
ছবি: সংগৃহীত
নাসার ২০২৫ নিউ জিল্যান্ড সুপার প্রেসার বেলুন অভিযানের প্রথম উড্ডয়ন ১৭ দিনের বেশি সময় পর সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় সময় অনুযায়ী রোববার, ৪ মে সকাল ৭টা ৪৬ মিনিটে (স্থানীয় সময়) বেলুনটি প্রশান্ত মহাসাগরের ওপরে একটি নিয়ন্ত্রিত অবতরণে নামানো হয়। এতে যুক্ত ছিল উচ্চ-মহাকাশ পর্যবেক্ষণ মিশন “HIWIND”।
নাসার টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের প্যালেস্টাইনে অবস্থিত কলম্বিয়া সায়েন্টিফিক বেলুন ফ্যাসিলিটি থেকে এই অবতরণ প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। বেলুনটি প্রায় ৮১৩ মাইল পূর্বে নিউ জিল্যান্ডের উপকূল থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে অবতরণ করে।
নাসার বেলুন প্রোগ্রামের প্রধান গ্যাব্রিয়েল গার্ডে বলেন, “মিশনের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায় আমরা জননিরাপত্তা এবং পরিবেশগত ঝুঁকি এড়াতে উন্মুক্ত জলরাশিতে নিয়ন্ত্রিত অবতরণ পরিচালনা করেছি।”
নাসা জানায়, ২০১৫ সাল থেকেই তারা এই ধরনের সমুদ্রভিত্তিক অবতরণের পরিবেশগত বিশ্লেষণ করে আসছে। অবতরণের পর প্রায় দুই টন ওজনের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি সমুদ্রের গভীরে টেনে নিয়ে গিয়ে এটি যাতে সামুদ্রিক প্রাণীর প্রধান বাসস্থানের স্তরে না থাকে, সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বেলুনে প্রযুক্তিগত সমস্যা
যদিও বেলুনটি সফলভাবে তার নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ করেছে, তবুও উড্ডয়নের সময় কিছু ছোটখাটো সমস্যা লক্ষ করা হয়। বিশেষ করে শীতল আবহাওয়ায়, যেমন ঝড়ের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময়, বেলুনের উচ্চতা মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছিল। এতে বোঝা যায়, সিস্টেমে সামান্য লিক রয়েছে অথবা হার্ডওয়্যারে ত্রুটি রয়েছে।
গার্ডে জানান, “আমরা আমাদের এক হার্ডওয়্যার ইন্টারফেসে পারফরম্যান্স ইস্যু পেয়েছি, যা উচ্চতা স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলেছে। হার্ডওয়্যার পুনরুদ্ধার করা সম্ভব না হলেও সমস্ত বৈজ্ঞানিক ও সহায়ক তথ্য আমরা নিরাপদে টেলিমেট্রি মাধ্যমে গ্রহণ করতে পেরেছি।”
মিশনের সময় বেলুনটি পুরো দক্ষিণ গোলার্ধের মধ্য-অক্ষাংশ অঞ্চল ঘুরে সফলভাবে বিশ্ব পরিভ্রমণ সম্পন্ন করে ৩ মে সকাল ৭টা ২২ মিনিটে।
বেলুন নামানো হলো পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী
বেলুনটি দক্ষিণ আমেরিকা অতিক্রম করার আগেই সমস্ত ব্যালাস্ট শেষ হয়ে যায়, যার মাধ্যমে উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। রাতের বেলায় উচ্চতা এক পর্যায়ে ৬০ হাজার ফুট পর্যন্ত কমে যাওয়ায়, নিরাপদ অবতরণের সম্ভাবনা কমে যায়। তাই নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতেই বেলুন মিশন শেষ করা হয়।
দ্বিতীয় বেলুন মিশন শুরু
এদিকে দ্বিতীয় সুপার প্রেসার বেলুনটি ইতোমধ্যে নিউ জিল্যান্ডের ওয়ানাকা থেকে উড্ডয়ন করেছে ৩ মে শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ৩৮ মিনিটে (যুক্তরাষ্ট্র সময়)। এতে একাধিক ছোট ছোট বৈজ্ঞানিক পে-লোড যুক্ত রয়েছে, যার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি মিশনের সক্ষমতা যাচাই করা হবে।
গার্ডে বলেন, “প্রথম মিশনের পুরোটা জুড়েই আমাদের দল অসাধারণ দক্ষতা ও উৎসর্গের সঙ্গে কাজ করেছে। আমরা আমাদের প্রযুক্তির কাঠামো ও নকশা নিয়ে আশাবাদী—যা ভবিষ্যতের দীর্ঘমেয়াদি মধ্য-অক্ষাংশ বৈজ্ঞানিক অভিযানে সহায়তা করবে।”
উল্লেখ্য, HIWIND মিশনের নেতৃত্ব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বোল্ডার, কলোরাডোতে অবস্থিত ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাটমোসফেরিক রিসার্চের হাই অল্টিটিউড অবজারভেটরি। এই মিশনের মাধ্যমে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের থার্মোস্ফিয়ারে নিরপেক্ষ বায়ুপ্রবাহ পরিমাপ করা হয়েছে, যা যোগাযোগ ও নেভিগেশন ব্যবস্থার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
নাসা জানায়, বেলুনের সমস্যা চিহ্নিত করে পরবর্তী মিশনে যেন তা না ঘটে, সেজন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি সংশোধনীও গ্রহণ করা হয়েছে।
সূত্র: https://www.nasa.gov/blogs/wallops/2025/05/04/nasa-ends-super-pressure-balloon-flight-after-17-days/
রবিউল