
বাফুফে ও সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন
নারী ফুটবলে সাউথ এশিয়ান (সাফ) শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট এখন বাংলাদেশের। বুধবার দুপুরে বিমানবন্দর থেকে ছাদখোলা দ্বিতল বাসে সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকার, মারিয়া মান্দা, রুপনা চাকমারা যখন বীরাঙ্গনার মর্যাদায় মতিঝিলের পথে, বিএফএফ প্রেসিডেন্ট কাজী সালাউদ্দিন তখন ফেডারেশন ভবনে। সুদর্শন সাবেক তারকা ফুটবলারের চোখেমুখে আনন্দ। চারিদিকে বয়ে যাওয়া উৎসবের আমেজের মধ্যেই স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে জানিয়েছেন, ফুলেল শুভেচ্ছার সঙ্গে এখন অর্থ, পুরস্কার, সবাই আসবে কিন্তু সে সবের অতিশয্যে ভেসে না গিয়ে সামনে তাকানোর এখনই সময়।
দীর্ঘদিন বিএফএফের শীর্ষ পদে থাকা আলোচিত এ ফেডারেশন কর্তা স্মরণ করিয়ে দেন, সাফল্য অর্জনের চেয়ে সেটি ধরে রাখা কঠিন। সাধারণ ভক্ত থেকে শুরু করে, সাংবাদিক, স্পন্সরসহ সকলের সমর্থন চেয়েছেন তিনি। সাউথ এশিয়ার গ-ি পেরিয়ে দৃষ্টি এখন আসিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের দিকে, ‘এতদিনের অক্লান্ত পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। আমাদের টার্গেট আরও অনেক দূর। সেভাবে আমরা টিমকে গড়ে তুলব।’
ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ক্রিকেটে এখন টাকার ছড়াছড়ি। একাডেমি, বিশ্বমানের কোচিং স্টাফ, কোটি কোটি টাকার স্পন্সরসহ সেখানে যে সুযোগ-সুবিধা পান, ফুটবলে সেটি কতটা দুরস্ত সেটিও ফুটে ওঠে ফেডারেশন প্রধানের কণ্ঠে ‘আমরা যেভাবে স্পোর্টস করি, প্রফেশনাল ওয়ার্ল্ডে এভাবে হয় না। কারণ সর্বোচ্চ লেবেলে তাল মেলাতে হলে আপনার টাকা দরকার, দরকার টেকনিক্যাল সাপোর্ট, কিছু কিছু পাচ্ছি বলে এতটুকু হয়েছে। কিন্তু স্পন্সর এবং সরকারের ক্রীড়াবিভাগের সঙ্গে আমার যে ধরনের কথাবার্তা হয়েছে, সব ঠিকঠাকমতো এগোলে আশা করি ভবিষ্যতে আপনাদের আরও ভাল কিছু উপহার দিতে পারব।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আপানাদের কাছে আমার চাওয়া, আমাকে সমর্থন দিন। এখানে ব্যক্তিগতভাবে আমার পাওয়ার কিছু নেই।
মেয়েদের এই সাফল্যের পর আমাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। সময় হয়েছে দেশের জন্য কিছু করার। সাফের ট্রফি উপহার দিয়ে মেয়েরা আজ দেশবাসীকে বড় উৎসবের উপলক্ষ এনে দিয়েছে। আর তার পেছনে থেকে আমরা যে কাজ করতে পেরেছি, এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে আনন্দ পেয়েছিলাম, আজ আমার কাছে তেমন অনুভূতি হচ্ছে।’
মেয়েদের উদ্দেশে আগাম বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমেই আমি ওদের বলব, পুরস্কার, অভিনন্দন যা পেয়েছ, তা এখানেই ভুলে যাও। তোমাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। এতদিন যে পরিশ্রম করেছ, আগামীকাল থেকে তার দ্বিগুণ করতে হবে। যদি তুমি এখানে থাকতে চাও। শিখরে ওঠার পর সেটা ধরে রাখা মোটেই সহজ নয়। বিশ্ব ফুটবলের দিকে তাকালেই সেটি বোঝা যায়। বিশ্বের অনেক ফুটবলার আছে যারা দীর্ঘদিন তাদের অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে। এজন্য প্রতিদিনই নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে হয়। এই মেয়েরা যে শীর্ষে উঠেছে, সবার আগে সেই শীর্ষ স্থানটা ধরে রাখতে হবে। তা না হলে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা কোন কাজে আসবে না।
আমরা পেছন থেকে কাজ করব, কিন্তু তোমাদেরই আরও বেশি পরিশ্রম করে এগিয়ে যেতে হবে। এখন আমাদের সামনে তাকাতে হবে। আমার লক্ষ্য এবার আসিয়ানের দিকে।’ নারী জাতীয় দলের কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটনের প্রশংসা করে সালাউদ্দীন জানিয়েছেন, কোচিং স্টাফে আরও যত প্রয়োজনীয়তা আছে, সেসব পূরণ করা হবে, ‘গ্যাপগুলো আগামীতে পূরণ করার চেষ্টা করব। ছোটনকে অনেক দিন টিমে রাখা হয়েছে। তিনি আজ সফল হয়েছেন। এখান থেকে কাউকেই বাদ দেয়া হবে না। শুধু গ্যাপ থাকা জায়গাগুলোতে আরও সংযোগ করার ইচ্ছা আছে।’
সালাউদ্দীন শুধু বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনেরই প্রধান নন, সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনেরও (সাফ) চেয়ারম্যান। দশরথ স্টেডিয়ামে আয়োজক নেপালের বিপক্ষে ফাইনালে তার অনুপস্থিতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। আগের দিনই এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি কাঠমান্ডু গেলে ভালও হতে পারত, খারাপও হতে পারত। আমি গেলে হয়ত মেয়েরা চাপে পড়ে যেত। যদি ওদের ওপর এক্সট্রা প্রেসার হয়ে যায়, সেজন্য যাইনি। তবে ওদের সব খেলা দেখেছি।’ সেদিন তিনি আরও বলেন, ‘ওরা চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে। যখনই আমাদের ভাল ফল হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের চাইতে হয় না, যেতে হয় না। তিনি নিজে পরিকল্পনা করে আমাদের নির্দেশনা দিয়ে দেন। অলরেডি তিনি জানেন যে বাংলাদেশ এটা করেছে (সাফ চ্যাম্পিয়ন)। আমি আশা করছি, ওখান থেকে ভাল সংবর্ধনা ও উপহার আসবে।’