ডা. শফিকুর রহমান
হিংসা, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ নয় বরং ক্ষমা ও সংশোধনের মিশন নিয়ে বিদ্যমান রাজনীতিতে ইতিবাচক ধারা প্রবর্তন করে গণমুখী নতুন ধারার রাজনীতি প্রবর্তনের জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের কলমকে শাণিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
মঙ্গলবার রাজধানীর বিজয় সরণির একটি রেস্তরাঁয় ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। শফিকুর রহমান বলেন, আমরা প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। রাজনৈতিকভাবে আমাদের ওপর যারা জুলুম-নির্যাতন করেছে আমরা তাদের ক্ষমা করে দিলাম। আমরা সংশোধন ও ক্ষমার রাজনীতিতে বিশ্বাসী।
তবে কোনো ভিকটিম বা ভিকটিমের পরিবার যদি আইনের আশ্রয় নেয়, তাহলে আমরা তাদেরও সহযোগিতা করব। দল হিসেবে আমরা কোনো প্রতিশোধ নেব না। আমরা আদর্শ ডেমোক্রেসিতে বিশ্বাসী। আর আদর্শ ডেমোক্রেসির মূলমন্ত্রই হচ্ছে যার যার মতো স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার এবং পরমতের প্রতি সহনশীলতা।
তিনি সাংবাদিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, সাংবাদিক ও রাজনীতিকরাই সমাজ পরিবর্তনে এবং ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় যুগপৎভাবে কাজ করেন। রাজনীতিকরা যেমন রাজপথে গুলিতে মারা যান, সাংবাদিকরাও ঠিক তেমনি। তাই আমাদের পেছনে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই। জাতীয় স্বার্থে এককাতারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
জামায়াত আমির বলেন, আমাদের আর পেছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। তাই জাতীয় স্বার্থেই আমাদের দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতি ঐক্যবদ্ধ হলে পুরো বিশ্বই আমাদের সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত করবে। আর দেশের সকল নাগরিকের অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে হলে গণমাধ্যমকর্মীসহ রাজনীতিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
উদ্দেশ্য হবে গণমানুষের মুক্তি ও কল্যাণ। নিকট অতীতে গণমাধ্যম ও গণমাধ্যম কর্মীদের কলমকে রুদ্ধ করা হয়েছিল। সাময়িকভাবে হলেও সে তালা এখন খুলেছে। এ বিজয় ধরে রাখার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। বীজতলা সুন্দর হলে তা মহীরুহে পরিণত হবে এবং তা এক সময় ছায়া ও ফল দেবে। তিনি অর্জিত বিজয়কে পরিচর্যা করতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমরা আশা করব যারাই রাজনীতি করব, তাদের যেন আল্লাহ রাজকীয় মন দেন। তারা যেন জটিল ও সঙ্কীর্ণমনা না হন। যেন একচোখা না হন। তারা যেন তোষামোদকারীদের পাল্লায় পড়ে জনগণকে ভুলে না যান। তারা যেন জনগণের খাদেম হন, জনগণের মালিক না হন। এই মানসিকতা নিয়ে যেন সবাই রাজনীতিতে এগিয়ে আসেন। গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হচ্ছে, যার যার আদর্শ মেলে ধরবে, জনগণ এখান থেকে পছন্দ করবে। পছন্দ করবে, গ্রহণ করবে। কারও ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
এর আগে গত ২৮ আগস্ট সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় জামায়াতের আমির বলেন, ছাত্র আন্দোলনের ইস্যু পরিবর্তন করার জন্য সরকার আমাদের নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ছাত্র আন্দোলন চাপা দেওয়ার জন্য আমাদের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। তবে আমাদের কোনো রাজনৈতিক দলের ওপর ক্ষোভ নেই; আমরা ক্ষমা করে দিলাম। কিন্তু যেসব ব্যক্তি অপরাধ করেছে, তাদের শাস্তি পেতে হবে।
সেই ‘ক্ষমা’ করার প্রসঙ্গ তুলে আজ জামায়াতের আমির বলেন, অনেকে বলছেন আপনারা মাফ করে দিচ্ছেন কেন। তাহলে তো যারা ক্ষতিগ্রস্ত তারা তাদের পাওনাটা পেল না। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, আপনারা কী চান? আপনারা ধ্বংস চান নাকি সংশোধন চান? যদি ধ্বংস চান তবে তাদের যেখানে ইচ্ছা সেখানে নিয়ে যান। আর যদি তার সংশোধন চান এবং সংশোধিত হাত হিসেবে তিনিও সমাজে কোনো অবদান রাখুন তা চান, তাহলে তাকে সংশোধনের জন্য জায়গা তৈরি করে দিতে হবে, ওই জায়গায় হিংসার কোনো জায়গা নাই।
তিনি বলেন, তবে যদি বড় কোনো সুনির্দিষ্ট অপরাধের কারণে কোনো দল, সংস্থা বা সংগঠনের কোনো কিছু পাওনা হয়, সেটাও সে পাবে, কিন্তু সেটা আইন হাতে তুলে নয়, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হতে হবে। মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম ও প্রচার মিডিয়া সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার প্রমুখ।