ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফরাসি সৌরভ, নাকি পোলিশ ঝলক- ফয়সালা আজ

শেষ আটে যাওয়ার লড়াই

রুমেল খান

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ৩ ডিসেম্বর ২০২২

শেষ আটে যাওয়ার লড়াই

তারকা ফরোয়ার্ড রবার্ট লেভানডোস্কি ও কিলিয়ান এমবাপে

একদিকে দুবারের (১৯৯৮ ও ২০১৮) শিরোপাধারী, ৪ নম্বর ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী এবং ‘দ্য ব্লুজ’ খ্যাত ফ্রান্স, অন্যদিকে ‘দ্য ঈগলস্’ খ্যাত, ২৬ নম্বর ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী এবং দুবারের (১৯৭৪ ও ১৯৮২) তৃতীয় স্থান অর্জনকারী পোল্যান্ড। ফরাসি সৌরভ বনাম পোলিশ ঝলক-জয় হবে কোন শক্তির? আজ রবিবার কাতারের দোহায় আল থুমামা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় ভেনিজুয়েলার রেফারি জেসুস ভ্যালেনজুয়েলার বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হবে কাতার এবারের ফিফা বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডের জমজমাট তৃতীয় এই ম্যাচটি।  
ডি-গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ফ্রান্স উঠে এসেছে এবারের দ্বাবিংশতম আসরের নকআউট স্টেজে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে শুভসূচনা করে তারা। দ্বিতীয় ম্যাচেও জয়ের ধারা অব্যাহত রাখে ডেনমার্ককে ২-১ গোলে হারিয়ে। এই দুই জয়ে চলমান আসরে সবার আগে তারাই দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নেয়। তবে তৃতীয় ও নিয়মরক্ষার শেষ গ্রুপ ম্যাচে অবশ্য হোঁচট খায়, ০-১ গোলে হারে তিউনিসিয়ার কাছে।

তারপরও ৩ ম্যাচে ২ জয় ও ১ হারে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন তারাই হয়। সি-গ্রুপের রানার্সআপ হিসেবে পোল্যান্ড শেষ ১৬ তে খেলার জন্য কোয়ালিফাই করে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে মেক্সিকোর সঙ্গে তারা গোলশূন্য ড্র করে। দ্বিতীয় ম্যাচে সৌদি আরবকে হারায় ২-০ গোলে। তৃতীয় ম্যাচে আর্জেন্টিনার কাছে ০-২ গোলে হেরে যায়। ৩ ম্যাচে তারা সংগ্রহ করে ৪ পয়েন্ট। ওদিকে সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট হয় মেক্সিকোরও।

নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে তারা সৌদি আরবকে ২-১ গোলে হারায়ও বটে। কিন্তু গোল ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে পোল্যান্ডের চেয়ে (পোল্যান্ড ০, মেক্সিকো -১)। তাই কপাল পোড়ে মেক্সিকানদের, আর ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় পোলিশদের। গোলগড়ে এগিয়ে থেকে গ্রুপ রানার্সআপ হয় তারা এবং চলে যায় রাইন্ড অব সিক্সটিনে।
এবার আসা যাক ফ্রান্স বনাম পোল্যান্ডের মুখোমুখি লড়াইয়ের পরিসংখ্যানে। দুদল এর আগে সব আসর (১৯৩৯-২০১১) মিলিয়ে এ পর্যন্ত মুখোমুখি হয়েছে ১৬ ম্যাচে। জয়ের পাল্লা ভারি ফরাসিদেরই, তারা জিতেছে ৮ ম্যাচে। পক্ষান্তরে পোলিশদের জয় ৩ ম্যাচে। বাকি ৫ ম্যাচ ড্র হয়। দুদলের মধ্যে সর্বশেষ সাক্ষাৎ হয় ২০১১ সালের ৯ জুন। সে ম্যাচে ফ্রান্স জিতেছিল ১-০ গোলে।

তবে বিস্ময়করভাবে সার্বিক পরিসংখ্যানে এগিয়ে থাকলেও বিশ্বকাপের পরিসংখ্যানে আবার এগিয়ে আছে পোল্যান্ডই! বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় এই আসরে দুদল একবারই পরস্পরকে মোকাবিলা করেছে। সেটা ১০ জুলাই, ১৯৮২ সালে স্পেনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী সেই ম্যাচে আগে গোল করেও হেরেছিল ফ্রান্স। তাদের ৩-২ গোলে হারিয়েছিল পোল্যান্ড। তার মানে দীর্ঘ ৪০ বছর পর বিশ্বকাপের মঞ্চে আবারও মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ইউরোপের এই দুই দেশ।
আজকের ম্যাচে ফ্রান্স যদি জিততে পারে, তাহলে তারা ৪০ বছর আগের সেই হারের প্রতিশোধটাও নিতে পারবে কড়ায়-গ-ায়। আর সেই লক্ষ্যে তারাই আজ বেশি ফেভারিট ফুটবলবোদ্ধাদের দৃষ্টিতে। তবে পোল্যান্ডকে অবমূল্যায়ন করা উচিত নয় বলে নিজ শিষ্যদের সতর্ক করেছেন ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশম। ১৯৮৬ সালের পর থেকে ফ্রান্স শেষ-১৬-এর পাঁচটি ম্যাচ জিতেছে।

