ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রিদেশীয় সিরিজে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শুক্রবার সকাল ৮টায় মাঠে নামবে বাংলাদেশ

অনুশীলন ছাড়াই প্রথম ম্যাচে সাকিব!

মোঃ মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০০:৩৭, ৬ অক্টোবর ২০২২

অনুশীলন ছাড়াই প্রথম ম্যাচে সাকিব!

সাকিব আল হাসান

ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে নিউজিল্যান্ড যাওয়া বাংলাদেশ দল সেখান থেকেই অস্ট্রেলিয়াতে টি২০ বিশ্বকাপ খেলতে যাবে। এবার ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (সিপিএল) খেলার ছাড়পত্র নেয়ায় ছুটিতে ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। কিন্তু দল ৩ অক্টোবর ক্রাইস্টচার্চে পৌঁছে ২ দিন অনুুশীলন করলেও সাকিব যোগ দিতে পারেননি। যদিও তার সিপিএল মিশন শেষ হয়েছে ২৮ সেপ্টেম্বর।

আরব আমিরাতে দলের সঙ্গে না যাওয়া, দলগত অনুশীলনে না থেকে দেশ থেকে একসঙ্গে নিউজিল্যান্ড যেতে না পারা, আনুষ্ঠানিক ফটোসেশন ও সংবাদ সম্মেলনে দেশের ক্রিকেটপ্রেমী কোটি কোটি মানুষকে কিছু প্রত্যয় ও আশা আকাক্সক্ষার কথা শোনাতে না পারা সাকিব কি সচেষ্ট ছিলেন একটু আগেভাগে ক্রাইস্টচার্চ যাওয়ার? এবার অধিনায়ক হিসেবে সেই নিবেদন তিনি কি দলের প্রতি দেখানোর চেষ্টা করেছেন? ২ অক্টোবরের বিমানের টিকেট কেটেছিলেন যা তাকে ৪ অক্টোবর ক্রাইস্টচার্চ পৌঁছে দিত।

ভিসা জটিলতায় সেটাও পারেননি, ৪ অক্টোবর ফ্লাইটে উঠে এখন ম্যাচের আগের দিন বিকেলে দলের সঙ্গে যোগ হবেন। সুযোগ পাবেন না দলগত অনুশীলনের, কিন্তু পরদিন অর্থাৎ শুক্রবার দুপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই সাকিবই অধিনায়ক হিসেবে টস করবেন। এমন স্বেচ্ছাচারী অধিনায়ক বিশ্বে কি বিরল নয়?
পারিবারিক কারণে ফ্লাইট মিস করার জন্য এবারই এক তারকা ব্যাটারকে বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অন্যতম ব্যাটিং স্তম্ভ শিমরন হেটমায়ারকে এই কারণে বাদ দেয়া হয়। আলোচিত বিষয়টি বিশ্বের ক্রিকেটানুরাগীরা ইতোমধ্যেই জানেন। সিপিএল শেষ করে এবার বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাকিবকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ছাড়পত্র দেয়।

সেই ছাড়পত্র অনুসারে ২ অক্টোবর ফ্লাইট সাকিবের তাহিতি হয়ে নিউজিল্যান্ড পৌঁছানোর। এই রুটে ফ্লাইটে সিট বুকিং পাওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। গুঞ্জন আছে সাকিব ৩০ সেপ্টেম্বরের টিকেট পাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে হেটমায়ারের জন্য উইন্ডিজ বোর্ড আলাদভাবে একটি সিট বুকিং করে। সাকিবের দল গায়ানা এ্যামাজন ওয়ারিয়র্স ফাইনালে উঠতে পারেনি এবার, তাই আগেভাগেই সাকিবের সিপিএল মিশন শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এরপর তিনি দলের সঙ্গে দ্রুত যোগ দেয়ার জন্য প্রচেষ্টা দেখাননি।

নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি কবে দলের সঙ্গে যোগ হবেন অধিনায়ক সাকিব। তাকে ছাড়াই নুরুল হাসান সোহানের নেতৃত্বে এবার আরব আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। দলগত অনুশীলনও করেছে দেশে ও দুবাইয়ে। পুরো সময়টা দলের সঙ্গে থাকার সুযোগ হয়নি সাকিবের। অধিনায়ক হিসেবে দল সাজানো, পরিকল্পনা করা, অনুশীলনে অন্য ক্রিকেটারদের দেখা ইত্যাদির অন্যতম অংশ সাকিব।

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনই জানিয়েছিলেন, সাকিব অধিনায়ক থাকলে আর পরিকল্পনায় কোন সমস্যা হয় না। কারণ সাকিব নিজেই সবকিছু সাজিয়ে নেন। কিন্তু এবার সেই সাকিব দলের সঙ্গে থাকতে পারেননি। এমনকি নিউজিল্যান্ড পৌঁছে বাংলাদেশ দল ২ দিন অনুশীলন করার পরেও সাকিবের দেখা পাওয়া যায়নি।
বুধবার ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজের ট্রফি উন্মোচন ও ফটোসেশন হয়েছে। সেখানে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন, পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম ছিলেন। ছিলেন না শুধু সাকিব। কারণ তিনি ভিসা জটিলতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের লস এ্যাঞ্জেলেস থেকে ফ্লাইটে উঠতে পারেননি। সমস্যা কাটিয়ে তাই ৪ অক্টোবর বিমানে উঠতে পেরেছেন তিনি। এ কারণে ৬ অক্টোবর বিকেলে তিনি পৌঁছুবেন।

তাই সুযোগ নেই দলের সঙ্গে একটা সেশনও অনুশীলন করার। অথচ তিনিই অধিনায়ক এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে শুক্রবার সিরিজের উদ্বোধনী ম্যাচে পাকদের বিপক্ষে টস করবেন সাকিবই। তাকে বাদ দিয়ে ট্রফি নিয়ে ফটোসেশন করেছেন সহঅধিনায়ক সোহান। সাকিব অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে সোহানকে দিয়েই যেন চলছে দল। তাহলে সাকিব অধিনায়ক হয়ে বিপর্যস্ত দলটাকে কতখানি সময় দিলেন এবং সবচেয়ে সিনিয়র ও অভিজ্ঞ হিসেবে কতখানি গুছিয়ে নিলেন নিজের মতো করে? সেই সময়ই তো পাননি। এবার ভিসা জটিলতার ইস্যুটি জানিয়ে দোষ ঢাকলেন, অথচ তিনি আগেভাগেই নিউজিল্যান্ড পৌঁছে যেতে পারতেন দলের প্রতি নিজের নিবেদন দেখিয়ে। যেহেতু সিপিএল আগেই শেষ হয়েছে।
এমন ঘটনা তার চিরাচরিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। গত বছর টি২০ বিশ্বকাপ যাত্রার আগে ছিল করোনা সঙ্কটের ধাক্কায় সতর্কতা ও কোয়ারেন্টাইন ইস্যু। তাই অফিসিয়াল ফটোসেশন হয়নি। দলের অন্যতম দুই সদস্য সাকিব আল হাসান এবং মুস্তাফিজুর রহমান ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) খেলতে তখন আরব আমিরাতে।

ঠিক ১ বছর পর আবার বিশ্বকাপ, এবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও হয়নি ফটোসেশন কিংবা সংবাদ সম্মেলন। এবারও সাকিব নেই। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের অফিসিয়াল ফটোসেশনেও থাকেননি তিনি দেশে অবস্থান করেও। এসব কি বাংলাদেশ দলকে সুশৃঙ্খল করছে নাকি আরও বিশৃঙ্খল এক পরিবেশের তৈরি করছে? বিপর্যস্ত দলকে নিয়ে কি আসলে সত্যিকার অর্থে মাথাব্যথা আছে কারও? তাহলে অন্তত সাকিবের হাতে নেতৃত্ব না দিয়ে অন্য কাউকে ভাবা হতো।

×