
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে এক সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে চায় বিএনপি। আর আন্দোলনের পর নির্বাচন করে বিজয়ী হলে জাতীয় সরকার গঠনের আশ্বাসও দিচ্ছে সমমনা দলগুলোকে। বুধবার দুপুরে গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে সংলাপকালে এমন আশ্বাস দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমমনা দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের ধারাবাহিকতায় গণঅধিকার পরিষদের পল্টন কার্যালয়ে গিয়ে ওই দলের নেতাদের সঙ্গে বিএনপির ৩ সদস্যের প্রতিনিধি সংলাপ করে।
সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকার অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে আমাদের যে অর্জনগুলো ছিল বিশেষ করে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচারের ও বাকস্বাধীনতা ধ্বংস করেছে। এ কারণে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটা আন্দোলনের জন্য আমরা একমত হয়েছি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশ নেব না। আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হবে।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবি করে ফখরুল বলেন, পদত্যাগের পর সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে একটা নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এরপর একটা শক্তিশালী নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সবার মতামতের ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করে যোগ্য পার্লামেন্ট গঠন ও সরকার গঠন করা হবে। সরকার গঠনের পরেই সবাইকে নিয়ে একটা জাতীয় সরকার গঠন করব। আমরা মনেকরি, দেশে নির্বাচন ও সরকার গঠনে একটা পরিবর্তন হওয়া দরকার।
এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, সরকার সরাতে গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বিএনপির ঐকমত্য হয়েছে। তারা বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করবে। বর্তমান সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে জয়ী হলে সকলকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে রাষ্ট্র মেরামতের জন্য। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করে সন্তুষ্ট হয়েছি।
তারা আমাদের সঙ্গে প্রায় সব বিষয়েই একমত পোষণ করেন। বিশেষ করে এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন নয় আমরা এই বিষয় একমত হয়েছি। আলোচনা হয়েছে এই সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া যাবে না।
সংলাপ শেষে গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নূর বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমাদের খুব একটা পার্থক্য নেই। আমরা বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করেছি। আলোচনায় ১০টা বিষয় উঠে এসেছে। ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকারকে যুগপৎ আন্দোলনে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা হবে।
এ বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একমত। এ ছাড়াও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, ইভিএম বাতিল করে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোটগ্রহণ, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য, বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন, সভা-সমাবেশ করার অধিকারসহ নাগরিকদের সংবিধান স্বীকৃত সব অধিকার প্রতিষ্ঠা, খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দীদের মুক্তি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল, অর্থ পাচাররোধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন, বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের বিচার ও জাতীয় স্বার্থে ঐক্য প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন। আর গণঅধিকার পরিষদের পক্ষে ছিলেন দলটির আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া ও সদস্য সচিব নুরুল হক নূরসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।