
ছবি: সংগৃহীত
আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, “জুলাই এখন আমাদের জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাসে পরিণত হয়েছে। ক্যালেন্ডারে জুলাই যতবার ফিরে আসবে, ততবারই এটি আমাদের স্মৃতিতে নাড়া দেবে, আমাদের অনুপ্রেরণা দেবে এবং আত্মসমালোচনার সুযোগ করে দেবে।”
সম্প্রতি এক আলোচনায় তিনি বলেন, “জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থান আমাদের ইতিহাসের একটি অংশ হয়ে থাকবে। এই আন্দোলনের শক্তি ছিল অধিকারভিত্তিক। এটি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বাধীন আন্দোলন ছিল না, বরং সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা থেকেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।”
তিনি বলেন, “অনেকে প্রশ্ন করেন— এত নির্যাতন, এত দমন-পীড়নের পরও কেন বিএনপি বা জামায়াতের আন্দোলনে গণসম্পৃক্ততা হয়নি? আমরা তখনই বলেছিলাম, আন্দোলন যদি দলীয় রূপ পায়, তাহলে সাধারণ মানুষ সাড়া দেয় না। আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, ছয় মাসের জন্য সব রাজনৈতিক পরিচয় স্থগিত রেখে সবাই মিলে একটি নির্দলীয় গণতান্ত্রিক মঞ্চ গঠন করা হোক। কিন্তু তখন তা গুরুত্ব পায়নি।”
তিনি জানান, “রাজপথে আমরা যখন বলতাম ‘চোর চোর ভোট চোর’, তখন পাশের বাস থেকে লোকেরা সাড়া দিত ‘শেখ হাসিনা ভোটচোর’। কিন্তু যখন দলীয় স্লোগান দিতাম, যেমন ‘এবি পার্টি জিন্দাবাদ’ বা ‘জিয়ার সৈনিক’, তখন আর সাধারণ মানুষ সাড়া দিত না। কারণ, তারা মনে করত আমরা নিজের স্বার্থে আন্দোলন করছি।”
মঞ্জু আরও বলেন, “বিএনপির মিছিলে সবসময়ই শ্লোগান থাকত—‘তারেক রহমানের মুক্তি চাই’ কিংবা ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’। এসব দাবির সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা কম ছিল। অথচ কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন কিংবা আরিয়াল বিলের জমি রক্ষা আন্দোলনের মতো অধিকারভিত্তিক আন্দোলনে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে।”
তিনি বলেন, “জুলাইয়ের আন্দোলনের সময় আমরা দেখেছি, দেশের এমন কোনো ইউনিয়ন নেই, যেখানে আওয়ামী লীগের অফিস আক্রান্ত হয়নি। এমনকি শেখ মুজিবের ছবি পর্যন্ত সরিয়ে ফেলা হয়েছে। প্রথমবারের মতো সাধারণ মানুষ এমন একটি গণঅভ্যুত্থানে সম্পৃক্ত হয়েছিল, যেখানে তারা নিজেদের অধিকার রক্ষায় একত্রিত হয়েছিল।”
তিনি একটি ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, “এক শহীদের স্ত্রী আমাদের একটি অনুষ্ঠানে এসে জানান, তার স্বামী শুধুই গরমে কষ্ট পাওয়া ছেলেমেয়েদের পানি দিতে গিয়েছিলেন। তিনি আন্দোলনের কিছুই বুঝতেন না। কিন্তু তবুও ছাত্রলীগের সদস্যরা তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। এটা প্রমাণ করে— এই আন্দোলন ছিল মানুষের হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে উঠে আসা।”
মঞ্জু বলেন, “এই আন্দোলনের শেষ কথা ছিল— ‘আর না, আমরা এই ফ্যাসিবাদ চাই না’। সাধারণ মানুষ তখন রাজনৈতিক দলের আহ্বানে নয়, বরং নিজেদের অধিকার আদায়ে রাস্তায় নেমেছিল।”
তবে তিনি দুঃখ করে বলেন, “আন্দোলনের সময় যারা ছিল আমাদের আশা, যারা ছিল আমাদের প্রতীক— তারা যখন রাজনৈতিক দলে যোগ দিল, তখনই তাদের গ্রহণযোগ্যতা কমে গেল। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা এখন অনেকটাই কমে গেছে। এটা খুবই চিন্তার বিষয়। কারণ, শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব তো রাজনৈতিক দলের হাতেই আসে।”
তিনি বলেন, “আমাদের এখন আত্মসমালোচনার সময়। রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের সাড়া দিতে হবে। সাধারণ মানুষের স্বার্থে, গণতন্ত্র রক্ষায় দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। জুলাই আমাদের সেই শিক্ষাটাই দিয়েছে।”
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/JsX_tIdOJ8Q?si=RwhuFdOX8IF4jkHV
এম.কে.