
তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পদ্ধতি, নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আজ নিজেদের স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেছে। আজ মঙ্গলবার জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের রাজনৈতিক সংলাপে অংশগ্রহণের পর পররাষ্ট্র সেবা একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
তিনি বলেন, “আজকের বৈঠকের শুরুতেই আমরা গতকাল মাইলস্টোন কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করেছি এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করেছি। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতের বাংলাদেশে এমন দুর্ঘটনা এড়িয়ে গিয়ে নিরাপদ জীবন ও মানবিক রাজনীতির ধারা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।”
তিনি জানান, আজকের বৈঠকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধানের দায়িত্ব; তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পদ্ধতি; এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়া।
প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান একই ব্যক্তি হওয়া নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, একটি ব্যক্তির কাছে সব ধরনের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকা গণতন্ত্রের জন্য হুমকির। তাই আমরা তিনটি ভূমিকায় তিনজন ভিন্ন ব্যক্তি থাকার পক্ষে। তবে বৃহত্তর স্বার্থে আমরা ঐক্যমতে পৌঁছেছি যে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা একই ব্যক্তি হতে পারেন, তবে তিনি দলীয় প্রধান হবেন না।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পদ্ধতি নিয়ে আখতার হোসেন বলেন, “বিচার বিভাগকে বাধ্যতামূলকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অংশ করার আগের সংবিধান সংশোধনীর ফর্মুলা থেকে বেরিয়ে এসে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনার ভিত্তিতে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাবে আমরা একমত পোষণ করেছি।”
এই কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এবং তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে, যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে মনোনয়ন দেবেন।
তিনি আরও বলেন, “আমরা র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিংয়ের মাধ্যমে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রস্তাব দিয়েছি যাতে রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়।”
তৃতীয় আলোচ্য বিষয় হিসেবে আখতার হোসেন বলেন, “জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের মাধ্যমে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ দেওয়ার যে প্রস্তাব ছিল, তা থেকে সরে এসে এখন আলাদা আলাদা কমিটি বা বডির কথা বলা হচ্ছে। তথ্য কমিশন, মানবাধিকার কমিশন এবং অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়কে বাদ দেওয়া হয়েছে—এতে আমাদের উদ্বেগ আছে।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “একটি স্বাধীন এবং একক নিয়োগ বডি গঠনের ধারণা থেকে কেন সরে আসা হলো? এত পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা কি আবার দলীয় নিয়োগভিত্তিক পুরনো পদ্ধতির দিকে ফিরে যাচ্ছি?”
এনসিপি’র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয় কর্তৃত্বমুক্ত, স্বাধীন ও সমন্বিত নিয়োগ পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হবে এবং তা অবশ্যই সংবিধানের আওতাভুক্ত হতে হবে।
“সংবিধানের বাইরে রেখে কোনো নিয়োগ কাঠামো পরিচালনা সম্ভব নয়,” বলেন তিনি।
জাতীয় নাগরিক পার্টি আশাবাদ ব্যক্ত করে যে, সংলাপের ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যৎ বৈঠকগুলোতে এসব বিষয়ে আরও গভীর ও বিস্তারিত আলোচনা হবে।
আফরোজা