ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন

মুক্তি পেলেন খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১৮, ৬ আগস্ট ২০২৪

মুক্তি পেলেন খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের জনবিভাগের উপ-প্রেস সচিব মো. শিপলু জামানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আবু সাঈদ মোল্লা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ- মওকুফপুর্বক মুক্তির বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামতের আলোকে বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট বিভাগের ক্রিমিনাল আপিল নং-১৬৭৬/১৮ (বিশেষ আদালত নং-৫, ঢাকা এর বিশেষ মামলা নং ১৭/২০১৭ থেকে উদ্ভূত) এবং বিশেষ আদালত নং ১৮/২০১৭ এ প্রদত্ত দ-াদেশ মওকুফপূর্বক নির্দেশক্রমে মুক্তি প্রদান করা হলো।  
রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের জনবিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের  বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও বিভিন্ন মামলায় আটকদের মুক্তি দেওয়া শুরু হয়েছে এবং এরই মধ্যে অনেকে মুক্তি পেয়েছেন। এর আগে সোমবার রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ প্রদানকালে রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় আটকসহ সব বন্দিকে মুক্তি দেওয়া  হবে।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে ৭৯ বছর বয়সী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আর্থাইটিস ও ডায়াবেটিস ছাড়াও হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, পরিপাকতন্ত্র ও চোখের রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। এ কারণে কয়েকদিন পর পর তাঁকে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। 
২০২১ সালে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে বেশ কয়েকবার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেন খালেদা জিয়া।

করোনাক্রান্ত হয়ে ওই বছর ১৫ এপ্রিল এক ঘণ্টার জন্য খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে সিটি স্ক্যান করানো হয়। রিপোর্ট ভালো আসায় ওই দিন তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। ২৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট ভালো না আসায় ওই দিনই তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। ৫৪ দিন পর খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় ১৯ জুন।
১১৫ দিন পর দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালে ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়া আবার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর শরীরের একটি অংশের চামড়া ফোসকার মতো (চাকা) হয়েছিল। এ জন্য ২৫ অক্টোবর এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁর বায়োপসি করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৭ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় ফেরেন ওই বছর ৭ নভেম্বর।

এর পর ১৩ নবেম্বর আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ৮১ দিন চিকিৎসা নেন তিনি। তখন হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই তিনি সিসিইউতে ছিলেন। শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি তাঁকে সিসিইউ থেকে কেবিনে নেওয়া হয়। ৮১ দিন হাসপাতালে থাকার পর ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গুলশানের বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া।

২০২২ সালের ৬ এপ্রিল এভারকেয়ার  হাসপাতালে গিয়ে রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা, ইমেজিং, ব্লাড ও ইউরিন টেস্ট, লিভার ফাংশন টেস্ট, কিডনি ফাংশন টেস্ট, হার্টের টেস্টসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করান খালেদা জিয়া। এর পর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা চিকিৎসা ব্যবস্থায় সামান্য পরিবর্তন আনেন। ১০ জুন রাত সোয়া ৩টায় বুকের ব্যথা নিয়ে চতুর্থ দফায় এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি হন খালেদা জিয়া।

১১ জুন এনজিওগ্রামের পর তাঁর হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়লে ওই দিনই একটি ব্লকে রিং পরানো হয়। পরদিন দ্রুত এনজিওগ্রাম করে তাঁর হৃদপিন্ডে তিনটি ব্লক পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি ব্লকে রিং পরানো হয়। রিং পরানোর কয়েকদিন পর তাঁকে কেবিনে নেওয়া হয়। কেবিনে রেখেই নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা চালায় মেডিকেল বোর্ড। এভারকেয়ার হাসপাতালে টানা ১৪ দিন চিকিৎসা শেষে ২৪ জুন গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

এর পর ২২ আগস্ট স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে পরীক্ষা শেষে রাতেই আবার বাসায় ফেরেন তিনি। এর পাঁচদিন পর ২৭ আগস্ট আবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসার পর ৩১ আগস্ট তিনি বাসায় ফেরেন। 
২০২৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষার পর তিনি গুলশানের বাসায় ফিরে যান খালেদা জিয়া। ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আবার এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসা বোর্ডের পরামর্শে ওই দিন রাতেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিবিড় পর্যবেক্ষণে ৬ দিন চিকিৎসার পর ৪ মে আবার তিনি গুলশানের বাসায় চলে যান।

এর পর আবারও ১৩ জুন তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ৫ দিন চিকিৎসা শেষে ১৭ জুন  বাসায় ফেরেন। ৫৩ দিন পর ৯ আগস্ট আবারও চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ওই দিনই হাসপাতালে ভর্তি হন।  পাঁচ মাস দুদিন পর এ বছর ১১ জানুয়ারি তিনি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন। 
এ বছর ৮ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেদিনই তিনি গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন। এর পর ১৩ মার্চ এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। একদিন পর ১৪ মার্চ তিনি বাসায় ফেরেন। ৩০ মার্চ দিবাগত রাত তিনটায় আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা শেষে ২ এপ্রিল বাসায় ফেরেন তিনি। এর পর ১ মে সন্ধ্যায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ২ মে রাতে তিনি বাসায় ফেরেন। 
২১ জুন গভীর রাতে আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ১১ দিন চিকিৎসা শেষে ২ জুলাই সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া। ২৩ জুন তাঁর হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়। সর্বশেষ ৮ জুলাই খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। 
খালেদা বিরুদ্ধে যে মামলা দেওয়া হয় ॥ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিযার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা দেওয়া হয়। তার মধ্যে দুটি মামলায় দ- দেওয়া হয়েছিল। এর বাইরে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও ৩৫টি মামলা দায়ের করা হয়।

×