.
কৌশলগত প্রচারণাটা ব্যাপকতা পেয়েছে। দেশ বিদেশে ছড়িয়ে গেছে বেটিং প্রতিষ্ঠানটির নাম। বাঁহাতি অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান কি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আইনে কি আছে জানতেন না? তিনি একবার ম্যাচ ফিক্সিংয়ের একাধিক প্রস্তাব পেয়ে তা গোপন করে ১ বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে ছিলেন। সে সময়ে তার সামান্যতম ক্রিকেট আইন-কানুন, অনুশাসন জানার ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকলেও তা পূরণ হয়েছে বিভিন্ন কাউন্সেলিং সেশনের মাধ্যমে। এরপরও তিনি বেটিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে বিতর্কের ঝড় তুলেছেন এবং সারাবিশ্বই এই ঘটনাক্রমে জেনেছে প্রতিষ্ঠানটির নাম। দেশ-বিদেশে অনেকেই জানার জন্য ওয়েবসাইটে ঢুকেছেন। এতেই প্রয়োজনীয় বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা এক সপ্তাহেই হয়ে গেছে। এ কারণে বিসিবির কঠোর অবস্থানে চুক্তি বাতিল করলেও সাকিবের সঙ্গে আজ সরাসরি আলোচনায় বসবে বিসিবি। সাকিব কিংবা সেই প্রতিষ্ঠানের লাভ-ক্ষতির হিসেব সেখানে হওয়ার কথা নয়। বাঁহাতি অলরাউন্ডার এখন নিজেকে পুরোপুরি বিশুদ্ধ, তুলসী পাতায় ধোয়া নিষ্পাপ একজন হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করবেন। শুক্রবার দিবাগত ভোর রাতে দেশে ফিরেছেন তিনি। এশিয়া কাপে টি২০ দলে কারা থাকবেন, অধিনায়ক কে হবেন সেই আলোচনার মধ্যে চাপা পড়বে বিতর্কিত ইস্যুটা। যদিও বিসিবির চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন সাকিব, এরপরও তাকেই অধিনায়ক করতে হবে?
মাত্র ২ সপ্তাহের মধ্যে এশিয়া কাপ মাঠে গড়াবে। বিসিবি চাপে রয়েছে নতুন কাউকে টি২০ দলের নেতৃত্ব দেয়া এবং অনেক ইনজুরিতে জর্জরিত থেকে একটি ভাল দল গড়ার দুশ্চিন্তায়। এর মধ্যে সাকিব তার বেটিং প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক প্রচারণা বিতর্ক তৈরির মাধ্যমে করে ফেলেছেন। চুক্তির জন্য যে বিপুল অর্থ নিয়েছেন সেটার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে এক সপ্তাহেই। অথচ কোন প্রকার জলঘোলা না হলে এবং এটি নিয়ে কেউ প্রশ্ন না তুললে বেটিং সাইটটির প্রচারণা ১ বছরেও আদৌ এতটা ব্যাপকভাবে হতো না হওয়া কঠিন ছিল। এখন সাকিব চুক্তি বাতিল করার পরেও তাই তেমন আর্থিক ক্ষতি সেই প্রতিষ্ঠানটির হচ্ছে না। তাই সাকিবকে ইতোমধ্যেই তার প্রাপ্ত অর্থ ফেরত দিতে হবে কিনা এবং তিনি ফেরত দেবেন কিনা সেটাও এক বড় প্রশ্ন। এই প্রশ্নগুলো হয়তো বিসিবি কর্তাদের মাথাতেও ঘুরপাক খাওয়ার কথা। কারণ যেটি বৈধ নয়, বিসিবির আইনবিরুদ্ধ চুক্তি- সেখান থেকে প্রাপ্য অর্থ কি শাস্তিযোগ্য, অবৈধ নয়? এ কারণেই আসন্ন এশিয়া কাপের জন্য টি২০ দলের রূপরেখা তৈরি করলেও ঘোষণা দেয়া হয়নি।
