
এএফসি নারী এশিয়ান কাপের বাছাই ম্যাচে স্বাগতিক মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গোলের পর আফঈদাদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস
দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবলে (সাফ) টানা দুইবারের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ নারী দল এবার ইতিহাস গড়ল। এএফসি নারী এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাহরাইনকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পর পরাক্রমশালী মিয়ানমারের বিপক্ষে ২-১ গোলের দারুণ এক জয় তুলে নিল মেয়েরা। এর মধ্য দিয়ে নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এশিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের আসর এশিয়া কাপে খেলার নিশ্চিত করল বাংলাদেশ।
বুধবার ইয়াংগুনের থুয়ান্না স্টেডিয়ামে ১৮তম মিনিটে দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর ৭২তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ঋতুপর্ণা চাকমা। খেলার একেবারে শেষ মুহূর্তে মিয়ানমারের হয়ে ব্যবধান কমান উইন উইন। টানা দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ‘সি’ গ্রুপের শীর্ষে পিটার বাটলারের দল। তুর্কমেনিস্তানকে ৮-০ গোলে হারিয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুইয়ে মিয়ানমার। দিনের আরেক ম্যাচে সমীকরণ ছিল, বাহরাইন জিতলে কিংবা ড্র করলে নিশ্চিত হবে বাংলাদেশের এশিয়ান কাপে খেলা।
বাংলাদেশের কাছে ৭ গোল হজম করার পর র্যাঙ্কিংয়ে ১৪১ নম্বর দল তুর্কমেনিস্তানের কাছেও হারের লজ্জা পেতে বসছিল বাহরাইন। ম্যাচটি ড্র হয়েছে ২-২ গোলে। দুবার পিছিয়ে গিয়েও বাহরাইন ঘুরে দাঁড়ায় দারুণভাবে। আর বাংলাদেশকে এনে দেয় প্রথমবারের মতো স্বপ্নের এশিয়ান কাপের টিকিট!
এখন শনিবার গ্রুপ পর্বে আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানের মুখোমুখি হবে মেয়েরা। ফিফা র?্যাঙ্কিংয়ে মিয়ানমার ৫৫তম স্থানে, বাংলাদেশ ১২৮ নম্বরে। অর্থাৎ দুই দলের মধ্যে র?্যাঙ্কিংয়ের ব্যবধান ৭৩ ধাপ। এই মাঠেই ২০১৮ সালে অলিম্পিক বাছাইপর্বে ৫-০ গোলে মিয়ানমারের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। তবে সব পরিসংখ্যান পেছনে ফেলেছে আফঈদা খন্দকারের নেতৃত্বাধীন দলটি। যোগ্যতা ও সামর্থ্যের ছাপ রেখে স্মরণীয় জয় তুলে নিয়েছে তারা। ম্যাচের শুরুতে বলের দখল রাখে মিয়ানমার।
বাংলাদেশের রক্ষণে ভীতিও ছড়ায় তারা। দ্বাদশ মিনিটে গোলরক্ষক রুপনা চাকমাকে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে বল বিপণ¥ুক্ত করতে হয়। ১৮তম মিনিটে বদলে যায় চিত্র। পায়ের কারকুরির পর শামসুন্নাহার জুনিয়র ডি-বক্সের সামনে ফাউলের শিকার হলে ফ্রি-কিক মেলে বাংলাদেশের। উইঙ্গার ঋতুপর্ণার শট রক্ষণ দেওয়ালে প্রতিহত হওয়ার পর ফের তিনিই বল পান। এরপর বাঁ পায়ের গড়ানো শটে দূরের পোস্ট দিয়ে জাল কাঁপান তিনি। বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতে ওঠে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ছয় মিনিট পর অল্পের জন্য ব্যবধান বাড়াতে পারেনি বাংলাদেশ।
ঋতুপর্ণার ক্রসে শামসুন্নাহার জুনিয়র খুব কাছ থেকে পা ছোঁয়ালেও বল পোস্টে লেগে বাইরে চলে যায়। সুযোগ নষ্টের আক্ষেপে মুখ ঢাকেন তিনি। প্রথমার্ধের শেষদিকে তেতে ওঠে মিয়ানমার। ৩৭তম মিনিটে ঘটতে পারত বিপদ। পোস্ট ছেড়ে আক্রমণ ঠেকাতে গিয়েছিলেন রুপনা। তিনি বলের নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হলে পেয়ে যান খিন মো মো তুন। তবে জাল ফাঁকা থাকলেও তার দূর থেকে নেওয়া শট হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট।
৪২তম মিনিটে বড় বাঁচা বেঁচে যায় বাংলাদেশ। ইউপার খাইনের ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট ক্রসবারে বাধা পায়। ফিরতি শটে বিপজ্জনক জায়গা থেকে বল উড়িয়ে মারেন ন ওয়াই। এরপর মাটিতে লুটিয়ে পড়ে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আক্রমণের ঝাপটা আরও বাড়ায় মিয়ানমার। তবে রক্ষণে আফঈদা-শামসুন্নাহার সিনিয়র-শিউলি আজিমরা অবিচল থাকায় গোলপোস্ট অক্ষত রাখে বাংলাদেশ। চাপ সামলে ৭১তম মিনিটে ম্যাচের চালকের আসনে বসে পড়ে বাংলাদেশ।
আবার বাঁ পায়ে ঝলক দেখান ঋতুপর্ণা। প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের কাছ থেকে বল কেড়ে বামপ্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠেন তিনি। এরপর ডি-বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের কোণাকুণি শটে ভেদ করেন নিশানা। পুরোপুরি বোকা বনে যান মিয়ানমারের গোলরক্ষক মিয়ো মিয়া মিয়া। তার মাথার ওপর দিয়ে বল জালে জড়ায়। ছয় মিনিট পর রক্ষাকর্তার ভূমিকায় দেখা যায় রুপনাকে। মাইয়াত হিন ডি-বক্সে ঢুকে একা পেয়ে যান তাকে। কিন্তু ফাঁকি দিতে পারেননি। ঝাঁপিয়ে পড়ে তার পা থেকে বল কেড়ে নেন রুপনা।