পক্ষান্তরে ১৯৮৬ সালের পর পোল্যান্ড যে আরও তিনবার (২০০২, ২০০৬, ২০১৮)  মূলপর্ব খেলেছে, তাতে কোনোবারই দ্বিতীয় পর্বে যেতে পারেনি তারা। সর্বশেষ তারা দ্বিতীয় রাউন্ড পর্যন্ত খেলেছে ১৯৮৬ আসরে। আজকের ম্যাচে যদি তারা জিততে পারে, তাহলে দীর্ঘ ৩৬ বছর পর আবারও দ্বিতীয় রাউন্ডের গ-ি পেরুনোর উল্লাসে মাততে পারবে।  
ফ্রান্স পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাদের গত সাতটি ম্যাচেই অপরাজিত, তবে এ নিয়ে কোচ দেশম কোন আত্মতৃষ্টিতে ভুগতে চান না, ‘এটি এমন একটি দল (পোল্যান্ড) নয় যার সঙ্গে আমর মোকাবিলা করতে অভ্যস্ত। তাদের অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে। স্পষ্টতই, যদি আলাদা করে একটি নাম থাকে, তবে তা হলো রবার্ট লেভানন্ডোস্কি, তিনি সর্বশেষ ফিফা বিশ্বসেরা হয়েছেন।

বিশ্বের সেরা স্ট্রাইকারদের একজন। তবে এটি কেবল তিনি নন, এটি এমন একটি দল যার ভালো সাংগঠনিক দক্ষতা, একটি ভালো এ্যাথলেটিক উপস্থিতি রয়েছে। আমাদের এখানে তিনজন পর্যবেক্ষক রয়েছেন যারা তাদের নিবিড়ভাবে অনুসরণ করছেন, আমাদের কাছে সমস্ত বিবরণ থাকবে। এই দলটিকে অবমূল্যায়ন করবেন না।’ দেশম ফ্রান্সের শেষ গ্রুপ ম্যাচে দলের একাদশে অনেকগুলো পরিবর্তনগুলো আনেন।

এর খেসারতও তিনি দেন আশ্চর্যজনকভাবে তিউনিসিয়ার কাছে ১-০ গোলে হেরে। কিলিয়ন এমবাপে, অলিভিয়ের জিরুদ, হুগো লরিস, উসমান ডেম্বেলে এবং আন্তোনিও গ্রিজম্যান... এসব তারকাকে দেশম তখনই মাঠে নামান, যখন তার দল গোল হজম করে ফেলেছে। কিন্তু তাদের একযোগে মাঠে নামিয়েও দলের হার রো করতে ব্যর্থ হন! তবে আজ যে তিনি একই ভুল করবেন না, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। 

চলমান বিশ্বকাপে যে ৫ ফুটবলার ৩ গোল করে যৌথভাবে শীর্ষ গোলদাতার কাতারে আছেন, তাদের একজন ফ্রান্সের এমবাপে। পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে গোল করতে হলে তাকে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে আজ। একই কথা প্রযোজ্য জিরুদের বেলাতেও, যিনি এককভাবে তার দেশের সর্বকালের শীর্ষ গোলদাতা হওয়ার অপেক্ষায় (৫১ গোল, অংশীদার থিয়েরি অঁরি)। ফ্রান্স দলের আজকের তুর পের তাস হতে পারেন আরেক ফরোয়াড গ্রিজম্যান।

এই টুর্নামেন্টে ফ্রান্স যে ১১টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছে, তার বেশিরভাগই করেছেন এই গ্রিজম্যান। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ এই ফরোয়ার্ডই একমাত্র খেলোয়াড়, যিনি ফ্রান্সের এই বিশ্বকাপ এবং ২০১৮ বিশ্বকাপে অন্তত ১০টি সুযোগ তৈরি করেছেন।
আর পোল্যান্ড দলের ভরসা আজ হতে পারেন গোলরক্ষক ওজিনে সিজিসনি। কাতারে পোল্যান্ডের হয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন তিনি। ৯০ শতাংশ সেভ করেছেন। আর্জেন্টিনার ম্যাক অ্যালিস্টারের কাছে গোল হজমের আগ পর্যন্ত তিনি ১৬টি শট সেভ করেছিলেন। তিনি লিওনেল মেসির পেনাল্টি শট রুখে দেন।

এর আগের বিশ্বকাপেও একটি পেনাল্টি সেভ করেছিলেন। আজকের ম্যাচ যদি টাইব্রেকারে গড়ায়, তাহলে দলের জয়ের জন্য তার দিকেই পোল্যান্ড বেশি নির্ভর করবে সন্দেহাতীতভাবে। রবার্ট লেভানডোস্কিই হচ্ছেন গোলিশ টিমে আশা-ভরসা। তিনি গোল না পেলে পোল্যান্ডকে অনেক ভুগতে হবে।

সম্পর্কিত বিষয়:

×