৌতূহলই তাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা জোগায়। আর সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য মানুষকে নতুন সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নিতে হয়। যদি নতুনকে গ্রহণ করতে না পারে, তবে মানুষ সামনে এগিয়ে যেতে পারবে না বা সাফল্য অর্জন করতে পারবে না। 
বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলে এখন নতুনের পালাবদল চলছে। এটা একটা পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। আসছে নতুন খেলোয়াড়। পুরনোদের কেউ কেউ বাদ পড়েছেন। যারা পুরনো ও অভিজ্ঞ, তাদের টিকে থাকা অনেক চ্যালেঞ্জের। ফর্ম ও ফিটনেস না থাকলে দলে কোনো খেলোয়াড়েরই স্থান পাকা নয়। যারা বাদ পড়েন, তাদের কেউ কেউ আবারও দলে ফেরার চ্যালেঞ্জটা নেন এবং সেটাতে জিতেও যান। তবে যারা জিততে পারেন না, স্বাভাবিকভাবেই তাদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের যবনিকাপাত ঘটে। তবে অনেকেই আছেন, যারা চ্যালেঞ্জটা নেন না; বরং নিজেদের ক্যারিয়ারের যতিচিহ্ন টেনে দেন অভিমানবশত। 
এমনই দুই ফুটবলার হচ্ছেন আনুচিং মগিনি এবং সাজেদা খাতুন। সম্প্রতি জাতীয় দলের ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ে সবরকম ফুটবল থেকেই অবসর নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা (সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে)। এ নিয়ে ফুটবলপ্রেমীরা নিজেদের নানারকম প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন ফেসবুকে, যেগুলোর বেশিরভাগই নেতিবাচক। এগুলোর কয়েকটা হলো : ‘নিশ্চিত এদেরকে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল! যাদের খেলার চেয়ে নিজেদের অস্তিত্ব বড় মনে করেন, তারাই সরে দাঁড়িয়েছেন’, ‘বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলির কলকাঠি নাড়ানোতেই ক্যারিয়ার শেষ হলো আনুচিং-সাজেদার’, ‘ফুটবল ক্যারিয়ার এত আগেই শেষ হয়ে যাবে কেন, এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কাহিনী আছে’, ‘বাফুফের সিস্টেমেরই সমস্যা, নইলে একের পর এক ফুটবলার কেন বিদায় নেবে?’, ‘প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ায় বাফুফে তাদের বিদায় দিয়ে দিয়েছে। এটা দেশের নারী ফুটবলের জন্য এলার্মিং।

এভাবে চললে আগামীতে নারীরা ফুটবলের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে’, ‘সেই সময়টা বেশি দূরে নয়, যখন বাড়ি বাড়ি গিয়েও মেয়েদের আর ফুটবলে আনতে পারবে না বাফুফে’, ‘বাফুফে সিস্টেম চেঞ্জ না করলে এভাবেই শেষ হয়ে যাবে বাংলাদেশের নারী ফুটবল’, ‘বাংলাদেশের খেলাধুলাকে প্রফেশন হিসেবে নেওয়া যে কত কঠিন, সেটি আবার প্রমাণ হলো আনুচিং-সাজেদার অবসরে’ ... ইত্যাদি। 
ডালিয়া, মাইনু সুইনু, জানু, তৃষ্ণা, অ¤্রাচিং, মনিকা চাকমা (সিনিয়র), মিরোনা, মুনমুনসহ অনেকেই জাতীয় দলে দাপটের সঙ্গে খেলেছেন। সময়ের পরিক্রমায় একসময় একে একে সবাই দল থেকে বিদায় নিয়েছেন বা বাদ পড়েছেন।

তাদের জায়গায় চলে এসেছেন কৃষ্ণা, মারিয়া, মনিকা, সানজিদা, তহুরা, শামসুন্নাহার সিনিয়র ও জুনিয়র, আঁখি, মাসুরা, আনাই, নীলা, নার্গিস, শিউলি, মারজিয়া, স্বপ্না, রূপনা, ঋতুপর্ণাসহ অনেকেই। গত কয়েক বছরের মধ্যে এদের মধ্যে আবার নানা কারণে বাদ পড়েছেন মাহমুদা, লিপি, সাদিয়া, রুপা, মৌসুমী প্রমুখ। আর সর্বশেষ বাদ পড়েছেন আনুচিং-সাজেদা। যারা বাদ পড়েছেন, তাদের বেশিরভাগই পরে আর জাতীয় দলে ফিরতে পারেননি বা ফিরলেও আবারও পরে বাদ পড়েছেন (ব্যতিক্রম মারিয়া মান্দা)। 
জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপনে জাতীয় নারী ফুটবল দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, এখন ফেসবুকের যুগ। যা খুশি লেখা যায়। কিন্তু সবাইকে বুঝতে হবে, ফুটবলে আবেগের কোনো স্থান নেই। ফুটবলে পেশাদারিত্ব থাকতে হবে। সবার পারফর্মেন্সের ওপর সর্বক্ষণ মনিটরিং করা হয়। কার কি সমস্যা, সেটা প্রতিনিয়ত সবাইকে জানানো হয়। এখন কেউ যদি দল থেকে বাদ পড়ে অভিযোগ করে, তার কোন্ জায়গায় সমস্যা ছিল, সেটা তাকে না জানিয়ে বাদ দেওয়া হয়েছে, তাহলে তো সেটা সত্যি নয়। আবেগের বশে এভাবে বলাটা ঠিক নয়।’ 
নারী ফুটবল লীগ শেষ। নারীদের কোনো ঘরোয়া টুর্নামেন্টও হয় না। ফলে এখন যারা বাদ পড়েছে, তারা কিভাবে নিজেদের প্রমাণ করে আবারও ফিরে আসবে? সারাবছর অনুশীলনের ভেতরে থাকতে হবে এবং আগামী লীগে নিজেদের প্রমাণ করতে পারলে অবশ্যই তাদের ডাকা হবে। ছোটনের জবাব।
ছোটন আরও যোগ করেন, ফরোয়ার্ড পজিশনে এখন সাবিনা, কৃষ্ণা, স্বপ্না, তহুরা, শামসুন্নাহার জুনিয়ররা পরীক্ষিত।

কিন্তু এক সময় তারাও বয়সের কারণে, ফিটনেস কিংবা ফর্মের কারণে দল থেকে বাদ পড়বে। তখন তাদের জায়গায় কারা খেলবে? এজন্যই সম্প্রতি আকলিমা, সুমাইয়া, রিপাদের দলে ডেকেছি। কারণ লীগে তারা দারুণ খেলেছে। তাদের মধ্যে মেধা-প্রতিভা আছে। তিনজন বিকল্প বা ব্যাকআপ ফরোয়ার্ড থাকায় দলের জন্য এটা প্লাস পয়েন্ট। এটাই প্রমাণ করে নতুনরা উঠে আসছে।
আনুচিং-সাজেদার বাদ পড়ার পেছনে পল স্মলির হাত থাকার বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়েছেন ছোটন, পুরো কোচিং স্টাফ মিলে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা ভুল ধারণা। আবেগবশত এসব লিখলেই তো হবে না। দুজন খেলোয়াড় বাদ পড়েছে, অথচ পুরনো কিছু খেলোয়াড় যে আবার ফিরে এসেছে, সেটা নিয়ে তো কেউ কিছু লেখে না!

×