ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

টকশোতে সমন্বয়ক সিনথিয়া জাহিন আয়েশা

‘মেয়েরা প্রতিবাদ করতে জানে না—এই ধারণা জুলাইয়ে ভেঙে গেছে’

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ৩ জুলাই ২০২৫

‘মেয়েরা প্রতিবাদ করতে জানে না—এই ধারণা জুলাইয়ে ভেঙে গেছে’

ছবি: সংগৃহীত।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীদের সম্মুখভাগের অংশগ্রহণ ও পরে তাদের ওপর চলমান অপপ্রচার নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন সমন্বয়ক সিনথিয়া জাহিন আয়েশা। সম্প্রতি বেসরকারি টেলিভিশনের একটি টকশোতে অংশ নিয়ে উপস্থাপক যখন তাকে প্রশ্ন করেন যে, জুলাই আন্দোলনে নারীরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে তাদের ভূমিকা কম দেখা যাচ্ছে—এবং বরং বিভিন্ন সময়ে তাদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে—এ বিষয়ে তার মতামত কী, তখন সিনথিয়া বলেন:

“২৪শে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আসলে এমন একটা রোল ছিল মেয়েদের। এই সংখ্যায়, এই হারে, এইভাবে মেয়েদেরকে রাস্তায় নেমে আসতে, এই ভূমিকায় আমরা আসলে পূর্ববর্তী কোন সময়ে দেখিনি। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় বিভিন্ন আন্দোলনে ক্রান্তিকালীন সময়ে মেয়েরা তাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে রাজপথে ছিল। কিন্তু এই হারে ছিল না। সবসময় মেয়েদেরকে ভাবা হয়—মেয়েরা প্রতিবাদী কন্ঠ নয়, দুর্বল, প্রতিরোধ করতে জানে না। কিন্তু এই জুলাইয়ে আমরাই সামনের শাড়িতে থেকে আমাদের ভাইদেরকে নিরাপত্তা দিয়েছি, প্রিজন ভ্যানের সামনে দাঁড়িয়ে পুলিশের হাত থেকে ভাইদের রক্ষা করেছি।”

তিনি বলেন, “এরপর আমরা নিজেরাও নিজেদের মাঝে প্রশ্ন করেছি—এখন নারীদের অংশগ্রহণ কম কেন? আমরা দেখেছি, জুলাইয়ে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে, তারা সবাই কোনো না কোনোভাবে টার্গেট হয়েছে। একজন ছেলেকে যে হুমকি পেতে হয়েছে, একজন মেয়েকে সেটির চেয়ে বেশি পেতে হয়েছে—শুধুমাত্র সে মেয়ে বলেই।”

সিনথিয়া আরও বলেন, “মেয়েদের পথটা বরাবরই কষ্টকর। একটা রাস্তা যদি ১ কিলোমিটার হয়, ছেলে-মেয়ে দুজনই হাঁটে, তবু মেয়ের বার্নিংটা বেশি হয়। এই সমাজ নারীর জন্য বন্ধুর। জুলাইয়ের পরে যেসব মেয়েরা মিডিয়াতে ফেস করেছে, নেতৃত্বস্থানীয় অবস্থানে ছিল, তাদের ধরে ধরে টার্গেট করা হয়েছে। অনলাইনে বুলিং, মিম পেজে গালি—সবকিছু সহ্য করতে হচ্ছে। আজকে আপনি যদি এই টকশোটা পাবলিশ করেন, নিচে গিয়ে দেখবেন, কেউ না কেউ লিখবে—‘পতিতালয় থেকে এসেছে’, ‘আবাসিক হোটেলের কর্মী’, এমনসব কথা যা উচ্চারণও করতে পারি না। এই ঘটনা শুধু আমার একার নয়—সব নেতৃস্থানীয় নারীদের ক্ষেত্রেই হয়েছে।”

নারী নেতৃত্বকে সমাজ এখনো মেনে নিতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, “এই সমাজ চায় না মেয়েরা ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় আসুক, প্রতিবাদ করুক, কথা বলুক। তারা অভ্যস্ত না নারীর কণ্ঠ শুনতে। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এক দাম্ভিকতা আছে—এই জায়গা থেকে বের হতে হবে। নারীবান্ধব হতে হবে। নারীর অধিকারের প্রশ্নে শুধু নারীরা নয়, পুরুষদেরও আগে আওয়াজ তুলতে হবে।”

রেলভবনে তার ভিডিও ভাইরাল হওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিনথিয়া বলেন, “হ্যাঁ, আমি রেলভবনে গিয়েছিলাম। সেখানে পটুয়াখালীর রেল সংযোগের একটি বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রকল্প নিয়ে আমি কথা বলতে গিয়েছিলাম। ওই প্রকল্পের আওতায় আমার চাচাতো বোনের বাসাও জমি অধিগ্রহণে পড়েছে। আমি একজন রাজনৈতিকভাবে সচেতন নাগরিক হিসেবে জনগণের সমস্যায় কণ্ঠ দেওয়ার অধিকার রাখি। অনেকেই প্রশ্ন করেছে—তুমি কেন গিয়েছিলে? আমি বলি—আমার কেন নয়? আমি জুলাই আন্দোলনের একজন সৈনিক, সচেতন নাগরিক। তাই রেল প্রকল্প, স্বাস্থ্য সংকট, শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা—এসব বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গিয়ে কথা বলেছি।”

তিনি আরও বলেন, “যারা বলছে আমি ডিসি নিয়োগে গিয়েছিলাম, তারা জানে না রেলের ডিজির একান্ত সচিব কি ডিসি নিয়োগ দিতে পারে? এটা একটা লেইম এক্সকিউজ। যদি কেউ অসৎ উদ্দেশ্যে কোনো কনভারসেশন করত, সে কখনো পাবলিক প্লেসে করত না, যেখানে মানুষজন যাতায়াত করছে।”

সিনথিয়া তার বক্তব্য শেষ করেন এই বলে—“আমরা নেতৃত্ব চাই, নিরাপত্তা চাই না। আমাদের কণ্ঠস্বর শুনতে হবে—এই সমাজকে বদলাতে হবে।”

নুসরাত

×