ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

এফটিসির অভিযোগ

গুডবাই, মেটা: ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ কিনে প্রতিযোগিতা ধ্বংস করেছেন জাকারবার্গ!

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ১৭ মে ২০২৫; আপডেট: ০৯:০১, ১৭ মে ২০২৫

গুডবাই, মেটা: ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ কিনে প্রতিযোগিতা ধ্বংস করেছেন জাকারবার্গ!

মার্ক জাকারবার্গ নিজেই যেন স্বীকার করে নিয়েছেন, ফেসবুক আর আগের মতো নেই। সেই গৌরবময় দিনগুলো এখন অতীত। উইসকনসিনের ফুপু যে আপনাকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতেন, যাঁকে ১৪ বছর বয়সের পর আর দেখেননি,তাঁর সেই বার্তাটিও আর পাওয়া যাবে না।

মেটা কর্পোরেশনের (যার অধীনে এখন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ) প্রধান নির্বাহী জাকারবার্গ স্বয়ং এই রূপান্তর বাস্তবতায় আনুষ্ঠানিক সিল দিয়েছেন।

এই অবস্থার পেছনে রয়েছে একটি বড় ঘটনা।মার্কিন ফেডারেল ট্রেড কমিশন (FTC) এর ঐতিহাসিক মামলা। অভিযোগের মূল কথা জাকারবার্গ প্রতিযোগীদের কিনে নিয়ে একচেটিয়া আধিপত্য তৈরি করেছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতা বিরোধী আইনের সরাসরি লঙ্ঘন। এবং এখন মার্কিন সরকার চায় মেটা যেন ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ বিক্রি করে দেয়!

কী ঘটছে মেটাকে ঘিরে?

মার্কিন ফেডারেল ট্রেড কমিশনের দাবি মেটা অন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে তাদেরই কিনে নিচ্ছিল। প্রতিযোগিতা যেভাবে মাথা তুলছিল, তা রুখতেই ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। আর এতেই ধ্বংস হয়েছে প্রযুক্তির স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা।


ফেসবুকের বদলে এখন কী?
মামলার শুনানিতে জাকারবার্গ নিজেই স্বীকার করেছেন, ফেসবুক এখন আর তার মূল লক্ষ্য বিশ্বজুড়ে মানুষের সংযোগ তৈরি পূরণ করে না।

আপনি হয়তো এখনও ফেসবুকে আছেন, কিন্তু এখন সেখানে বন্ধুর ব্যক্তিগত জীবনের গল্পের চেয়ে ভাইরাল ভিডিও, ট্রেন্ডিং পোস্ট আর রিলসই বেশি দেখা যায়।এক সময়ের নস্টালজিক বন্ধুদের পোস্ট দেখা বা পুরোনো সম্পর্কের স্মৃতি হাতড়ে বেড়ানো প্ল্যাটফর্মটি এখন হয়ে উঠেছে অ্যালগরিদম-নির্ভর মনোযোগ ধরে রাখার যন্ত্র।


আজকের ফেসবুকের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে একটি অ্যালগরিদম, যেখানে গুরুত্ব পায় ভাইরাল কনটেন্ট ও ট্রেন্ডিং ভিডিও। মানুষ-মানুষের সংযোগ নয়, বরং ব্যবহারকারীদের যতটা সম্ভব ধরে রাখাই এখন মূল লক্ষ্য।


মেটা কি সত্যিই একচেটিয়া শক্তি?

FTC এর মামলার মূল যুক্তিমেটা ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ কিনে নিয়ে প্রতিযোগিতা ধ্বংস করেছে। এখন টেলিগ্রাম কিংবা স্ন্যাপচ্যাটের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো ওই পরিসরে পৌঁছাতে পারে না, যেটা ইনস্টাগ্রাম বা হোয়াটসঅ্যাপ ইতিমধ্যে অর্জন করেছে।

জাকারবার্গ নিজেও আদালতে অস্বীকার করতে পারেননি। তার পুরোনো কিছু ইমেইল প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, যেখানে ইনস্টাগ্রামকে তিনি "একটা ভয়ানক হুমকি" বলে উল্লেখ করেছিলেন এবং যেকোনো মূল্যে তা দমন করার কথা লিখেছিলেন। এমনকি স্ন্যাপচ্যাট কিনতে ২০১৩ সালে বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন তিনি।

জাকারবার্গের পাল্টা যুক্তি: না কিনলে টিকে থাকত না!

জাকারবার্গ দাবি করেছেন, মেটা ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপে বিনিয়োগ না করলে সেগুলো এতদূর এগোতো না। আজ তারা যতটা জনপ্রিয়, তার পেছনে মেটারই অবদান। এই যুক্তিতে তিনি নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন।

মামলার পরিণতি কী হতে পারে?

এই বিচারপ্রক্রিয়া চলবে জুলাই পর্যন্ত। FTC যদি মামলার প্রথম ধাপে জয়ী হয়, তাহলে পরবর্তী ধাপে তারা মেটাকে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ বিক্রি করার জন্য আদালতের নির্দেশ চাইবে। যদি তা ঘটে, তবে মেটার জন্য এটি হবে একটি বড় আঘাত। একইসঙ্গে গুগল, অ্যামাজনের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টদের জন্যও এটি হতে পারে কড়া বার্তানীতিমালার বাইরে গেলেই শাস্তি আসবেই।

“লাইক” বাটন দিয়ে এই বিপদ থেকে মুক্তি মিলবে না এটাই যেন শেষ কথা।

 

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/3rb8wd76

আফরোজা

×