ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ রিপোর্ট প্রথম পাতায়

সেঞ্চুরিতে অনন্য উচ্চতায় মিরাজ

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০০:২৫, ৮ ডিসেম্বর ২০২২

সেঞ্চুরিতে অনন্য উচ্চতায় মিরাজ

সেঞ্চুরিয়ান মেহেদি হাসান মিরাজ

৩ দিন আগে মিরপুর দেখেছে তার অবিশ^াস্য কীর্তি। প্রতিপক্ষের মুঠোয় ধরা দেওয়া জয়টাকে ছিনিয়ে এনেছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তাইতো সেদিন তাকে দৌড়ে এসে কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। অন্য সতীর্থরাও তাকে কাঁধে তুলে আনন্দ নৃত্যে মেতেছেন। অপার্থিব সেই ঘটনায় ঘোরে আচ্ছন্ন হয়েছেন সবাই। তার রেশ কাটার আগেই নিজেকে আরও উঁচুতে নিয়ে গেছেন অলৌকিক মিরাজ।

এবারও দলের বিপর্যয়ে কা-ারি হয়েছেন এবং বিস্ময়কর ব্যাটিং উপহার দিয়ে প্রতিপক্ষ ভারতের বোলিং বিভাগকে করেছেন হতাশায় নিমজ্জিত। বুধবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বলে বলে বিস্ময় ছড়িয়ে ৮ নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রথম এবং ওয়ানডে ইতিহাসেই মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে এই কীর্তি গড়েছেন তিনি। তাই অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন মিরাজ। সপ্তম উইকেটে অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ১৪৮ রানের জুটি ভারতের বিপক্ষে যে কোনো দলের রেকর্ড।

শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ারসেরা ব্যাটিংয়ে প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ৮৩ বলে ৮ চার, ৪ ছক্কায় মিরাজ অপরাজিত থাকেন ১০০ রানে। বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে সাবলীল ব্যাটিং যেন এখন ডালভাত হয়ে গেছে মিরাজের জন্য। ইংরেজিতে যা ‘মিরাকল’ তা যেন তার কাছে হয়ে গেছে একেবারেই স্বাভাবিক ঘটনা। মাত্র ৩ দিন আগে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ১৩৬ রানে ৯ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

সেখান থেকে ৩৯ বলে অপরাজিত ৩৮ রানের ইনিংস খেলে মুস্তাফিজুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে অবিশ^াস্য জয় এনে দেন মিরাজ। এর আগেও এমনটা ঘটিয়েছেন তিনি। চলতি বছরেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রামে গত ফেব্রুয়ারিতে ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তখন আফিফ হোসেন ধ্রুবর সঙ্গে সপ্তম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ১৭৪ রানের জুটি গড়ে রেকর্ডের পাতা ওলট-পালট করে দেন।

সেবার ছিল রান তাড়া করতে নেমে আরও কঠিন চাপের ম্যাচ। বুধবার ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও বিপর্যস্ত বাংলাদেশ আগে ব্যাট করতে নেমে। মাত্র ৬৯ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে যখন আর বড় কিছুর আশা দেখতে পাচ্ছিলেন না কেউ। তখন ধ্বংসস্তূপের মাঝে ফিনিস পাখির মতো লড়াই করে ইনিংসটাকে মেরামত করেছেন। এবার দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহকে সঙ্গী হিসেবে পেয়ে যেন আত্মবিশ^াসের স্ফুরণ দেখা গেছে মিরাজের ব্যাটিংয়ে।

হিসেবী ব্যাটিংয়ে দেখেশুনে তিনি চড়াও হয়েছেন ভারতীয় বোলারদের ওপর।  মিরাজ ব্যাট হাতে নামার পর দাবার ছক উল্টে গেছে। ভারতীয় বোলারদের দাপটে কুকড়ে যাওয়া বাংলাদেশ যেন হঠাৎ করে দৈত্যের হুঙ্কারে রুখে দাঁড়িয়ে উল্টো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। যখন বিস্ময়কর ঘটনা বারবার ঘটতে থাকে তখন সেখানে আর অবিশ^াস্য কিছু থাকে না। এখন প্রতিনিয়তই তেমনটা করে বিশ^কে বিমূঢ় করে চলেছেন মিরাজ। ক্যারিয়ারের তৃতীয় অর্ধশতক পেয়ে যান তিনি ইনিংসের ৩৮তম ওভারে মাত্র ৫৫ বল থেকে।