শুক্রবারই হয়তো দল জেনে যেত সবাই। তবে সাকিব যে কান্ড ঘটিয়েছেন এরপর নতুন করে টি২০ অধিনায়ক হিসেবে পর্যালোচনা করতেই হয়েছে বিসিবিকে। সাকিব চুক্তি বাতিলের কথা চিঠি পাঠিয়ে নিশ্চিত করার পরেও তাই বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছেন, ‘সাকিব ১২ তারিখ (আজ) রাতে দেশে ফিরবে। ১৩ তারিখ সকালে আমি ওর সঙ্গে বসব। সব জেনেশুনে ও কেন এমন একটা কাজ করল, এর ব্যাখ্যা অবশ্যই ওকে দিতে হবে। টেলিফোনে তো আর এত কথা বলা যায় না। আমি তাই ওর সঙ্গে সামনাসামনি বসে কথা বলার অপেক্ষায় আছি। এরপর যা সিদ্ধান্ত নেয়ার নেব।’
সেই আলোচনায় শুধু চুক্তির ইস্যুটাই নয়, থাকবে টি২০ দলের বিষয়ে আলোচনা। কারণ এমন ঘোলাটে অবস্থার সৃষ্টি করা এবং আইনবিরুদ্ধ কাজের পরও শাস্তি না পেয়ে সাকিব কি অধিনায়কত্ব পাওয়ার অবস্থানে আছেন? সাকিবকে তো প্রায় চূড়ান্তই করে ফেলে বিসিবি। কিন্তু এখন তার সঙ্গে আলোচনা করে, সব জেনেবুঝেই অধিনায়ক ঘোষণা করতে হবে। সাকিবের ব্যাপারে শাস্তির কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা এই প্রসঙ্গে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বৃহস্পতিবারই ইঙ্গিত দিয়েছেন, ‘সে তো বোর্ডের চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে। স্পন্সরশিপ চুক্তির কথা আমাদের জানায়নি। তবে আপাতত চুক্তি বাতিল করা নিয়েই আমাদের ভাবনা ছিল। নিয়ম ভঙ্গের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা, সেটা নিয়ে আমরা পরবর্তীতে আবার কথা বলব।’ অর্থাৎ আজকের আলোচনায় হয়তো এশিয়া কাপের দলটাই মূলে থাকবে, সাকিব ইস্যুতে আলোচনা হলেও তা কেউ জানতে দেবেন না আপাতত এটাই স্পষ্ট জালাল ইউনুসের কথায়। আজ সাকিবের সঙ্গে আলোচনায় জাতীয় দলের নির্বাচকদেরও থাকার সম্ভাবনা আছে। এশিয়া কাপের দল ঘোষণার আগে সমস্যায় আছেন নির্বাচকরা। কারণ ইনজুরিতে নুরুল হাসান সোহান ও লিটন দাস ছিটকে গেছেন।
তবে এশিয়া কাপের মাঝপথে সোহানের সেরে ওঠার সম্ভাবনা প্রবল, সেক্ষেত্রে তাকে দলের সঙ্গে রাখা হতেও পারে। ইয়াসির রাব্বি হাফ ফিট। তাকে তাই না রাখাও হতে পারে। আর মুস্তাফিজুর রহমানকে বিশ্রাম দিয়ে দিয়ে খেলাতে হবে। শরিফুল ইসলামের আপাতত সমস্যা নেই। পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ইতোমধ্যেই ৮০ ভাগ ফিট ঘোষিত হয়ে এইচপি ও বাংলাদেশ টাইগার্সের মধ্যে প্রস্তুতি ম্যাচে নেমেছেন। মুনিম শাহরিয়ার, নাজমুল হোসেন শান্তরা পরীক্ষায় ব্যর্থ তাই বাদ পড়ার সম্ভাবনা প্রবল।
পারভেজ হোসেন ইমন এবং ওয়ানডে সিরিজে দুর্দান্ত খেলার কারণে এনামুল হক বিজয় এশিয়া কাপের টি২০ দলে জায়গা পেতে পারেন। বাড়তি ওপেনার কিংবা প্রয়োজনবোধে যে কোন পজিশনে খেলানোর জন্য সৌম্য সরকারকেও বিবেচনায় রাখা হয়েছে। ইয়াসির রাব্বি শেষ পর্যন্ত সন্তোষজনক অবস্থায় না থাকলে এমনকি সাব্বির রহমানও সৌভাগ্যবান হিসেবে জায়গা পেয়ে যেতে পারেন। এছাড়া বাকি যারা জিম্বাবুইয়ে সফরের টি২০ দলে ছিলেন তারাই থাকবেন। আর সাকিব অধিনায়ক না হলে শেষ পর্যন্ত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কাঁধেই ফিরতে পারে ক্যাপ্টেন্সি। আর সাকিবের অপরাধের শাস্তিÑ সে তো পরের ব্যাপার!