
লিওনেল মেসি
বর্তমান বিশ্ব ফুটবলের সেরাদের একজন লিওনেল মেসি। আর সেই মেসিকে ছাড়াই ফুটবল দুনিয়ার অন্যতম মর্যাদার ব্যক্তিগত পুরস্কার ব্যালন ডি’অরের ৩০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ। ২০০৫ সালের পর এই প্রথম এলএম টেনকে ছাড়াই ঘোষণা করা হয়েছে সংক্ষিপ্ত তালিকা। রেকর্ড সাতবার ব্যালন ডি’অরের খেতাব জেতা লিওনেল মেসির সঙ্গে তার পিএসজি সতীর্থ নেইমারকেও রাখা হয়নি এই তালিকায়। তবে মেসি-নেইমার না থাকলেও রয়েছেন তাদের চিরপ্রতিন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। রেকর্ড ১৭তম বারের মতো ব্যালন ডি’অরের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই পর্তুগীজ সুপারস্টার।
দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে যেখানে লিওনেল মেসির দাপট। সেখানে এবার কেন নেই প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর এই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার? সেজন্য তালিকা প্রকাশের পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে মেসি-ভক্তরা তাদের বিস্ময় এবং ক্ষোভের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। রোনাল্ডো থাকলে কোন্ যুক্তিতে মেসি নেই সেই প্রশ্নও তুলেছেন তারা। এরপর মেসিকে না রাখা সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়েছে ব্যালন ডি’অর পুরস্কারের আয়োজক ফ্রান্স ফুটবল।
ব্যালন ডি’অর বিজয়ী নির্বাচনের নিয়মে এবার পরিবর্তন করা হয়েছে। আগে পুরো বছরের পারফর্মেন্স বিবেচনা করা হলেও এখন থেকে ইউরোপিয়ান ফুটবলের পুরো এক মৌসুমের সময়কে (আগস্ট-জুলাই) বিবেচনা করা হচ্ছে।
সাময়িকীর সাংবাদিক এমানুয়েল বোয়ান বলেন, ‘৩০ জনের এ তালিকা প্রস্তুতের সময় মেসি আলোচনায়ও ছিলেন। কিন্তু ব্যালন ডি’অরের জন্য নতুন যে মানদ- ঠিক করা হয়েছে, তা মেসির পক্ষে ছিল না। এক্ষেত্রে খেলোয়াড়ের পুরো ক্যারিয়ার বিবেচনার বিষয়টি উঠে গেছে, নতুন মডেলে পুরো বছরও নয়, একটা মৌসুম বিবেচনা করা হয়েছে, যে কারণে ২০২১ সালের ১১ জুলাই কোপা আমেরিকা জয় বিবেচনায় আসেনি।’ তাতেই কপাল পুড়েছে সাবেক বার্সিলোনার এই তারকা ফরোয়ার্ডের।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, সেরা খেলোয়াড় বিচারের জন্য সবার আগে ব্যক্তিগত পারফর্মেন্স দেখা হবে। তারপর বিবেচনা করা হবে দলগত অর্জন। যে কারণেই মেসি লীগ ওয়ানের শিরোপ জিতলেও তা এখানে কোন ভূমিকা পালন করেনি।’ পিএসজির হয়ে গত মৌসুমে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩৪ ম্যাচে মাত্র ১১ গোল করেন লিওনেল মেসি। যা, তার নামের পাশে একেবারেই বেমানান ছিল। একই কারণে বাদ পড়েছেন নেইমারও। পুরো মৌসুমে পিএসজির হয়ে ২৮ ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করে মাত্র ১৩ গোলের দেখা পান তিনি।
মেসি বাদ পড়লেও রেকর্ড ১৭ বারের মতো ব্যালন ডি’অরের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। তার চেয়ে এই তালিকায় মনোনয়ন পাওয়ার ইতিহাস নেই আর কারও। এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন সিআর সেভেনের সাবেক সতীর্থ করিম বেনজেমাও। সেইসঙ্গে ফেবারিটের ট্যাগটাও গায়ে মাখানো তার। কেননা, ২০২১-২২ মৌসুমটা স্বপ্নের মতোই কেটেছে রিয়াল মাদ্রিদের এই ফরাসী তারকার।
যে কারণেই এগিয়ে রয়েছেন তিনি। রিয়াল মাদ্রিদকে তাদের ইতিহাসে ১৪তম চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা জেতাতে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন করিম বেনজেমা। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ১৫ গোল করেছেন এই ফরাসী তারকা। গত মৌসুমে স্প্যানিশ লা লিগার চ্যাম্পিয়ন রিয়ালের হয়ে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৪৬ ম্যাচে ৪৪ গোল করেন তিনি। তাই এবার এই পুরস্কার জয়ের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন ফরাসী স্ট্রাইকার। ব্যালন ডি’অর জিতলে বেনজেমা হবেন এই পুরস্কার জয়ী ফ্রান্সের পঞ্চম ফুটবলার।
তার আগে ফরাসী খেলোয়াড় হিসেবে এই পুরস্কার জিতেছেন রেমন্ড কোপা (১৯৫৮), মিশেল প্লাতিনি (১৯৮৩, ১৯৮৪ ও ১৯৮৫), জিন-পিয়েরে পাপিন (১৯৯১) এবং জিনেদিন জিদান (১৯৯৮)। আগামী ১৭ অক্টোবর ফরাসী ফুটবল ম্যাগাজিনের এই মর্যাদার পুরস্কারের বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে। তার আগে মেসি-নেইমার ছাড়া সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা করে নেয়া সকল তারকারাই দারুণ রোমাঞ্চিত।
ব্যালন ডি’অরের সংক্ষিপ্ত তালিকা ॥ থিবাউ কুর্তোয়া, রাফায়েল লিও, ক্রিস্টোফার এনকুকু, মোহাম্মদ সালাহ, জশুয়া কিমিচ, ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আর্নল্ড, ভিনিসিয়াস জুনিয়র, বার্নার্ন্ডো সিলভা, লুইস দিয়াস, রবার্ট লেভানডোস্কি, রিয়াদ মাহারেজ, ক্যাসেমিরো, সন হিউং মিন, ফ্যাবিনহো, করিম বেনজেমা, মাইক মাইগনান, হ্যারি কেন, ডারউইন নুনেজ, ফিল ফোডেন, সাদিও মানে, সেবাস্তিয়ান হলার, লুকা মড্রিচ, ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো, এন্টিনিও রুডিগার, কেভিন ডি ব্রুইন, দুসান ভ্লাহোভিচ, ভার্জিল ভ্যান ডাইক, হুয়াও ক্যান্সেলো, কিলিয়ান এমবাপে এবং আর্লিং হালান্ড।