ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

চলতি মাস থেকে ২ বছরের চুক্তি

আবারও প্রধান কোচ হাতুরু

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০০:২৮, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আবারও প্রধান কোচ হাতুরু

টাইগারদের হেড কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে

অবশেষে গুঞ্জনটাই সত্য হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পেয়েছেন চান্দিকা হাতুরুসিংহে। সোমবার বিকেলে সিলেটে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপন ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তার কোচ হওয়ার বিষয়ে। নিশ্চিত করে কিছু না বললেও জানিয়েছিলেন যাদের সঙ্গে বিসিবির কথা চলছে তার মধ্যে শুধু হাতুরুসিংহেই পূর্ণ সময়ের জন্য কোচ হতে রাজি।

অবশেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিসিবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হাতুরুসিংহের বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ৫৪ বছর বয়সী হাতুরুসিংহেও আবার বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন এবং আরও সাফল্য এনে দেওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন। চলতি মাস থেকেই ২ বছরের জন্য তার সঙ্গে চুক্তি করেছে বিসিবি। এর আগে ২০১৪ সালের মে থেকে ২০১৭ সালের নবেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধান কোচ ছিলেন হাতুরুসিংহে। গত ডিসেম্বরে রাসেল ডোমিঙ্গো বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর পর আবার এ শ্রীলঙ্কানকে নিয়োগ করল বিসিবি। ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের দায়িত্বে প্রত্যাবর্তন করবেন হাতুরুসিংহে।
গত ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে ঘরোয়া সিরিজ শেষ হওয়ার পরই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান ডোমিঙ্গো। এরপর বিসিবি জানায় ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নতুন কোচ নিয়োগে তোড়জোর চলছে। তখন গুঞ্জন ওঠে আবার সাবেক কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহেকেই আনছে বিসিবি। কারণ তার সঙ্গে বেশ জোরেশোরেই আলোচনা চলছিল এবং সংক্ষিপ্ত তালিকাতেও আছেন তিনি।

যদিও মাঝে নিউ সাউথ ওয়েলস ব্লুজ ও বিগ ব্যাশ টি২০ লিগের দল সিডনি থান্ডারের সহকারী কোচ হিসেবে সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে নিয়েছেন এমনটা জানার পর হাতুরুসিংহের বাংলাদেশে ফেরার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে যায়। কিন্তু সোমবার তিনি উভয় দায়িত্ব থেকেই পদত্যাগ করেন। এ বিষয়ে ক্রিকেট নিউ সাউথ ওয়েলস পুরুষ ক্রিকেটের হেড অব এলিট মাইকেল ক্লিঞ্জার বলেন, ‘আমরা পুরোপুরি তার আন্তর্জাতিক কোচিংয়ে ফেরার ইচ্ছাটা বুঝতে পেরেছি এবং তার পরবর্তী অধ্যায়ে কোচিং ক্যারিয়ারের জন্য শুভ কামনা জানাচ্ছি।’ তার এই বক্তব্যের পর আরও স্পষ্ট হয়ে যায় হাতুরুসিংহে ফিরতে চলেছেন বাংলাদেশের দায়িত্বে।

তাছাড়া পাপন বলেন, ‘সে ফিরছে কিনা তা নিশ্চিত নয়। তবে ১৮-২০ তারিখের মধ্যেই নতুন কোচ আসবেন। আমরা যে ধরনের কোচ খুঁজছি, পূর্ণ সময়ের- ওটাতে ও (হাথুরুসিংহে) আছে। অন্য কেউ পূর্ণ সময়ে না। কেউ হয়তো দুইশ দিন, কেউ একশ দিন। কাউকে আবার আইপিএলে ছেড়ে দিতে হবে। এটা হাতুরুসিংহের নেই। সেদিক থেকে মনে হয় যে, ওর সম্ভাবনা বেশি।’
সেই সম্ভাবনা সত্য হয়েছে। সর্বশেষ দেড় বছর ধরে সমালোচিত হয়ে অবশেষে গত ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন ডোমিঙ্গো। তিনি থাকাকালীনই গত বছরের মার্চ-এপ্রিলে গুঞ্জন ওঠে আবার বাংলাদেশের কোচ হচ্ছেন হাতুরুসিংহে। তাকেই নিতে বিসিবি আগ্রহী থাকলেও হাতুরুসিংহে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন নিউ সাউথ ওয়েলসের সঙ্গে। তাই শেষ পর্যন্ত কোনো পক্ষই সমাধানে আসতে পারেনি। বিসিবির কয়েকজন পরিচালকও তার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই কথা বলেছেন সবসময়।

ডোমিঙ্গোর স্বেচ্ছায় পদত্যাগে এখন দায়িত্ব পেয়ে হাতুরুসিংহে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ হিসেবে ফেরার সুযোগ পাওয়াটা সম্মানের। আমি যখন ছিলাম সত্যিই এখানকার মানুষের উষ্ণ আন্তরিকতা ও সংস্কৃতি ভালো লেগেছে। আবার সেই খেলোয়াড়দের সঙ্গে কাজ করতে এবং তাদের সাফল্যের উদযাপন করতে আমি মুখিয়ে আছি।’ শ্রীলঙ্কার সাবেক অলরাউন্ডার হাতুরুসিংহে নব্বইয়ের দশকে ২৬ টেস্ট ও ৩৫ ওয়ানডে খেলেছেন। ২০১১-২০১৪  সালে তিনি নিউ সাউথ ওয়েলস ব্লুজের সহকারী কোচ হন এবং ২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ থাকেন।

কোচ থাকাকালীন হাতুরুসিংহের অধীনে ঐতিহাসিক কিছু সাফল্য পায় বাংলাদেশ দল। ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে ২০১৫ সালে, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথমবার খেলে সেমিফাইনাল ২০১৭ সালে এবং প্রথমবার ওয়ানডে সিরিজ জয় করে ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্ট জয় এবং ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয় করে বাংলাদেশ। এছাড়া ২০১৬ টি২০ এশিয়া কাপ ফাইনালও খেলে।

হুট করেই ২০১৭ সালের নবেম্বরে বাংলাদেশের দায়িত্ব ছেড়ে নিজ দেশ শ্রীলঙ্কার হেড কোচ হয়ে ২০১৯ পর্যন্ত থাকেন। ২০২০ থেকে আবার নিউ সাউথ ওয়েলসের দায়িত্বেই ফেরেন হাতুরুসিংহে। এখন আবার বাংলাদেশের দায়িত্বে ফিরলেন ২ বছরের জন্য। এ বিষয়ে বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন বলেছেন, ‘চান্দিকার অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে জ্ঞান বাড়তি সুবিধা হবে তার জন্য এবং সেটা ফলপ্রসূ হবে খেলোয়াড়দের জন্য। প্রথম মেয়াদে আমরা তার সুচারু কৌশল ও তার ভালো প্রভাব আমরা জাতীয় দলে দেখতে পেয়েছি।’

×