দলের বিপর্যয়ের মুখেও তিনি কতটা স্বাচ্ছন্দ্যে, নির্ভয়ে অবলীলাক্রমে ব্যাট চালিয়েছেন এখান থেকেই তা স্পষ্ট। এরপরও থামেননি মিরাজ দ্রুতগতিতে রান করে দলের রানের চাকা রেখেছেন সচল। ৪৭তম ওভারে মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে তার ১৪৮ রানের জুটি ভেঙে যায়। তারা ৬ উইকেটে ৬৯ রান থেকে ২৭.১ ওভার (দুটি নো বলসহ) উইকেটে থেকে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে গেছেন বড় সংগ্রহের পথে। মাহমুদুল্লাহ ৭৭ রানে যখন ফিরেছেন তখন দলের রান ২১৭! এটি ভারতের বিপক্ষে যে কোনো দলের সপ্তম উইকেটে সেরা জুটির রেকর্ড।

এর আগে ভারতের বিপক্ষে সপ্তম উইকেটে সেরা জুটি ছিল অবিচ্ছিন্ন ১২৬ রানের। ২০০৫ সালে ডাম্বুলায় সেটি করেন শ্রীলঙ্কার উপুল চন্দনা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে। তবে বাংলাদেশের পক্ষে এটি সপ্তম উইকেটে দ্বিতীয় সেরা জুটি। এর আগে সপ্তম উইকেটে মিরাজই গত ফেরুয়ারিতে চট্টগ্রামে ১৭৪ রানের অবিচ্ছন্ন জুটি গড়েন আফগানিস্তানের বিপক্ষে আফিফ হোসেন ধ্রুবকে সঙ্গে নিয়ে। কাজেই অকল্পনীয় ঘটনার জন্ম দেওয়া মিরাজের স্বভাবগত! নাসুম আহমেদকে নিয়ে অষ্টম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন থেকে আরও ৫৪ রান যোগ করেছেন মিরাজ।

তারা খরচা করেছেন মাত্র ২৩ বল। এই জুটি বিধ্বংসী হয়েছে মিরাজের তেজোদীপ্ত ব্যাটিংয়ে। জুটিতে তার ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ১২ বল থেকে আরও ৩৪ রান আর নাসুম করেছেন ১১ বলে ১৮। এর আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ৮১ রান ছিল মিরাজের ক্যারিয়ারসেরা। এবার সেটিকে ছাড়িয়ে যান ৪৯তম ওভারে গতিরাজ উমরান মালিককে ৩ বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১৪ রান তুলে নিয়ে। শেষ ওভারে ৮৫ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে থাকা মিরাজ চড়াও হন শার্র্দূল ঠাকুরের ওপর।

এই ওভারে দ্বিতীয় ও চতুর্থ বলে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে সেঞ্চুরির কাছাকাছি পৌঁছে যান তিনি। পঞ্চম বলে ২ ও শেষ বলে ১ রান নিয়ে ম্যাজিক ফিগার ১০০-তে পৌঁছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো। মাত্র ৮৩ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে রেকর্ডের পাতায় বেশকিছু পরিবর্তন এনেছেন মিরাজ। ওয়ানডে ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে এই  পজিশনে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি।

গত বছর মালাহাইডে স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডের হয়ে আটে নেমে সিমি সিং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৯১ বলে ১৪ চার হাঁকিয়ে ১০০ রানে অপরাজিত থাকেন এবং বিশ^রেকর্ড গড়েন। তিনি অবশ্য ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করেছেন। আর মিরাজ তার রেকর্ড ছুঁয়েছেন ম্যাচের প্রথম ইনিংস ব্যাট করে। মিরাজের এমন ব্যাটিংয়েই ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৭১ রানের লড়াকু পুঁজি পেয়েছে বাংলাদেশ দল।

×