
সাভারের হেমায়েতপুরের আলোচিত-সমালোচিত মোশারফ হোসেন মুশা। আওয়ামী লীগের সময় দলটির নেতাকর্মীদের আস্থাভাজন ছিলেন। চাঁদাবাজি, জমি ও ব্যবসা দখল, ফুটপাত দখল, ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, অস্ত্রবাজির নেতৃত্বে দিয়েছেন। ৫ আগস্টের পর ভোল পাল্টে যোগ দেন বিএনপিতে। বাগিয়ে নেন তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপি'র সভাপতির পদ। আগেও তিনি হেমায়েতপুরের চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ করতেন, এখনও করেন। পদ পেয়ে যেন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন তিনি। আর চাঁদা দিতে না চাওয়ায় ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে পায়ে গুলি করাসহ সাভার মডেল থানায় বেশ কিছু অভিযোগ ও মামলা হয়েছে। ইতিপূর্বে গ্রেপ্তারও হয়েছেন তিনি। এছাড়া, ৫ আগস্টের পর বিএনপি'র ছায়াতলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এমন অবস্থায় এই মোশারফ হোসেন মুশার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিল বিএনপি। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলের নীতি, আদর্শ ও সংহতি পরিপন্থী অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাতে বিএনপি মিডিয়া সেলে প্রকাশিত সংশোধনী প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে মোশারফ হোসেন মোশাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলা ও নীতি আদর্শ বিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।
মুশার বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ
মোশারফ হোসেন মুশা ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত আন্তঃজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম রাজীব ও তার ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখর আলম সমরের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওই পদ তিনি বাগিয়ে নেন। এছাড়া, হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সিংগাইর সড়কে থাকা কয়েকশ ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে প্রতিদিন ৩শ থেকে ৫শ টাকা করে তোলা চাঁদা যেত তার পকেটে।
হেমায়েতপুরে খোজ নিয়ে যায়, শেখ হাসিনা ৫ তারিখ দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ৭ তারিখই বিএনপি পরিচয়ে মোশারফ নামেন চাঁদাবাজিতে। দখলে নেয়ার চেষ্টা করেন ডিশ ব্যবসা। তার ভাই তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের বিএনপির সহসভাপতি মেহেদী হাসান। কোথাও নিজেরা উপস্থিত হয়ে, কোথাও দলবল পাঠিয়ে চাঁদা আদায় শুরু করেন। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের উপর চালাতেন নির্যাতন।
থার্টি ফার্স্টের রাতে সাভারের হেমায়েতপুরের পূর্বহাটি ভাংগা ব্রিজ এলাকার ব্যবসায়ী রমজান খানকে চাঁদা আদায়ের উদ্দেশ্যে অপহরণ করে এক মুসা । এসময় ওই ব্যবসায়ীর কাছে থাকা এক লক্ষ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার পর তার ডান পায়ে গুলি করে ফেলে রেখে যায় । ওই ঘটনায় মামলা হলে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করে। কিন্তু তার সেই অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি।
এদিকে হেমায়েতপুর এলাকার ইন্টারনেট ও ডিশলাইনের বেশিরভাগ সংযোগ এখন মোশারফ ও মেহেদীসহ তার ভাইদের দখলে। শুধু ডিশ-ইন্টারনেটই নয়, গার্মেন্টসের ঝুট দখলেও তারা পিছিয়ে নেই। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় বন্ধ থাকা হলমার্ক গ্রুপের দায়িত্বরত লোকজনকে হলমার্ক ছাড়তে নানাভাবে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে মোশারফ-মেহেদীর বিরুদ্ধে। জানা যায়, ওই কারখানা দখলে নিতে চেষ্টা করছেন তারা। এছাড়া, মোশারফ ও মেহেদীর লোকজনের চাঁদাবাজিতে বাধা দেওয়ায় বেধড়ক মারধরের শিকার হয়েছিলেন হেমায়েতপুরে সেন্টমার্টিন পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আরিফ।
এসব ঘটনার পর সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে সাভারজুড়ে। এরপরই দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হলো। এমন খবরে হেমায়েতপুর এলাকার মানুষের মনে স্বস্তি ফিরেছে।
রিফাত