ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নারকীয় তা-বের চিত্র তুলে ধরলেন জয়

বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতার প্রথম ১০০ দিন

খবর বাসসর

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ৪ অক্টোবর ২০২২

বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতার প্রথম ১০০ দিন

বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতার প্রথম ১০০ দিন

২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম ১০০ দিনের কর্মসূচী ঘোষণা করেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। সেই দিনগুলোতে কী পরিমাণ ভয়াবহ নারকীয়তা ও তা-ব চালানো হয়েছিল সে চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন তিনি। খবর বাসসর।
সজীব ওয়াজেদ জয় লিখেছেন, বিএনপি-জামায়াতকে যারা ভোট দেবে না, তাদের পরিণতি কত কঠিন হতে পারে, তার দৃষ্টান্ত শুরু হয়ে গিয়েছিল মাসখানেক আগে থেকেই। আওয়ামী লীগ এবং সংখ্যালঘু নিধনযজ্ঞ শুরু হয় নির্বাচনের আগে থেকেই। নির্বাচনের দিন দুপুরের পরপরই দেশের ওপর যেন নরক ভেঙ্গে পড়ে। শুরু হয় চারদিকে খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ ভয়াবহ সহিংসতা।
দেশের মানুষ ’৭১ ও ’৭৫-এর পর এমন চরম আতঙ্কজনক পরিস্থিতি চাক্ষুস করেনি। সেই প্রতিশ্রুত ১০০ দিনে বিএনপি-জামায়াত জোট কী করেছিল-তৎকালীন প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলোতে শুধুমাত্র প্রকাশিত সংবাদের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে তরুণ প্রজন্মকে একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে লিখেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়।
তার লিখিত পোস্ট হলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ২০০১-২০০৬ সাল বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কারণে চিহ্নিত হয়ে থাকবে সবসময়। একটি দেশকে ক্ষমতাসীন দল চাইলে কতটা নারকীয় পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে, তার নিদর্শন বিএনপি-জামায়াতের এই শাসনামল। সে সময়কার পরিণত মানসিকতার মানুষ যারা বেঁচে আছেন, সেই শাসনামলের কথা মনে পড়লে আজও তারা শিউরে ওঠেন। ধীরে-সুস্থে নয়, ক্ষমতায় বসার আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল পিশাচদের তা-ব উল্লাস। সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৎকালীন সরকার প্রতিশ্রুতি দেয় ১০০ দিনেই দেশকে সুপথে পরিচালিত করবে বলে। কিন্তু সবই ছিল বাগাড়ম্বর।
গালভরা কথা মনে হলেও দেশবাসী উপায় না দেখে আশায় বুক বেঁধেছিল, এই বুঝি খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, সংখ্যালঘু নিপীড়নসহ সব কিছু বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু না, কিছুই ঘটেনি; জনতাকে দেয়া সেই ১০০ দিনের প্রতিশ্রুতির বেলুন ফুটো হয়ে গেছে। অর্থনীতি, আইনশৃঙ্খলা, রাজনীতি, প্রশাসনসহ সর্বক্ষেত্রেই সরকারের চরম ব্যর্থতা মানুষকে আশাহত করেছে। দেশ নিয়ে উচ্চাশা করতেন যারা, সেই বুদ্ধিজীবীদের মুখে কুলুপ এঁটে দেয়া হলো। কেউ প্রতিবাদ করলে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছিল কালো তালিকায়।
দেশের খনিজ সম্পদ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়ার একটা কমিটমেন্ট দিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। পরবর্তীতে তার প্রমাণ মেলে। কিভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাসক্ষেত্র বিদেশীদের হাতে তুলে দিয়ে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল। জ্বলে-পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যায় রাষ্ট্রের অমূল্য খনিজ গ্যাস। ক্ষতিপূরণ যেন দিতে না হয়, সেজন্য বিএনপি-জামায়াত নেতৃবৃন্দ এবং আমলাদের দেয়া হয়েছিল বিপুল অঙ্কের উপঢৌকন, দেশে-বিদেশে নানা সুবিধা, গাড়ি, ফ্ল্যাট ইত্যাদি। এসব যদিও ১০০ দিনে পরের ঘটনা, তবুও এসব বলার উদ্দেশ্য হলো, সেই সরকার কাদের সহায়তায় ক্ষমতা বসেছিল, তার ধারণা দেয়ার জন্য।
গদিতে বসার পর থেকে বিএনপি-জামায়াত যেভাবে দেশ শাসন করেছিল, মাস পার না হতেই সর্বক্ষেত্রেই দেখা দিয়েছিল বেশ কিছু প্রশ্ন : পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন এমন আনাড়ি হাতে কিভাবে সরকার পরিচালনা করছে? তারা কি আদৌ রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিচালনায় সক্ষম? মাত্র ১০০ দিনেই কি দলটি রাষ্ট্রের বারোটা বাজিয়ে ফেলেছে? এসব প্রশ্ন ছিল খোদ বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীদের মুখেও।

