ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণায় অস্বস্তি

কাল সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ছাত্রলীগের শোডাউন

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস

প্রকাশিত: ২৩:৪৯, ১৭ নভেম্বর ২০২২

কাল সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ছাত্রলীগের শোডাউন

সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশস্থলের পাশে চৌহাট্টা এলাকায় বৃহস্পতিবার মিছিল করে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ

আর একদিন পরই সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ। প্রস্তুতিও প্রায় শেষ। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা সিলেটে এসে অবস্থান নিয়েছেন। এদিকে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণায় কিছুটা অস্বস্তিতে দলটির নেতারা। সড়কে অবৈধ সিএনজি-ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা বন্ধের দাবিতে ১৮ ও ১৯ নভেম্বর সুনামগঞ্জ-সিলেট রুটে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সিলেটসহ বিভাগের তিন জেলা- হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার বাস মালিকরা পৃথকভাবে এ ধর্মঘট আহ্বান করেন।

বুধবার রাতে সুনামগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সভাপতি মোজ্জামেল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে সুনামগঞ্জ সড়কে অবৈধ সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছি। সেই দাবিতে আগামী ১৮ ও ১৯ নভেম্বর সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। সিলেট জেলা পরিবহন মালিক সমিতি ১৯ নভেম্বর সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত বাস ধর্মঘটের ডাক দেওয়ার পর সড়কে সব ধরনের গাড়ি না চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় জেলা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

৪ দফা দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে সিলেট জেলা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকারিয়া বলেন ‘আমরা চার দফা দাবিতে ধর্মঘট ডেকেছি। দাবি পূরণ না হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব। দাবিগুলো হচ্ছে- সিলেটের সব পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের অনুমতি প্রদান, সিএনজি চালিত অটোরিক্সার নতুন রেজিস্ট্রেশন প্রদান, সিলেটের লামাকাজী ও শ্যাওলা সেতুতে টোল আদায় বন্ধ, হাইওয়েতে টমটম ও নসিমন বন্ধ করতে হবে।

আবার নতুন সিএনজি চালিত অটোরিক্সার নিবন্ধন না দেওয়াসহ ২ দাবিতে সকাল-সন্ধ্যা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল কবীর পলাশ জানান, দুই দফা দাবিতে এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে নতুন করে সিএনজি চালিত অটোরিক্সার রেজিস্ট্রেশন না দেওয়া এবং অটোরিক্সায় ৩ জনের বেশি যাত্রী পরিবহন না করা ও চালকের আসনের পাশে গ্রিল লাগানো। ১৯ নভেম্বর সমাবেশকে ঘিরে সিলেটজুড়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।

পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে নগরজুড়ে দায়িত্ব পালন করছেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। পুুলিশ সূত্র জানায়, বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সিলেট নগরী ও আশপাশ এলাকায় যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা, মারামারি, সংর্ঘষ, চুরি, ছিনতাই বা জনগণের ক্ষতিসাধন হয় এমন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে লক্ষ্যে নগরজুড়ে রয়েছে পুলিশের নিরাপত্তা বলয়। কোনোস্থানে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বা বিশৃঙ্খলা হলেই পুলিশ দ্রুত যাবে অ্যাকশনে।

তাছাড়া সিলেট নগরীতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে ১৯টি গুরুত্বপূর্ণস্থানে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা বা তল্লাশি চৌকি। নগরীর জনগুরুত্বপূর্ণ এসব মোড়ে কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা যানবাহনকে সন্দেহ হলেই চালানো হবে তল্লাশি। এমনকি কোনো ব্যক্তিকে সন্দেহ হলে সংশ্লিষ্ট আইনে অথবা মেট্রো আইনে গ্রেপ্তার দেখানো হবে এবং পরবর্তীতে অপরাধ অনুযায়ী মামলা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ সূত্র।
এদিকে- বিএনপির সমাবেশস্থল সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের অনুমতি এখনো দেয়নি পুলিশ। তবে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, মাঠ সিলেট সিটি কর্পোরেশনের। তাই সিসিক ও সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টদের লিখিত অনুমতি নেওয়া হয়েছে এবং পুলিশকেও অবহিত করা হয়েছে। তবুও সিলেটের এ গণসমাবেশকে নিয়ে রয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। সমাবেশকে সামনে রেখে সিলেট বিভাগজুড়ে চলছে মিছিল,সভা-সমাবেশ ও প্রচারপত্র বিলি। ঘাম ঝরানো প্রচেষ্টায় রয়েছেন নেতারা। অঙ্গ-সংগঠনের কোনো নেতাই ঘরে বসে নেই।

যে যেভাবে পারছেন গণসমাবেশের প্রচারে অংশ নিয়েছেন। সিলেট বিএনপি’র বিভাগীয় গণসমাবেশের প্রচার ভোটের মাঠ থেকেও বেশি। ১৯ নভেম্বর গণসমাবেশের আগেই চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। সমাবেশস্থলে প্রতিদিন ঢুঁমারা, আয়োজনে শরিক হওয়া, রাতে মাঠে অবস্থান করা নিত্যদিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে। শনিবার সমাবেশের দিন পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন নেতারা।
শোডাউন দিয়েছে ছাত্রলীগ ॥ সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশের একদিন আগে নগরীতে শোডাউন দিয়েছে ছাত্রলীগ। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপির সমাবেশস্থলের পাশে চৌহাট্টা এলাকায় মিছিল করে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ। এর আগে খ- খ- মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা চৌহাট্টা এলাকায় সমবেত হন। আলিয়া মাদ্রাসার পাশ দিয়েও কয়েকটি মিছিল যায়। এসময় আলিয়া মাঠে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এতে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। সংঘাতের আশঙ্কায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের এ সময় দলীয় কর্মীদের মাঠের ভেতরে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার ৪টার দিকে শতাধিক মোটরসাইকেলযোগে স্লোগান দিতে দিতে চৌহাট্টা থেকে ছাত্রলীগের মিছিল জিন্দাবাজার ঘুরে আবার চৌহাট্টায় গিয়ে শেষ হয়। এসময় নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নামে এবং বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। পরে চৌহাট্ট এলাকায় অবস্থান নেন তারা। কাছাকাছি দুইপক্ষের অবস্থানের কারণে চৌহাট্টা এলাকার ব্যবসায়ী ও পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। তবে পুলিশ শক্ত অবস্থানে থাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কিছু সময় চৌহাট্টা পয়েন্টে অবস্থানের পর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের জিন্দাবাজারের দিকে চলে যেতে নির্দেশ দেয় পুলিশ। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিছিলসহকারে জিন্দাবাজার হয়ে বন্দরবাজারের দিকে চলে যান।

×