ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

নয়াপল্টনের সমাবেশে ফখরুল

১০ ডিসেম্বর থেকে এক দফার আন্দোলন

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ২২ নভেম্বর ২০২২

১০ ডিসেম্বর থেকে এক দফার আন্দোলন

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

১০ ডিসেম্বর থেকে এক দফার আন্দোলন শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের সোনারামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মো. নয়ন মিয়া হত্যাকা-ের প্রতিবাদে বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।

ফখরুল বলেন, এখনও আসল ঘোষণা দেইনি, আসল ঘোষণা আসবে ১০ ডিসেম্বর। আর সেদিন থেকেই শুরু হবে এক দফার আন্দোলন। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বর নাকি সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। কিন্তু ১০ তারিখ নয়াপল্টনেই সমাবেশ হবে। এটা জনগণের ঘোষণা। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করব।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু প্রমুখ।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে ফার্মগেটের বাসায় গিয়ে সন্ত্রাসী হামলায় আহত বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি রুমানা মাহমুদকে দেখা ও কুশল বিনিময়ের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে গভীর সংকটে ফেলেছে। তিনি বলেন, দেশে এখন একটা ক্রিটিক্যাল মুভমেন্ট চলছে।

দেশে যদি নির্বাচন ঠিক মতো না হয়, নির্বাচনে যদি সঠিকভাবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত না হয়, সে দেশ কিভাবে চলবে? তিনি বলেন, ঢাকায় দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় সরকারের কি অবস্থা তার একটি চিত্র ফুটে উঠেছে। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর সর্বত্র একটা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হয়েছে। আর সিরাজগঞ্জে মূল টার্গেটটা হচ্ছে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও তার স্ত্রী রুমানা মাহমুদ।

যেহেতু ২০০৮ সালে টুকু সাহেব নির্বাচন করতে পারেননি, নির্বাচন করেছেন তার স্ত্রী রুমানা মাহমুদ। সেজন্য আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জিতে এসেছে। তাই এবার যাতে টুকু সাহেব ও তার স্ত্রী নির্বাচন করতে না পারেন সে জন্য প্রতিরোধ ও প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন তারা দুজন।
সাবেক এমপি রুমনা মাহমুদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার চিত্র তুলে ধরে ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিপক্ষকে সহ্য করতে পারে না এবং সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে প্রতিপক্ষকে তারা নির্মূল করতে চায়। ত্রাস সৃষ্টি না করলে তারা দেশ শাসন করতে পারে না- এটা হচ্ছে তাদের পুরনো অভ্যাস। তাই তারা সারাদেশে ত্রাস সৃষ্টি করছে।

১৮ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল রেলস্টেশন বাজার এলাকায় আগামী ৩ ডিসেম্বর বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সম্মেলনের প্রচারে লিফলেট বিতরণের সময় জেলা বিএনপির সভাপতি রুমানা মাহমুদসহ নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায় এবং তার গাড়ি ভাংচুর করে।

ঢাকায় দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ফখরুল বলেন, চারদিকে তাকালে চোরদের চুরি করার ঘটনা, গু-ামি ও মারামারির ঘটনা চোখে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এতো কিছু করছেন, একজন দিনমজুরকে গুলি করে তার নাড়িভুঁড়ি বের করে দিতে পারছেন। আর তাদের সামনে দিয়ে জঙ্গি উধাও হয়ে যায়। তাহলে দেশের মানুষ বুঝতেই পারেন কোন জায়গায় আছেন তারা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশ এখন একটা গভীর সঙ্কটে পড়ে গেছে, একেবারে খাদের কিনারে এসে গেছে। একদিকে অর্থনৈতিক সংকট, আরেক দিকে রাজনৈতিক সংকট। এই সংকট সমাধান না করতে পারলে দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। তাই আমরা এখনও মনে করি, সন্ত্রাস, অত্যাচার-নির্যাতন বাদ দিয়ে সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং দেশে একটা সত্যিকার অর্থে একটা অন্তর্বর্তীকালীন কেয়ারটেকার সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। অন্যথায় কোনোমতেই সমস্যার সমাধান করার সম্ভাবনা আমরা দেখি না।
সরকারকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, পাশের দেশগুলোর দিকে দেখেন। ভারতে কি কম সমস্যা আছে? ভারতে নির্বাচন হচ্ছে, সকলে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। নেপালে একেবারে বিপরীতমুখী রাজনৈতিক দলগুলো, সোশ্যালিস্ট, রিভুল্যুশনারি, লিবারেল ডেমোক্রেসির রাজনীতি করা সবাই নির্বাচনে যাচ্ছে। সেখানে নির্বাচনে যাওয়ার পরিবেশ আছে।

পাকিস্তানের মতো দেশেও সবাই নির্বাচনে যাচ্ছে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর বিশ্বাস আছে, আস্থা আছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমরা সেটা করতে পারিনি। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে আওয়ামী লীগ এই সংকট সৃষ্টি করেছে।
এ সময় সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন রুমানা মাহমুদের স্বামী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহিরউদ্দিন স্বপন ও সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ।
হেফাজতকে মাঠে নামার আহ্বান গয়েশ্বরের ॥ সকলে মিলে দেশকে বর্তমান সরকারের হাত থেকে রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। হেফাজতকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা আপনাদের মতো করে মাঠে নামেন। আমাদের সবাইকে মিলে দেশটাকে রক্ষা করতে হবে। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
গয়েশ্বর রায় বলেন, ১০ তারিখে কি হবে? আওয়ামী লীগ সরকারকে কিভাবে তাড়াব সেটা ১০ তারিখে জানিয়ে দেব। সেদিন বলে দেব কি কি করব। তবে আওয়ামী লীগকে জানিয়েই করব। অজ্ঞাতে কোনো কাজ করব না। জনগণ সরকারের অনুমতির অপেক্ষায় নেই। বিএনপি সমাবেশ করবেই।
সরকারকে উদ্দেশ করে গয়েশ্বর বলেন, ১০ তারিখ সমাবেশ করার অনুমতি দেন না। আবার পুলিশ বলে লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিলে আসতে দেবে না। আপনারা কাঠের বন্দুক থানায় রেখে আসেন। আর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বলছি খালি হাতে আসেন যুদ্ধ করি। আমাদের কি বাঁচার অধিকার নাই? সংবিধানে আমার বাঁচার অধিকার আছে। আমার বাঁচার জন্য আমার তো কিছু করতেই হবে।
আয়াজক সংগঠনের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাবের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাস মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম প্রমুখ।
পুলিশের কাছ থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ন্দেহজনক- রিজভী ॥ পুলিশের কাছ থেকে ঢাকার সিএমএম কোর্টের সামনে থেকে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ন্দেহজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার সকালে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প ও ওষুধ বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।  
ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ডা. আব্দুস সালামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু প্রমুখ।

×