ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে নির্বাচন করতে হবে: ফখরুল 

নিজস্ব প্রতিনিধি, রাজশাহী 

প্রকাশিত: ১৮:০১, ৩ ডিসেম্বর ২০২২; আপডেট: ১৮:৪৯, ৩ ডিসেম্বর ২০২২

নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে নির্বাচন করতে হবে: ফখরুল 

মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: জনকণ্ঠ।

সংসদ বিলুপ্ত করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে তার আওতায় নির্বাচন করার দাবি জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশ তলানীতে ডুবে গেছে। মেগাপ্রকল্পের নামে চলছে মেগা লুটপাট। সব টাকা নিয়ে যাচ্ছে বিদেশে, বেগমপাড়ায়, সিঙ্গাপুরে।

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে আয়োজিত বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সরকারের সমালোচনা করেন তিনি। 

ফখরুল বলেন, গত ১১ বছরে ১৯ লাখ কোটি টাকা মেগা উন্নয়নের নামে বিদেশে পাচার হয়েছে। দেশের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ করে দিয়েছে। জিনিসপত্র কেনার টাকা নাই।  কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পায়না। তরুণদের হাতে চাকরি নেই। কিন্তু হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের অনেক নেতাকর্মী ও বন্ধু গুম হয়ে গেছে। এটা হলো এই সরকারের চরিত্র। এভাবে তারা বিরোধী মতকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়। কিন্তু ওরা তা পারেনি।

আওয়ামী লীগ এখন আর রাজনৈতিক দল নেই উল্লেখ করে মীর্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এখন তারা লুটেরা দলে পরিণত হয়েছে। কয়েকদিন আগে ২৫ জন কৃষককে ইশ্বরদীতে ক্ষুদ্র ঋণের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়। অথচ, যারা প্রতিনিয়ত ব্যাংক লুটপাট করছে, বিদেশে টাকা পাচার করছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার হয়েছিল যেন জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দিতে পারে। কিন্তু যখন তারা দেখলো জনগণ তাদের পছন্দ করছে না, তখন সেটা বন্ধ করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আমরা কোনো নির্বাচন চাই না।

ফখরুল ইসলাম বলেন, সরকার আইন করেছে ফেইসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপে সমালোচনা করা যাবে না। সমোলোচনা করলে পুলিশ তুলে নিয়ে যাবে। 

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কোন দেশ আছে যেখানে প্রধানমন্ত্রী-মিনিস্টারের সমালোচনা করা যাবে না? তারা (আওয়ামী লীগ) চায়, বন্দুকের নল দিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে।

নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে তিনি বলেন, এই যে আপনারা এত মানুষ এখানে এসেছেন, এতে আওয়ামী লীগ প্রমাদ গুণছে। আগামী ১০ তারিখ ঢাকার সমাবেশকে ওরা ভয় পাচ্ছে। ওদের ঘুম নাই, ঘুম হারাম হয়ে গেছে। ওই দিন নাকি তক্তা উল্টে যাবে, এই ভয়ে আছেন তারা। নিজেদের ওপর ওদের আস্থা নাই। চোরের মন পুলিশ পুলিশ...। কিছু হইলেই শুধু ভয় পায়। এই বুঝি বিএনপি আসলো, এই বুঝি তারেক রহমান আসলো।

ফখরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ এখন দুটো ধুয়ো তুলেছে। এক, দেশে নাকি জঙ্গি আসছে। বিএনপিকে কোনঠাসা করতে হবে যখন, তখন নাকি দেশে জঙ্গিবাদ হচ্ছে। তারা নিজেরাই মানুষ পুড়িয়ে মারে আর বলে বিএনপি নাকি অগ্নিসন্ত্রাস করে। এই হলো আওয়ামী লীগের চরিত্র।

পুলিশকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, পুলিশ ভাইয়েরা, আপনারা কি দেশের সন্তান নন? আপনাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, আমরা জনগণ, দেশের মালিক। আপনারা নন। আপনাদের কাজ মানুষের সেবা করা। তা না করে তারা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আপনাদের কাছে অনুরোধ জনগণের বিরুদ্ধে অন্যায় কিছু করবেন না। জনগণ সব ধরণের অন্যায় প্রতিহত করবে।

