ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতবিনিময় সভা

ছাত্র-জনতার হাতেই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:২২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ছাত্র-জনতার হাতেই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান

ছাত্র-জনতার হাতেই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ

শেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও লালমনিরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় তারা দুর্নীতি-চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস নির্মূলের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। খবর নিজস্ব সংবাদদাতাদের।
শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বিকেলে শহরের সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমি মাঠে আয়োজিত ওই মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও ময়মনসিংহ বিভাগের টিম লিডার লুৎফর রহমান। 
এ সময় তিনি ছাত্র-জনতার হাতেই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার পতন হলেও তার প্রেতাত্মারা এখনো নানা জায়গায় বিচরণ করছে। শেখ হাসিনা দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতা ধরে রেখে মানুষকে যেভাবে হয়রানি, নির্যাতন, গুম-খুন করেছে, ঠিক একইভাবে অন্য কোনো ফ্যাসিস্ট যদি ক্ষমতার অপব্যবহার করে একই কাজ করে তা ছাত্র-জনতা মেনে  নেবে না। তাই দেশ পুনর্গঠন, রাষ্ট্র সংস্কার এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্য প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। 

ওই সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আহনাফ সাঈদ খান, কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক সাকিবুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি সোহানুর রহমান সোহাগ ও ইসরাত জাহান সূচনা, সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি সূচনা আফরিন সর্মি ও সুমাইয়া আফরিন, শান্ত মরিয়ম ইউনিভার্সিটির প্রতিনধি রকিবুল ইসলাম আইনী, সরকারি তিতুমীর কলেজের প্রতিনিধি সাখাওত হোসেন ও তৌহিদ সিয়াম।
এর আগে জেলা সমন্বয়কারী দাবিদার জাকিয়া পারভীন জেরীনের নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী তাদের পাশ কাটানোর অভিযোগ তুলে মতবিনিময় সভাস্থলে গিয়ে প্রতিবাদ জানালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এর জবাবে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক লুৎফর রহমান বলেন, বিশৃঙ্খলাকারীরা আওয়ামী লীগের দোসর ও চাঁদাবাজ। এছাড়া তিনি গত নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি কাজ করেছেন। তিনি তাকে সন্ধ্যার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। 
এদিকে সকালে শেরপুরের ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের কবর জিয়ারত, শেরপুর সরকারি কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে শহীদি পরিবার এবং আহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা। পরে দুপুরে জেলা কালেক্টরেট ভবনের তুলসীমালা ট্রেনিং সেন্টার কাম সভাকক্ষে বিভিন্ন  প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারা। 
চুয়াডাঙ্গা ॥ দুর্নীতি-চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস নির্মূলের অঙ্গীকার নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের আয়োজনে চুয়াডাঙ্গায় ছাত্র-জনতার মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বেলা ১১ টায় ‘ছাত্র-জনতার ঐক্য চিরজীবী হোক’ স্লোগানে সাহিদ প্যালেসের সভাকক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ওয়াহিদ উজ্জামান, আকরাম হোসাইন রাজ, আশরেফা খাতুন, আবুবক্কর খান, ফারহানা ফারিনা, মইনুল ইসলাম প্রমুখ।  
আয়োজকরা বলেন, বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। এতদিন দেশ স্বৈরাচারের দখলে ছিল। ছাত্র-জনতা আন্দোলনের মাধ্যমে দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করেছে। এখন নতুন একটি দেশ গড়ার পালা। বাংলাদেশ হবে সব ধরনের বৈষম্যমুক্ত। দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের কোনো স্থান হবে না এ বাংলাদেশে।
তিনি আরও বলেন, আমরা মুক্তভাবে কথা বলছি। এটা সম্ভব হয়েছে মূলত আমাদের যারা বীর শহীদ তাদের ও তাদের পরিবারের এবং যারা আহত হয়ে রক্ত ঝরিয়েছে তাদের ত্যাগের বিনিময়ে। একটি গ্রুপ এসে চাঁদাবাজি করছে। মামলাবাজি করছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নৈরাজ্য করছে। আমাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য এটা ছিল না। আমাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল, ফ্যাসিস্ট সরকার পতন ও সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণ।

এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন বিশেষ অতিথি জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা, পুলিশ সুপার গোলাম মওলা, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শরিফুজ্জামান শরিফ, জেলা জামায়াতের আমির রুহুল আমিন। সভা শেষে বৈষম্যবিরোধী কেন্দ্রীয় সমন্বয়কবৃন্দ ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান।
লালমনিরহাট ॥ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির  সমন্বয়কদের সঙ্গে লালমনিরহাটের  শিক্ষার্থীদের এক  মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বিকেলে জেলা কালেক্টরেট মাঠে ওই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম তারিক, আবু সাইদ দুলাল, সুমন বসুনীয়া, রাসেল আহমেদ, আব্দুল মুনইম, তাসনিম প্রমুখ। বক্তারা বলেন, আমাদের আন্দোলন ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন।

কিন্তু হাসিনা সরকার সেই আন্দোলন দমানোর জন্য পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে ছাত্রদের বুকে গুলি চালিয়ে কেড়ে নিয়েছে তাজা প্রাণ। হাসিনার পদে পদে ভুল ছিল।  তাই সে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভুলের খেসারত দিচ্ছে। তবে তার দুর্নীতিবাজ পেতাত্মারা এখনো অনেকে দেশে আছে। আমরা তাদের যেখানেই পাব ধরে নিয়ে আইনের হাতে তুলে দেব। আমরা চাই প্রশ্ন করার আন্দোলন।  আর যদি কেউ বেনজির বা হারুন হতে চায় আমরা রুখে দেব।

আমরা স্বাধীন বাংলার নাগরিক। আমরা ভারতের কাছে আর মাথা নত করব না। আমরা তাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলব। তারা আরো বলেন, আমরা উত্তরবঙ্গকে আর পিছিয়ে থাকা দেখতে চাই না। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে  সরকারকে সহায়তা করে দেশ এগিয়ে নিয়ে যাব। স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের মধ্যদিয়ে আমাদের যুদ্ধ আংশিক শেষ হয়েছে।

যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। আমাদের টার্গেট দলীয় লেজুড়বৃত্তির উৎখাত করা। আমরা দুর্নীতি ও চাঁদবাজ রুখে দিয়ে বৈষম্যবিরোধী দেশ গড়ে তুলতে চাই। এর আগে কেন্দ্রীয় সমম্বয়কগণ লালমনিরহাট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা এলাকার শহীদ মেরাজুল ইসলাম মেরাজের কবর জিয়ারত করেন।

×