
দেশের উন্নতি অগ্রগতির পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পারিবারিক সহিংসতা। যা ঘরোয়া ব্যাপার বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিনিয়ত নীরব ব্যাধির মতো দংশন করে চলছে।পরিবারে শিশু ও নারীদের উপর সহিংসতার প্রভাব বেশী। পারিবারিক সহিংসতা বলতে পরিবারের সদস্য দ্বারা শারীরিক, মানসিক বা অর্থনৈতিক নির্যাতন করাকে বুঝায়।পারিবারিক সহিংসতা চার দেয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, ফলে যে সহিংসতার স্বীকার হয় সে লোকলজ্জার ভয়ে, সমাজ কী বলবে? হুমকির মাধ্যমে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়। এ সহিংসতা বাইরের জগৎ থেকে আড়ালে থাকে।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা পারিবারিক সহিংসতার অন্যতম কারণ, নারী ও শিশুর প্রতি অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ সহিংসতার কারণ। এছাড়া দারিদ্র্য, অশিক্ষা, বৈবাহিক সম্পর্কে টানাপোড়ন, অতিরিক্ত চাহিদা, যৌতুকলোভী, নারী সমাজকে অবজ্ঞার চোখে দেখা, যৌতুক না দিলে নির্যাতন, অতিরিক্ত কাজের চাপ দায়িত্বের কারণে মানসিক চাপ সৃষ্টি হলে পরবর্তীতে সহিংসতার রূপ নেয়। কুসংস্কার, মাদকাসক্তি, আইনের দূর্বলতা, দায়িত্বহীনতা, পুরুষের আর্থিক ও সামাজিক দূর্বলতার কারণে অবজ্ঞা করা সহিংসতার রূপ নেয়।
একটি সুস্থ সরল শিশু ও সহিংসতার কারণে মানসিক ভারসাম্য ও বিকারগ্রস্থ হতে পারে। বাল্যবিবাহ, যৌতুক, নারী নির্যাতনের মতো বিষয়গুলো পারিবারিক সহিংসতার সাথে যুক্ত। তবে, পরিবারের গন্ডির মধ্যে নারী ও শিশুকে সহিংসতা থেকে সুরক্ষার জন্য ১লা নভেম্বর ২০১০ থেকে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন কার্যকর করা হয়েছে। যার আওতায় নারী ও শিশু পরিবারের সহিংসতা থেকে সুরক্ষিত থাকবে।
পারিবারিক সহিংসতা ( প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০ এর ৩য় ধারা অনুযায়ী পারিবারিক সহিংসতা বলতে শুধু স্বামী কতৃক নির্যাতিত হওয়া নয়, পরিবারের যেকোনো সদস্য দ্বারা নির্যাতিত হলেই এ আইন প্রযোজ্য। পরিবারের কোনো সম্পর্ক সহিংসতার রূপ নিলে পরিবারের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে, লুকিয়ে রেখে নীরবে মেনে নেওয়া যাবেনা। কারণ এটি ধীরে ধীরে মানসিক বিপর্যয় ঘটায়। অনেক সময় মৃত্যুর দিকে পযর্ন্ত ঠেলে দেয়।
নারীদের আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করার করার জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে। আমাদের মনোভাব ও পারিবারিক কাঠামোগত পরিবর্তনে সহিংসতা প্রতিরোধ করা না গেলে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
পারিবারিক সহিংসতাকে নীরব ব্যাধি থেকে মুক্ত করার জন্য আমাদের ব্যাপক হারে প্রচার প্রচারণা চালানোর মাধ্যমে জনসচেতনা বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া শহর থেকে তৃণমূল পযর্ন্ত আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। সর্বোপরি পরিবার ও সমাজ থেকে পরিবারের সহিংসতা উপড়ে ফেলতে হবে।
আফরোজা