তিনি বলেন, আমাদের এই আন্দোলন বিএনপির জন্য নয়, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর জন্য নয়, আমাদের মন্ত্রী-মিনিস্টার বানানোর জন্য নয়। এটা আমাদের অধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলন। আমাদের যে যুবক তরুণরা নতুন ভোটার হলো, তাদের ভোট দেয়ার অধিকার ফেরত আনার আন্দোলন। আমাদের এখন রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমাদের তাই আন্দোলন করতে হবে। এবার আন্দোলন করে হাসিনাকে পদত্যাগ করাতে হবে। তাই সংসদ বিলুপ্ত করে একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে তার আওতায় নির্বাচন করতে হবে।  ‘তারেক রহমান বলেছেন, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আন্দোলনরত সব দল নিয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা হবে।’ তাই আমাদের এখন লক্ষ্য এই সরকারের পতন ঘটানো।

রাজশাহী মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এরশাদ আলী ঈশার সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল মাহমুদ হাসান টুকু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের এমপি হারুন-অর-রশিদ, বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া প্রমুখ।

সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিনু বলেন, রাজশাহীতে লাখ লাখ জনতার এই মহাসমাবেশ, রাজশাহীর এই সমাবেশ বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সমাবেশের উত্তাল ঢেউ ঢাকায় পৌঁছাতে হবে। আজ চাল নেই, তেল নেই, বাচ্চার খাবার দুধ নেই। চেঞ্জ প্রয়োজন। আমাদের সামনে এখন দুইটি পথ, একটি তারেক জিয়ার মতো স্বাধীনতার পতাকা টাঙানো ও অপরটি শাহাদত বরণ।  

সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। এককভাবে তারেক জিয়াকে নির্বাসিত করে খালি মাঠে খেলছে। আজকের গণসমাবেশ সমুদ্রের সমান। সমাবেশের যে চেয়ার দুটি ফাঁকা রাখা হয়েছে সেখানে তারেক জিয়া ও বেগম খালেদা জিয়া থাকলে মহাসমুদ্র হতো। আমাদের নেতা যদি সশরীরে দেশে আসেন, শেখ হাসিনা হাওয়ায় ভেসে যাবেন। আজকে বেগম খালেদা জিয়ার কোনো প্রতিপক্ষ নেই।

বক্তারা বলেন, ‘বিজয়ের মাস চলছে। কিন্তু আমাদের বিজয় হয়নি। অর্থনীতির মুক্তি হয়নি। এই রাষ্ট্রকে ভেঙে চুরমার করা হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হত্যা, লুণ্ঠন, খুন-গুম আর অপপ্রচারকে করে দেশকে ধ্বংস করছে।’

তারা বলেন, ‘বিসিএস উর্ত্তীণ হয়ে চাকরি নিয়ে ডিসি-এসপিরা মেধার কাঁথায় আগুন দিয়েছেন। আপনারা কেনো আওয়ামী লীগের দ্বারস্থ হয়েছেন? আওয়ামী লীগের হয়ে প্রশাসনের ডিসি-এসপিরা যারা অন্যায়ভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা করছেন, ট্রাইবুন্যাল গঠন করে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।’

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় রাজশাহী মাদ্রাসা মাঠে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। সকাল ১১টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল আনুষ্ঠানিকতা। দুপুর দুইটার পর গণসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও সকাল ৯টার পর মাদ্রাসা ময়দান বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এতে অংশ নেন রাজশাহী বিভাগের আট জেলার নেতাকর্মীরা।

জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে দেশের সব বিভাগীয় শহরে সমাবেশের অংশ হিসেবে আজ শনিবার রাজশাহীতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, সিলেট, কুমিল্লার পর আজ শনিবার রাজশাহীতে গণসমাবেশ করল বিএনপি।  

এমএইচ

×