নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচ সামনে রেখে মিরপুর স্টেডিয়ামে সতীর্থদের সঙ্গে অনুশীলনে মুমিনুল হক
পয়মন্ত মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দারুণ এক অর্জনের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সফরকারী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আজ এখানেই শুরু হচ্ছে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।
প্রথম ম্যাচ জিতে নিশ্চিতভাবেই সিরিজে এখন সুবিধাজনক অবস্থানে বাংলাদেশ। এই টেস্ট না হারলে প্রথমবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের গৌরব অর্জন করবে টাইগাররা। সেজন্য এবার পরাজয় এড়ালেই যথেষ্ট হবে। এর আগে বাংলাদেশ সিরিজ জিতেছে শুধু জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। তবে আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১টি করে টেস্ট খেলে জিতেছে। মিরপুরে সাধারণত টেস্টে ফলাফল হয়ে থাকে। কারণ এর আগে এই ভেন্যুতে হওয়া ২৬ টেস্টের ২৩টিতেই ফল হয়েছে, ৩টি মাত্র ড্র হয়েছে।
উইকেটের চরিত্র রহস্যময় এবং স্পিন সহায়ক হওয়াতে এই ভেন্যুতে ড্র করাই কঠিন। এবার নিউজিল্যান্ডকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে বাংলাদেশ প্রথম টেস্টে ১৫০ রানের জয় পেয়ে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপন ঘোষণা দিয়েছেন, সিরিজ জিততে পারলে ক্রিকেটাররা বিশেষ বোনাস পাবেন। নিশ্চিতভাবেই সেটি ক্রিকেটারদের আরও উজ্জীবিত করবে। ম্যাচটি সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে আজ। মিরপুরে ৫ দিন পর্যন্ত টেস্ট গড়ানো খুব কঠিন। সেই ম্যাচগুলোই টেস্টের পঞ্চম দিন পর্যন্ত এগিয়ে যায় যেখানে ব্যাটাররা দুর্দান্ত কিছু করতে পারেন। কিন্তু মিরপুরের উইকেটের যেমন চরিত্র, সেখানে দুর্দান্ত ব্যাটিং পারফর্ম্যান্স দেখানোই কঠিন।
প্রধান কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহের পরিকল্পনায় এই ভেন্যুতেই ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো ক্রিকেট পরাশক্তিদের প্রথমবার টেস্টে হারিয়েছে বাংলাদেশ দল। অবিস্মরণীয় সেই দুটি কীর্তি গড়ার কারিগর হাতুরু এবার দ্বিতীয় মেয়াদে কোচ হয়ে আসার পর এই প্রথম মিরপুরে আবার টেস্ট খেলতে নামবেন তার শিষ্যদের নিয়ে। তার বেশ ভালোভাবেই জানা আছে মিরপুরে কিভাবে প্রস্তুত হলে, কেমন উইকেট থাকলে শক্তিশালী প্রতিপক্ষকেও নতি স্বীকারে বাধ্য করা যাবে।
সেভাবেই তিনি পরিকল্পনা করেছেন নিঃসন্দেহে। নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য অনুসারে হোমসিরিজ খেলার একটা সুবিধা আছেই। সেই সুবিধাটা পুরোপুরি প্রয়োগ না করলেও সিলেট টেস্টে অবিস্মরণীয় এক জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করেছে বাংলাদেশ।
শক্তিশালী নিউজিল্যান্ডকে ১৫০ রানের বড় ব্যবধানে বিধ্বস্ত করে এগিয়ে গেছে ১-০ ব্যবধানে। এখন পর্যন্ত ১৯ টেস্টে জিতেছে বাংলাদেশ, ঘরের মাটিতে জয় ১৩টি। এর মধ্যে মিরপুরেই জিতেছে সর্বাধিক ৮ টেস্ট। দেশে খেলা ৭৪ টেস্টের মধ্যে ২৬টিই মিরপুরে খেলে এই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে ২৩ টেস্ট খেলে জিতেছে মাত্র দুটি। তাই নিশ্চিতভাবেই পয়মন্ত একটি ভেন্যু মিরপুর। এবার সেখানেই কিউইদের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। ঘরের মাটিতে কিউইদের বিপক্ষে আগে কখনো টেস্ট জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তবে ২০১৩ সালে সর্বশেষবার যখন বাংলাদেশ সফরে দুই টেস্ট খেলেছে তারা জিততে পারেনি কোনো ম্যাচ। ১০ বছর পর বাংলাদেশে এসে টেস্ট খেলে প্রথমবার হেরেছে তারা। সেটিও আবার সিরিজের প্রথম ম্যাচে।
সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো নিশ্চিতভাবেই অনেক দুরুহ ব্যাপার হবে সফরকারীদের জন্য। বাংলাদেশের মাটিতে স্পিন হুমকি নিয়ে খেলতে হবে সেই প্রস্তুতি তারা ভালোভাবেই নিয়ে নেমেছে। কিন্তু তারপরও স্পিনেই সর্বনাশ ঘটেছে। কিন্তু সিলেটে তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসানরা যেভাবে বোলিং করেছেন সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েছে কিউইরা। সেটাই এবার প্রয়োগ করার প্রত্যয় তাদের মিরপুরে।
আইসিসির বিশ^ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় চক্রে এই সিরিজ দিয়ে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড। কিন্তু প্রথমবারের বিশ^ টেস্ট চ্যাম্পিয়ন কিউইরা হার দিয়ে শুরু করে এবার ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া। সেজন্য তাদের একাদশে কিছু পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। রাচিন রবীন্দ্র ফিরতে পারেন স্কোয়াডে, তবে সেক্ষেত্রে কে বাদ পড়বেন তা নিশ্চিত নয়। আর বাংলাদেশ বিজয়ী সমন্বয় নিয়েই নামতে চাইবে। কিন্তু ম্যাচের আগের দিন অনুশীলনে ডান হাতে তর্জনিতে আঘাত পাওয়া ডানহাতি অফস্পিনার নাঈম হয়তো নাও খেলতে পারেন। সেক্ষেত্রে বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদ অভিষেক ক্যাপ পেতে পারেন। এ ম্যাচেও ৩ স্পিনার ও ১ পেসার নিয়েই হয়তো খেলবে বাংলাদেশ।
আবার একজন ব্যাটার কমিয়ে আরেকজন বোলার বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে এক পেসারই থাকার সম্ভাবনা প্রবল এবং হয়তো শাহাদাত হোসেন দিপুই সেক্ষেত্রে একাদশের বাইরে চলে যাবেন। তবে একাদশ যেমনই হোক বাংলাদেশের লক্ষ্য সিরিজ জয়। সেজন্য ব্যাটে-বলে সিলেটের পারফর্ম্যান্সটার পুনরাবৃত্তিতে নজর সবার।