ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১

যেসব কারণে রাসুল (সা.) কেঁদেছিলেন

প্রকাশিত: ২১:৩৭, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

যেসব কারণে রাসুল (সা.) কেঁদেছিলেন

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন কোমল হৃদয়ের অধিকারী, মানবতার প্রতি অগাধ মমত্ববোধ ছিল তার হৃদয়ে। তিনি মানুষের দুঃখ-কষ্ট, উম্মতের ভবিষ্যৎ এবং আল্লাহর ভয়ে অশ্রু বিসর্জন করতেন। কুরআন ও হাদিসের আলোকে এমন কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো, যেসব কারণে রাসুল (সা.) কেঁদেছিলেন:

উম্মতের জন্য শঙ্কা
রাসুল (সা.) গভীরভাবে তার উম্মতের কল্যাণ কামনা করতেন। তিনি জানতেন, তার পর মৃত্যুর পরে মানুষ নানা বিভ্রান্তিতে পতিত হবে, বিভিন্ন বিপদ-আপদে জর্জরিত হবে। একদিন তিনি কবরস্থানে গিয়ে কেঁদে বলেছিলেন, “আমার ভাইদের জন্য আমি কতই না ব্যাকুল!” সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কি আপনার ভাই নই?” তিনি বললেন, “তোমরা আমার সাহাবী; আমার ভাইরা হলো তারা, যারা আমাকে দেখেনি, কিন্তু আমার উপর ঈমান এনেছে।” (সহিহ মুসলিম)

কুরআনের আয়াত শুনে
রাসুল (সা.) আল্লাহর বাণী শুনে গভীরভাবে প্রভাবিত হতেন। একবার হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) কে তিনি কুরআন তিলাওয়াত করতে বললেন। আবদুল্লাহ যখন সূরা নিসার আয়াত পড়লেন, যেখানে বলা হয়েছে, "কী হবে যখন আমি প্রত্যেক জাতি থেকে একজন সাক্ষী আনব, এবং আপনার (হে মুহাম্মদ) কাছ থেকে সাক্ষ্য চাওয়া হবে?" তখন রাসুল (সা.) এর চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরতে শুরু করলো। (সহিহ বুখারি)

সন্তান হারানোর বেদনায়
রাসুল (সা.) তার পুত্র ইব্রাহিমের মৃত্যুতে কেঁদেছিলেন। তিনি বলেন, "চোখ অশ্রু বিসর্জন করছে, হৃদয় ব্যথিত হচ্ছে, তবুও আমরা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যা বলা উচিত তাই বলব।" (সহিহ বুখারি)

মানুষের মৃত্যু ও কবরের শাস্তি দেখে
রাসুল (সা.) মানুষের মৃত্যু ও পরকালীন জীবনের কথা চিন্তা করে কেঁদেছেন। একবার একটি কবরস্থানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি কেঁদে ফেললেন এবং সাহাবীদের বললেন, “এই কবর এমন একটি জায়গা, যা আখিরাতের প্রথম ধাপ। যদি কেউ এখান থেকে মুক্তি পায়, তাহলে পরের ধাপগুলো আরও সহজ হবে। আর যদি এখানেই আটকায়, তবে পরে আরও কঠিন হবে।” (তিরমিজি)

উম্মতের জন্য দু'আ করতে গিয়ে
রাসুল (সা.) তার উম্মতের পাপ-মুক্তির জন্য বহুবার অশ্রু বিসর্জন করেছেন। মিরাজের রাতে তিনি জান্নাত ও জাহান্নাম দেখেছিলেন। জাহান্নামের শাস্তি দেখে তিনি ভয়ে কেঁদে উঠলেন এবং তার উম্মতের মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন।

রাসুল (সা.)-এর অশ্রু ছিল মানবতার জন্য মমত্ববোধের নিদর্শন, আল্লাহর ভয়ে বিনম্রতার প্রতীক এবং উম্মতের প্রতি অগাধ ভালোবাসার প্রতিফলন। তার জীবন থেকে আমরা শিখি, হৃদয়ের কোমলতা এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যই আসল সফলতার চাবিকাঠি।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে রাসুল (সা.)-এর জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন এবং তার অনুসরণ করার ক্ষমতা দিন। আমিন!

রাজু

×