ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার প্রবেশপথে চেকপোস্ট, তল্লাশি

১০ ডিসেম্বর ঘিরে রাজধানীজুড়ে আতঙ্ক

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০৭, ৯ ডিসেম্বর ২০২২

১০ ডিসেম্বর ঘিরে রাজধানীজুড়ে আতঙ্ক

রাজধানীর গাবতলী চেকপোস্টে দূরপাল্লার যানবাহন ও যাত্রীদের তল্লাশি করছে পুলিশ

বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সড়ক-মহাসড়কে কমে গেছে যানবাহন চলাচল। ঢাকার প্রতিটি প্রবেশমুখে পুলিশি চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। বিভিন্ন সড়কে টহল দিতে দেখা গেছে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। এই পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হয়নি সাধারণ মানুষ।
এ দিকে গাড়িতে কেউ আগুন দিতে আসলে তা প্রতিহত করা ও সব ধরনের আপত্তিকর ঘটনা রুখে দিতে বাস টার্মিনালে অবস্থান নিয়ে রাত-দিন পাহারা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। তবে আন্তঃজেলা ও শহরতলিসহ রাজধানীর সব রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক রাখার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সড়কের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকার প্রবেশরত প্রতিটি বাস-মিনিবাসে যাত্রীদের তল্লাশি করছেন পুলিশ সদস্য। তাই সকাল থেকেই বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের সংখ্যা ছিল কম। আন্তঃজেলা বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও যাত্রীর সংখ্যা ছিল কম। বিভিন্ন স্থানে পুলিশি তল্লাশির কারণে যাত্রী কমে গেছে বলে বাস চালকরা জানান।
রাজধানীর ডেমরা এলাকায় আরিফ নামের এক বাসচালক জনকণ্ঠ’কে বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশের কারণে বিভিন্ন স্থানে র‌্যাব ও পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ঢাকায় আসা প্রতিটি বাসের যাত্রীদের তল্লাশি করা হচ্ছে। এর জন্য মানুষের মধ্যে একটু আতঙ্ক রয়েছে। এ ছাড়া বুধবার নয়াপল্টনে গ-গোলের কারণে আজ (বৃস্পতিবার) ঢাকায় মানুষ কম বের হয়েছে। তাই বাসে তেমন যাত্রী নেই। বেশি খারাপ হলে গাড়ী বন্ধ করে  দেব। তবে মালিক বলছে বাস চালাতে। কিন্তু যাত্রী না পাইলে বাস চলে লাভ কি? আরও লোকসান হবে।’
রাজধানীর কুড়িল এলাকায় বাবু নামের এক যাত্রী জনকণ্ঠ’কে বলেন, ‘রামপুরা যাব। কিন্তু বাস নাই। প্রায় ২০ মিনিট দাঁড়িয়ে আছি। বাসা থেকে রের হওয়ার পর তিনবার পুলিশ ধরছে। বলছি, রামপুরায় এক আত্মীয়র বাসায় যাব। কি করি, বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইছে। পুলিশের এই ঝামেলার কারণে সড়কে মানুষ কম বের হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হয়নি।’
তবে পুলিশ বলছে, ১৫ দিনের জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের কারনে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ হিল কাফি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সাভারের আমিনবাজার ও ধউর এলাকায় দুটি চেকপোস্টে কাজ করছেন পুলিশ সদস্যরা। রাজধানীর বাবুবাজার ও পোস্তগোলা এলাকাতেও এই কার্যক্রম চলছে।’
চেকপোস্ট বসেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড, মৌচাক এলাকায় এবং সোনারগাঁয়ের মেঘনাঘাট টোলপ্লাজা এলাকায় পুলিশের দুটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। রূপগঞ্জের কাঞ্চন সড়কেও চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান জানান, ঢাকায় প্রবেশমুখী মহাসড়কের পাশে পাঁচটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। আরও কয়েকটি বসানোর চেষ্টা চলছে বিভিন্ন থানা এলাকায়। এসব চেকপোস্টে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের খোঁজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা রোধে তল্লাশি করা হচ্ছে।
ঢাকার আশপাশের জেলা নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তল্লাশি করতে দেখা গেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানায়। এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় যেহেতু ১০ লাখ লোকের সমাগম করার কথা শোনা যাচ্ছে সেহেতু গমনকারীদের সঙ্গে অবৈধ কিছু রয়েছে কি না তা দেখা হচ্ছে। এতগুলো লোকের সমাগম হলে দেশের অনেক জেলার লোকজন গাজীপুরের ওপর দিয়েই রাজধানীতে প্রবেশ করবে। সেজন্য অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। আর এ তৎপরতার জন্যই তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
গাড়ী চলাচল স্বাভাবিক রাখার ঘোষণা মালিক সমিতির ॥ আন্তঃজেলা ও শহরতলীসহ রাজধানীর সকল রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক রাখার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। তবে গাড়িতে কেউ আগুন দিতে আসলে তা প্রতিহত করা ও সব ধরনের আপত্তিকর ঘটনা রুখে দিতে বাস টার্মিনালে অবস্থান নিয়ে রাত-দিন পাহারা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর রমনায় পরিবহন মালিক সমিতির কার্যালয়ে এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। সভায় সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল, মহাখালী বাস টার্মিনাল, গুলিস্তান টিবিসি রোড ও ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালের মালিক শ্রমিক নেতাসহ ঢাকার সব পরিবহনের শতাধিক মালিক শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন কোম্পানির বাস মালিকরা বলেন, এর আগে বিএনপি-জামায়াত নেতারা সড়কে জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করেছিল। ওই আন্দোলনে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। সেই ঘটনার রেশ এখনো আমাদের টানতে হয়। আমরা চাইনা পুনরায় সেই ঘটনাগুলো সাধারণ বাস মালিকদের সঙ্গে আবারও ঘটুক। তাই আগামী ১০ তারিখ প্রতিটি বাস টার্মিনালে পাহারা বসাব।

