মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরের পুরনো ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ
জেলার মুক্তারপুরে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ৩৮ পুলিশ সদস্য এবং তিন সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হয়েছেন। আহতদের মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত শাওন (২০) ও জাহাঙ্গীর মাদবর (৩৫) নামের দুই যুবককে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং পুলিশ কনস্টেবল নাজিমকে (২৭) রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজ-উল আবেদীনকে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন মুন্সীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারিকুজ্জামান, সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোজাম্মেল হোসেন, দৈনিক সমকালের মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি কাজী দীপু (৫০), দৈনিক কালবেলার প্রতিনিধি মোহাম্মদ রুবেল (৪০) ও দৈনিক দিনকালের জেলা প্রতিনিধি গুলজাহার হোসেন (৫৫)। ভাংচুর ও অগ্নসিংযোগ করা হয়েছে পুলিশের ৬ মোটরসাইকেলসহ ৯ যানবাহনে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ ২০ জনকে আটক করেছে। শহরের উপকণ্ঠ মুক্তারপুরে বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে এই সংর্ঘষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালের বিএনপির মিছিল থেকে বৃষ্টিরমতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। জবাবে পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ ও পরে টিয়ারশেল এবং শর্টগানের গুলি ছুড়ে।
মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব জানিয়েছেন, এই ঘটনায় এ পর্যন্ত ৮ জনকে পুলিশ আটক করেছে।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি তারিকুজ্জামান জানান, বিএনপি গোপনে মুক্তারপুরের মাল্টিপারপাস হিমাগারে বিএনপি কর্মী সমাবেশ ডাক দেয়। কিন্তু কোন অনুমতি ছাড়াই তারা এই কর্মসূচীর ডাক দেয়। পরে তারা হিমাগারে না থেকে মিছিল নিয়ে মুক্তারপুর পুরাতন ফেরিঘাট চত্বরে সমবেত হতে থাকে। এ সময় তারা ট্রাক আড়াআড়ি করে রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে মঞ্চ তৈরি করে। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে তারা পুলিশের ওপর আকস্মিক হামলা চালায়।
অন্যদিকে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বিএনপির আহ্বায়ক এবং সমাবেশটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘পুলিশ মিছিলের ব্যানার নিয়ে টানাটানির কারণেই মারামারি ঘটনাটি ঘটেছে। না হলে মিছিলকারীরা মিছিল নিয়ে চলে যেতে, পুলিশের মতো পুলিশ থাকত। তাহলে আর এমন ঘটনা ঘটত না। তিনি দাবি করেন, এই ঘটনায় বিএনপির প্রায় ১শ’ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এর মধ্যে দুই বিএনপি কর্মী শাওন ও জাহাঙ্গীরের অবস্থা গুরুতর। তাদের ঢাকায় চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। অন্য আহতদেরও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি দাবি করেন পুলিশ এ পর্যন্ত ২০ নেতাকর্মীকে এই ঘটনার পর আটক করেছে। তিনি বলেন, এই কর্মসূচীতে দুইজন কেন্দ্রীয় নেতা আসেন। তারা সমাবেশ করতে না পেরে ঢাকায় ফিরে গেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক কাজী দিপু বলেন, মুহূর্তে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ এক পর্যায়ে পিছু হটলেও বিএনপির মিছিলকারীও নিবৃত না থেকে তারাও আরও বেশি বেগে তেড়ে আসে, বেকায়দায় পড়ে যায় পুলিশ। বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল এসে পড়ে পুলিশের ওপর। ঘণ্টাধিকাল ধরে চলে এই সংঘর্ষ, তবে প্রায় ৩৫ মিনিট ছিল অসহায় অবস্থায়। তিন দিকের রাস্তা থেকে মিছিল নিয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায় মুক্তারপুর পুরনো ফেরিঘাট এলাকায়।
বিক্রিমপুর মাল্টিপারপাস দিক থেকে মালিপাথর সড়ক, নয়াগাঁও সড়ক এবং পেট্রোল পাম্প সড়ক এই তিন সড়ক থেকে এক যোগে চলে শতশত নেতাকর্মী ইটপাটকেল ছুড়ে। অনেকে দোকানপাটের পেছনে ধলেশ্বরীর নদীর তীরে নেমে বা ধলেশ্বরীতে ঝাঁপ দিয়েও রক্ষা পায়নি পুরনো ফেরিঘাটের ঢালে নেমে সেখানেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে মিছিলকারীরা। পরে আরও অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
রক্তাক্ত অবস্থায় এত আহত পুলিশে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ঠাঁই দেয়া যাচ্ছিল না। তাৎক্ষণিক অতিরিক্ত চিকিৎসক ও নার্স তলব করা হয়। জরুরী বিভাগের বাইরেও চিকিৎসা দেয়া হয়। এই সময় আহত অনেক পুলিশ সদস্য ব্যথায় কাতরাতে থাকেন। আহতদের মধ্যে নারী পুলিশ সদস্যরাও ছিলেন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। বেশিরভাগ পুলিশই আহত হয়েছেন ইটের আঘাতে।
এদিকে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে এসে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে বিএনপি পুলিশের ওপর এই মামলা চালিয়েছে। আগে থেকেই ব্যাগে করে ইটের টুকরা সঙ্গে রেখে এভাবে আক্রমণ চালায়।