
ছবি: সংগৃহীত
সিলিকন ভ্যালিতে তুমুল আলোড়ন তুলেছে ওপেনএআই-এর আকস্মিক সিদ্ধান্ত। প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা দিয়েছে, তারা পুরো এক সপ্তাহ বন্ধ থাকবে। বাইরে বলা হচ্ছে, এই ছুটি দেওয়া হচ্ছে কর্মীদের ‘বার্নআউট’ বা অতিরিক্ত মানসিক চাপ কাটানোর জন্য। তবে বিষয়টা এখানেই শেষ নয়—মেটার আগ্রাসী ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ বা প্রতিভা শিকারের সময় এই ছুটির সিদ্ধান্ত অনেকের কাছেই কৌশলী ও সন্দেহজনক মনে হচ্ছে।
কেন বন্ধ হচ্ছে ওপেনএআই?
ওপেনএআই বলছে, টানা মাসের পর মাস কর্মীরা সপ্তাহে ৮০ ঘণ্টার মতো কঠোর পরিশ্রম করছেন। এতে ক্লান্তি, মানসিক অবসাদ ও মনোবল কমে যাচ্ছে। তাই তাদের বিশ্রামের সুযোগ দিতে এই সিদ্ধান্ত।
তবে ঠিক এই সময়ে মেটা যেভাবে আগ্রাসীভাবে ওপেনএআই-এর শীর্ষ গবেষক ও প্রকৌশলীদের বিশাল অর্থের লোভ দেখাচ্ছে, তাতে প্রশ্ন উঠছে—এটা কি শুধুই কর্মীদের বিশ্রাম, নাকি নিজের টিমকে বাঁচানোর চেষ্টা?
মেটার লোভনীয় অফার: ট্যালেন্ট যুদ্ধের মূল মঞ্চে
মেটার ভূমিকা খুবই সরাসরি। খবরে প্রকাশ, তারা শীর্ষ এআই গবেষকদের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত সাইনিং বোনাস দিচ্ছে।
বিশেষ করে, ওপেনএআই-এ কাজ করা বা প্রশিক্ষিত যারা, তাদের দিকেই মূল নজর মেটার। ইতোমধ্যেই অনেক সাবেক ওপেনএআই কর্মী মেটার FAIR ডিভিশন ও তাদের নতুন AGI (Artificial General Intelligence) গবেষণা দলে যোগ দিয়েছেন।
ওপেনএআই-এর কর্মীরা যেখানে ক্লান্ত, সেখানে এই বিশাল অর্থের প্রস্তাবের হাতছানি সহজেই অস্বীকার করা কঠিন।
ওপেনএআই-এর ভিতরে কী চলছে?
ওপেনএআই-এর প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা মার্ক চেন ও সিইও স্যাম অল্টম্যানের অভ্যন্তরীণ বার্তায় ব্যাপক দুশ্চিন্তার আভাস মিলেছে।
মার্ক চেন দলের মধ্যে বেড়ে ওঠা উদ্বেগ স্বীকার করে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন সবাই আবার ‘মিশনের সঙ্গে সংযোগ’ স্থাপন করেন।
অন্যদিকে, স্যাম অল্টম্যান প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাস করা হবে, অভ্যন্তরীণ স্বীকৃতি বাড়ানো হবে এবং বাইরের চাকরি অফারের মুখে সবাই যেন ঐক্যবদ্ধ থাকে। তবে অনেক কর্মীর কাছে এসব প্রতিশ্রুতি অনেক দেরিতে আসা বলে মনে হচ্ছে।
বিপদ আরও বড়: মেটার ‘ছুটি’র সুযোগ নেওয়ার আশঙ্কা
বিপদ এখানেই শেষ নয়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই ‘ছুটির’ সুযোগে মেটা আরও জোরালোভাবে ওপেনএআই কর্মীদের টানতে পারে।
যখন অধিকাংশ কর্মী বিশ্রামে থাকবেন, তখন মেটার নিয়োগকারী দল চুপ করে বসে থাকবে না।
শুধু ওপেনএআই-এর শীর্ষ নির্বাহীরাই এই সময়ে কাজ করবেন—এটাও দেখাচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটি এটাকে সাধারণ ছুটি নয়, বড় ধরনের সংকট হিসেবে দেখছে।
শুধু ওপেনএআই নয়, এআই শিল্পের জন্যও সতর্ক সংকেত
এই ঘটনা গোটা এআই শিল্পের সামনে দু’টি বড় সমস্যা স্পষ্ট করে তুলেছে:
১. এআই গবেষণাগুলোতে কর্মীদের ওপর অমানবিক কাজের চাপ
২. শীর্ষ প্রতিভা দখলের জন্য বেড়ে চলা উন্মাদনা।
ওপেনএআই-এর জন্য এটা শুধু একটা বিশ্রামের সময় নয়, সাংগঠনিক সংস্কৃতির জন্যও বড় শিক্ষা। তাদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত শুধু প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ নয়, পুরো এআই শিল্পের দিকও নির্ধারণ করতে পারে।
আবির