ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

জুলাই আন্দোলন কীভাবে বেগবান হলো? যা জানালেন আখতার

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ২ জুলাই ২০২৫

জুলাই আন্দোলন কীভাবে বেগবান হলো? যা জানালেন আখতার

ছ‌বি: সংগৃহীত

জুলাই আন্দোলন কেবলমাত্র ৩৬ দিনের স্মৃতি নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘ প্রস্তুতির ফল বলে মনে করেন আখতার হোসেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এই আন্দোলনের ভিত তৈরি হয়েছিল বহুদিন আগে, যখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে একতরফা নির্বাচন এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমা হতে শুরু করে।

আখতার জানান, ২০২৪ সালের একতরফা নির্বাচনের পর থেকেই ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় ছাত্ররা ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মানসিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। তিনি বলেন, "আমাদের অনেকেই তখন হতাশ হয়ে প্রশ্ন করত, এই পরিস্থিতি থেকে আমরা আদৌ মুক্তি পাব কি না। আমি বলতাম, হয় শেখ হাসিনার মধ্যে আত্মশুদ্ধির বোধ জাগবে, অথবা প্রাকৃতিক কোনো কারণে তার শাসনের অবসান ঘটবে, কিংবা আমরা বুঝে যাব যে, বুলেটের সামনে খালি বুকেই দাঁড়াতে হবে।"

কিন্তু বাস্তবতা অন্যরকম ছিল। আখতার বলেন, "৩৬ জুলাইয়ের আন্দোলনে আমরা খালি হাতে, বুক চিতিয়ে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছি। আমাদের হাতে ছিল না কোনো অস্ত্র, কেবল কয়েকটি ইটের টুকরো আর বাসের লাঠি। তবু আমরা বিজয় অর্জন করেছি।"

এই আন্দোলনের সূত্রপাত ৫ই জুন হাইকোর্টের দেওয়া একটি রায়ের মধ্য দিয়ে। সেই রায়ে ২০১৮ সালে বাতিল হওয়া কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের নির্দেশনা ছিল। রায়ের দিন বিকেলে ল চেম্বারে কাজ করছিলেন আখতার। খবর পেয়ে তিনি ফেসবুকে লেখেন কোটা ব্যবস্থা নিয়ে, এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং আন্দোলনের ডাক দেন।

সেদিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করা হয়। মিছিলে নাহিদ ইসলাম, আসিফ আহমদসহ আরও অনেকে অংশ নেন। মিছিল শেষে তারা বুয়েটে যান এবং পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেন। আখতার জানান, তিনি আন্দোলনের শুরুতে সামনে থাকেননি। কারণ ছাত্রলীগ ও সরকারের নজরদারির কারণে তিনি টার্গেটেড ছিলেন। তাই পেছন থেকে আন্দোলনকে সংগঠিত করার কাজ করেন।

নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, বাকেরসহ অন্যরা আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন। আন্দোলন যখন ঈদের ছুটিতে কিছুটা স্তিমিত, তখন সিদ্ধান্ত হয় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার। ঈদের ছুটিতে তারা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অনলাইনে চলতে থাকে প্রচারণা।

এই সময় দিনাজপুরে ফেসবুকে কোটা নিয়ে লেখার কারণে একজনকে গ্রেফতার করা হয়, যা আন্দোলনকারীদের ক্ষোভে ফেলে। আন্দোলনকারীরা সরকারকে ৩০ জুনের মধ্যে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনরায় জারি করার আল্টিমেটাম দেন। কিন্তু সরকার বলেছিল, এটি আদালতের নির্দেশ, তারা কিছু করতে পারবে না।

আখতার বলেন, “এই যুক্তিকে আমরা প্রত্যাখ্যান করি। এটা সরকারেরই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল, আদালতের নয়। সরকার শিক্ষার্থীদের প্রতারণা করে এই সিদ্ধান্তকে আদালতের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে।”

২০১৮ সালের আন্দোলনে যারা যুক্ত ছিলেন, তাদের অনেকেই তখন চাকরি প্রার্থী। তখনকার কিছু বিসিএসে কোটা না থাকায় সাধারণ প্রার্থীরা বেশি নিয়োগ পান। ফলে অনেকেই আর কোটা ব্যবস্থায় ফিরতে চাননি। এই বাস্তবতায় ঢাবির সেন্ট্রাল লাইব্রেরিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে নতুন আন্দোলন।

প্রথমে ক্যাম্পাসজুড়ে মিছিল-প্রদক্ষিণ চলতে থাকে, হাজার হাজার শিক্ষার্থী আন্দোলনে যোগ দেন। এভাবেই ধাপে ধাপে আন্দোলন বিস্তার লাভ করে, যা পরে "৩৬ জুলাই আন্দোলন" নামে পরিচিতি পায়।

ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/IPhCKcQ0jg0?si=uwDpdXGgkXlo87VU

এম.কে.

×