
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি যাতে এই শোকাবহ অবস্থাকে কেউ রাজনৈতিকভাবে অপব্যবহার না করে। যারা নিহত হয়েছেন, আমরা তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।”
তিনি জানান, জামায়াতের আমিরসহ দলের শীর্ষ নেতারা আহতদের খোঁজ নিয়েছেন এবং তাদের সুচিকিৎসার জন্য সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। একই সঙ্গে, এই পরিস্থিতির সুযোগে কেউ অস্থিরতা সৃষ্টি করলে, জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিহত করবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন।
কেয়ারটেকার সরকার গঠনের প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংলাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো নিয়ে প্রাথমিকভাবে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য এসেছে। সেখানে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব এসেছে, যার মধ্যে থাকবে—সরকারপক্ষের দুইজন, বিরোধীদলীয় দুইজন এবং একটি স্বতন্ত্র বা তৃতীয় পক্ষের প্রতিনিধি।
এই কমিটি প্রধান উপদেষ্টার নাম নির্বাচন করবে সরকার, বিরোধী দল এবং তৃতীয় পক্ষের দেওয়া নামের সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে। তবে যদি ঐকমত্য না হয়, তাহলে কোন পক্ষ যেন সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বা ভোটিংয়ের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। হর্স ট্রেডিং বা তৃতীয় পক্ষকে সিদ্ধান্তদাতা করে তোলা যেন না হয়—এ বিষয়েও গুরুত্ব দেন জামায়াতের এই নেতা।
তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি প্রক্রিয়া চাই না, যেখানে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে বিশ্বাসহীনতা তৈরি হয়। বরং সবাই মিলে আলোচনার ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাতে হবে।”
বিএনপি ও জামায়াতের প্রস্তাব অনেকটাই কাছাকাছি বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিশেষ করে পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন এবং অংশগ্রহণকারী পক্ষগুলোর কাছ থেকে নাম প্রস্তাব চাওয়ার বিষয়ে মতামত মিলে গেছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে যেমন নামের সংখ্যা ও নির্বাচনের কৌশলে মতপার্থক্য রয়েছে।
এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান একই ব্যক্তি হওয়া উচিত কি না—সে বিষয়ে দলটির অবস্থান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা একই ব্যক্তি হতে পারেন, তবে তিনি যেন দলীয় প্রধান না থাকেন। এতে করে দলীয় পর্যায়েও গণতন্ত্রের চর্চা হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই রাষ্ট্রে যেমন ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ হয়, তেমনি দলেও যেন বিকেন্দ্রীকরণ হয়। বিএনপির যুক্তিও গ্রহণযোগ্য যে, একজন ব্যক্তির গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব হওয়া উচিত নয়। আমরা চাই—ভালো সমাধান হোক, যদি না হয়, তাহলে তো একটি সিদ্ধান্তে গিয়েই পৌঁছাতে হবে।”
সবশেষে তিনি জানান, আলোচনার কিছু বিষয় এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এ কারণে জামায়াতে ইসলামী কমিশনের কাছে আরও একদিন সময় চেয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা চাই, এমন একটা পথ বের হয় যা সর্বোত্তম এবং জাতির জন্য মঙ্গলজনক হয়।”
সানজানা