সব ধরনের আপত্তিকর ঘটনা রুখে দেওয়ার ঘোষণা দেন তারা। তবে বাস মালিকরা অভিযোগ করেন, নগরবাসী বর্তমানে আতঙ্কিত। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাসে যাত্রী হচ্ছে না। এত যাত্রী কম থাকলে সারাদিনের বাস চালিয়ে তেলের টাকা উঠে আসবে না। এমন চলতে থাকলে ওই দিন বাস চলাচল বন্ধ থাকলে ভালো হয়।
তবে এই অভিযোগ নাকচ করে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, যাত্রী থাকুক আর না থাকুক, গাড়ি চলবে। যদি গাড়িতে কেউ আগুন দিতে আসলে তা প্রতিহত করা হবে। ১০ তারিখ গাড়ি চলবে। সব বাস টার্মিনালে সবাইকে সতর্ক ও প্রস্তুত থাকতে হবে। অনেক সময় টার্মিনালগুলোতে শ্রমিকরা থাকলেও মালিকরা থাকেন না। সেটি এবার আর হতে দেওয়া যাবে না।

প্রতিটি টার্মিনালে মালিক শ্রমিকের ক্ষমতা থাকতে হবে। প্রয়োজনে আরও লোক জোগাড় করে ওইদিন টার্মিনাল গুলোতে পাহারা দিতে হবে। বাস অন রোড অবশ্যই রাখতে হবে। এছাড়া ১০ তারিখে গাড়ি চলাচল যাতে কোনো প্রকার বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন।
সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, রাতে সব গাড়ি একসঙ্গে রাখা পরামর্শ দিচ্ছি। সেখানে আপনারা রাত-দিন পাহারার ব্যবস্থা করবেন। যাত্রী নাই বলে রাস্তা থেকে গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। আমি আপনাদের ওইদিন গাড়ি সচল রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ ছয় স্থানে চেকপোস্ট ॥ স্টাফ রিপোর্টার নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম থেকে জানান,  ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ৬টি চেকপোস্ট বসিয়ে যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই চলছে পুলিশের এ চেকপোস্ট। দুদিন ধরেই পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। পুলিশ বলছে তল্লাশি চালানো তাদের রুটিন ওয়ার্ক কাজ।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে যাত্রীবাহীবাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি শুরু করে।
নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ ॥ চট্টগ্রামে বিএনপি ও তাদের দোসর নাশকতাকারীদের প্রতিহত করতে নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে তারা বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির কথিত সমাবেশকে কেন্দ্র করে আবারও নাশকতা, অরাজকতা এবং জ্বালাও পোড়াও কর্মকা-ের আলামত সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় আমরা চুপ থাকতে পারি না।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নগরীর ১৫টি থানা, ৪৪টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে এবং ১৩২টি ইউনিটের নেতৃত্বকে নগরবাসীর জানমাল রক্ষায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি ও সতর্কতা অবস্থায় থাকার নির্দেশনা দেন।
টঙ্গী ॥ বিএনপির ঢাকার ১০ তারিখের সমাবেশ ঘিরে টঙ্গীতে পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সতর্ক পাহারা বসিয়েছে টঙ্গীর নেতাকর্মীর। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পাড়া-মহল্লায় সতর্ক থাকতে টঙ্গী বাজার, টঙ্গী কলেজগেটে ঢাকমুখী ঢাকা টঙ্গী গাজীপুর সড়কে পাহারায় বসেছেন টঙ্গী আওয়ামী লীগের একদল নেতাকর্মী। বৃহস্পতিবার টঙ্গীর আশরাফ সেতু টঙ্গী কলেজগেট এলাকায় এ সতর্ক পাহারার আয়োজন করা হয়।
মানিকগঞ্জ ॥ রাজধানী ঢাকার প্রবেশ পথ ঢাকা আরিচা মহাসড়ক, মানিকগঞ্জ-সিংগাইর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়ক  দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীদের তল্লাশি করছে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা। মানিকগঞ্জ-সিংগাইর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের সাভার সীমানাঘেঁষা সিংগাইর উপজেলার ধল্লা সেতু (ভাষাশহীদ রফিক সেতু) এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

×