ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ডাইনোসরের জীবাশ্মে ক্যান্সার! চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন আশা, মিলতে পারে সাফল্য

প্রকাশিত: ১৩:০০, ১৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৩:০১, ১৪ জুন ২০২৫

ডাইনোসরের জীবাশ্মে ক্যান্সার! চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন আশা, মিলতে পারে সাফল্য

ছবি: সংগৃহীত

একটি ৭ কোটি বছরের পুরোনো ডাইনোসরের জীবাশ্মে ক্যান্সারের চিহ্ন খুঁজে পেয়েছেন যুক্তরাজ্য ও রোমানিয়ার বিজ্ঞানীরা। ‘টেলমাটোসরাস ট্রান্সসিলভানিকাস’ নামের এই ঘাস খেকো, গরুর আকারের ডাইনোসরটি বর্তমান রোমানিয়ার অঞ্চলে বাস করত বলে ধারণা করা হয়। বিশেষ করে এর চোয়ালে একটি টিউমারের চিহ্ন পাওয়া গেছে, যা গবেষকদের কাছে অভাবনীয় এক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সূত্র হয়ে উঠতে পারে।

এই আবিষ্কারকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে টিউমারের পাশে সংরক্ষিত নরম টিস্যুর অস্তিত্ব, যেখানে রক্তকণিকার মতো গঠনের চিহ্ন পাওয়া গেছে। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে এই রক্তকণিকাসদৃশ কাঠামো শনাক্ত করা হয়।

গবেষকদের মতে, নরম টিস্যুতে থাকা প্রোটিন উপাদানগুলো রোগের জৈবিক গঠনের গভীরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। এ ধরনের জীবাশ্ম গবেষণা শুধু রোগের উৎপত্তি ও বিবর্তনের ইতিহাস জানতেই নয়, আধুনিক চিকিৎসার উন্নয়নেও নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।

জীবাশ্ম গবেষণায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

গবেষকদল তাদের প্রতিবেদনে বলেছেন, “শুধু কঙ্কাল নয়, জীবাশ্মে সংরক্ষিত নরম টিস্যুর গুরুত্ব অনেক বেশি। ভবিষ্যতের উচ্চমাত্রার ‘মলিকুলার টেকনিক’ প্রয়োগ করে এসব টিস্যু থেকে রোগের গভীরতর তথ্য পাওয়া সম্ভব।”

এই নতুন গবেষণার গবেষকদলের প্রধান, অ্যাংলিয়া রাসকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল সায়েন্সের অধ্যাপক জাস্টিন স্টেবিং বলেন, ‘ডাইনোসররা দীর্ঘায়ু ও বড় দেহবিশিষ্ট প্রাণী হওয়ায় তারা ক্যান্সারের মতো রোগের প্রতিরোধ ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে গবেষণার দারুণ ক্ষেত্র। ক্যালসিফায়েড টিস্যু বা হাড়ে থাকা প্রোটিন তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল এবং ডিএনএ’র মতো সহজে নষ্ট হয় না, তাই এরা প্রাচীন রোগ গবেষণার আদর্শ মাধ্যম।’

তিনি আরও বলেন, ‘নরম টিস্যুতে থাকা প্রোটিন আমাদের রোগের জৈবিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে সেইসব তথ্য দেয় যা কেবল কঙ্কাল দিয়ে পাওয়া সম্ভব নয়।’

ভবিষ্যতের চিকিৎসা গবেষণায় বড় ভূমিকা

গবেষণাটি যে পদ্ধতিতে চালানো হয়েছে, সেটি এখনও পর্যন্ত অনেকটাই অব্যবহৃত ছিল। ফলে গবেষকরা আশা করছেন, আরও অনুসন্ধান ও সংরক্ষণের মাধ্যমে মানুষের জন্যও উপকারী নতুন আবিষ্কারের দরজা খুলে যাবে।

তবে এ জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পিত জীবাশ্ম সংরক্ষণ। গবেষকরা জোর দিয়ে বলেছেন, শুধু হাড়ের কাঠামো নয়, জীবাশ্মের প্রোটিন ও নরম টিস্যুগুলো সংরক্ষণে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীরা আরও উন্নত প্রযুক্তিতে রোগ-বিকাশের ইতিহাস জানতে পারেন।

এটি প্রমাণ করছে, প্রাণীর কোটি বছরের ইতিহাসে ক্যান্সারের মতো রোগের শিকড় কতটা গভীরে এবং সেটি মানব চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য কতটা তাৎপর্যপূর্ণ।

 

সূত্র: এনডিটিভি।

রাকিব

×