জোটের শুভাকাক্সক্ষীরা পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা এবং পত্রিকার কলামে বুদ্ধিজীবীদের হতাশাভরা বক্তব্য ছিল এমনই- রাষ্ট্রের কোন কিছুই ঠিকঠাক চলছে না, সবকিছুই স্থবির। প্রথমদিন থেকে সর্বক্ষেত্রে তারা ব্লান্ডার (ঘাপলা) করে ফেলেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণœ হচ্ছে। মানবাধিকার পরিস্থিতিতে চরম বিপর্যয় ঘটেছে... ইত্যাদি।
এমনকি বিএনপি-জামায়াত জোটের অনেক সিনিয়র নেতাও সরকারের কর্মকা- নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। এখানে একটি সুনির্দিষ্ট ঘটনা উল্লেখ করা যায়। সংবাদ পাঠক সংসদ নামক একটি অনেক পুরনো সংগঠন কর্তৃক আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আমন্ত্রিত জোট সরকারের নেতৃবৃন্দ দেশজুড়ে মানুষের মাঝের হতাশা এবং সরকারের ব্যর্থতার কথা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। না হয়ে উপায় ছিল না। কারণ, সংবাদ পাঠক সংসদ কর্তৃপক্ষ বিগত ১০০ দিনে দেশজুড়ে ঘটে যাওয়া নারকীয় ঘটনাগুলোর বিস্তারিত তথ্য, সংবাদপত্রে প্রকাশিত ঘটনার বিবরণ জনসম্মুখে তুলে ধরেছিলেন।
সে সময় বিএনপি নেতা ও তৎকালীন পরিবেশমন্ত্রী শাহজাহান সিরাজ আক্ষেপ করে বলেছেন, আমরা এখন নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। জনগণ ইতোমধ্যে হতাশ ও দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কারণ আমাদের অনেক নেতা-কর্মী সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিতে নেমে পড়েছে। কিন্তু তারা গ্রেফতার হচ্ছে না বা তাদের শাস্তি হচ্ছে না। জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর আমীর (রাজাকার) এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, জোট সরকারকে দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করতে হলে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ উপহার দিতে হবে। জনগণের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার আগেই এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে। কারণ, জনগণ কোন বিশেষ ব্যক্তি বা দলকে ক্ষমতাসীন করার জন্য ভোট দেয়নি। জনগণ শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র চায়।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব কাজী ফিরোজ রশিদ বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসে জনগণের আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারছে না। সন্ত্রাস বন্ধ করার পরিবর্তে আরও বেড়েছে। কোন অপরাধীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। জনগণ আর বেশিদিন সময় দেবে না। জনগণ বিএনপির প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি চায় না, তারা কাজ চায়।

ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুর রশিদ মজুমদার বলেছেন, জোট সরকারের ওপর থেকে জনগণের আস্থা দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় জোট সরকারের সাফল্যের সম্ভাবনা তেমন দেখা যাচ্ছে না।
এসব বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, তৎকালীন সময়ে নারকীয় ঘটনা দেশকে এতটাই বিপর্যস্ত করে তুলেছিল যে, ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপিরা সেসব ঘটনা স্বীকার না করে পারেননি। বাধ্য হয়েছিলেন জনগণের সামনে নিজেদের ব্যর্থতা মেনে নিতে।
সেদিন সংবাদ পাঠক সংসদ কর্তৃক একটি তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত সরকারের ১০০ দিনে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে নিহতের সংখ্যা ছিল ১২০০-এর বেশি। ধর্ষণের ঘটনা গড়ে প্রতিদিন ৪টি, খুনের সংখ্যা গড়ে প্রতিদিন ৬ জন। সেই ১০০ দিনে ঘটে যাওয়া কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনার কথাও পোস্টে স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।

×