ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

বদলে দেবে ইন্টারনেটের নিয়ম

গুগলের AI মোড: ডিজিটাল যুগের ভয়ংকর বিপ্লব

প্রকাশিত: ২০:০৩, ১৪ জুন ২০২৫

গুগলের AI মোড: ডিজিটাল যুগের ভয়ংকর বিপ্লব

বিশ্বের সবচেয়ে বড় সার্চ ইঞ্জিন গুগল তাদের সার্চ প্ল্যাটফর্মে একটি নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সরঞ্জাম চালু করতে যাচ্ছে, যা ইন্টারনেটকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দিতে পারে। গুগল জানিয়েছে, এটি ওয়েবকে পুনর্জীবিত করবে, কিন্তু অনেকে আশঙ্কা করছেন, এটি ওয়েবসাইটগুলোর জন্য একটি বিপর্যয় হতে পারে।

আজকের ইন্টারনেটের মূল কাঠামো একটি সহজ চুক্তির ওপর ভিত্তি করে: ওয়েবসাইটগুলো তাদের বিষয়বস্তু গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনের কাছে বিনামূল্যে সরবরাহ করে এবং গুগল তার পরিবর্তে ব্যবহারকারীদের ওয়েবসাইটে নিয়ে আসে, যেখানে বিজ্ঞাপন দেখানো হয় ও পণ্য বিক্রি হয়। এই ব্যবস্থা গত কয়েক দশক ধরে কাজ করে আসছে এবং ইন্টারনেটের ৬৮ শতাংশ ব্যবহার সার্চ ইঞ্জিন থেকেই শুরু হয়, যার প্রায় ৯০ শতাংশই গুগল সার্চ।

কিন্তু গুগলের নতুন ‘এআই মোড’ সার্চ ইঞ্জিনের ঐতিহ্যবাহী ফলাফলগুলো সম্পূর্ণরূপে প্রতিস্থাপন করবে। এটি একটি চ্যাটবটের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তর স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি করে একটি ছোট প্রবন্ধের মতো ফলাফল দেখাবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া এ নতুন ফিচারটি ভবিষ্যতে গুগলের ডিফল্ট সার্চ পদ্ধতি হিসেবে চালু হতে পারে।

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই এআই মোড ইন্টারনেটে দর্শক প্রবাহকে কঠোরভাবে কমিয়ে দিতে পারে, যা বহু ওয়েবসাইটের আয়ের প্রধান উৎস হ্রাস করবে। এ কারণে অনেক প্রকাশক এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটর অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। মার্কেটিং সংস্থা অ্যামসাইভের SEO গবেষণা বিভাগের উপ-সভাপতি লিলি রে বলেন, "গুগল যদি এই এআই মোডকে ডিফল্ট করে, তবে এটি ইন্টারনেটের জন্য বিধ্বংসী প্রভাব ফেলবে।"

গুগল অবশ্য এই সমস্ত আশঙ্কাকে অতিরঞ্জিত বলে খন্ডন করেছে। তারা বলেছে, এআই মোড ব্যবহারকারীদের জন্য আরও উন্নত তথ্য সরবরাহ করবে এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ট্রাফিক পাঠিয়ে ইন্টারনেটকে আরও স্বাস্থ্যকর করবে। গুগলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নিক ফক্স বলেন, “আমাদের কাছে ডেটা রয়েছে যা দেখায় ওয়েব এখনো প্রসার লাভ করছে। গত দুই বছরে ওয়েবের বিষয়বস্তু ৪৫ শতাংশ বেড়েছে।”

তবে অনেক ওয়েবসাইট মালিক ও প্রকাশক দাবি করছেন, তাদের ওয়েবসাইটে গুগল থেকে আসা ক্লিকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। গুগলের AI Overviews ফিচার ইতোমধ্যে অনেক দর্শককে সরাসরি ওয়েবসাইটে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে প্রাথমিক উত্তর প্রদানে সক্ষম। এর ফলে ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ক্লিকের পতন ঘটেছে বলে বিভিন্ন বিশ্লেষণে পাওয়া গেছে। “৬০ শতাংশেরও বেশি গুগল সার্চ এখন ‘জিরো-ক্লিক’, অর্থাৎ ব্যবহারকারী কোনো লিংকে ক্লিক না করেই তথ্য পেয়ে যাচ্ছে,” বিশেষজ্ঞরা বলেন।

হাউজ ফ্রেশ নামে একটি ছোট অনলাইন রিভিউ সাইটের সম্পাদক গিসেলে নাভারো বলেন, “এখনকার AI সার্চ এমন যেন লাইব্রেরিয়ানের কাছে প্রশ্ন করা কিন্তু তিনি শুধু বইয়ের কথা বলে দেন, বইটির তথ্য দেয় না।” এর ফলে ওয়েবের বৈচিত্র্যময় তথ্যসূত্র সংকুচিত হতে পারে এবং ব্যবহারকারীরা একদম সীমিত ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে বাধ্য হতে পারেন।

বিভিন্ন বিশ্লেষক আশা করছেন, একবার এআই মোড ডিফল্ট হয়ে গেলে এটি পুরো ওয়েবের তথ্য খোঁজার ধরণ সম্পূর্ণ পাল্টে দেবে। প্রকাশনা ব্যবসার জন্য এটির প্রভাব চরম হতাশাজনক হতে পারে। তবে গুগল এই পরিবর্তনকে ডিজিটাল অভিজ্ঞতা উন্নয়নের দিক থেকে দেখছে।

এক কথায়, ইন্টারনেটের ‘ওপেন ওয়েব’ অর্থাৎ মুক্ত ও স্বতন্ত্র ওয়েবসাইটের যুগে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। ভবিষ্যতে কী রকম ডিজিটাল পৃথিবী দাঁড়াবে, তা সময়ই দেখাবে।

Jahan

×