ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সংস্কৃতির সংরক্ষণ

প্রকাশিত: ১৮:২১, ২১ মে ২০২৫

সংস্কৃতির সংরক্ষণ

জাতীয় জাদুঘর দিবসে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা যায় যে, বাংলাদেশে জাদুঘরের প্রতি আকর্ষণ হারাচ্ছে দর্শনার্থীরা। অথচ একটি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক নিদর্শন, প্রত্নসম্পদ ইত্যাদি অমূল্য সম্পদ সংরক্ষণে অন্যতম স্থান হচ্ছে জাদুঘর। মানুষের তার দেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানার কৌতূহল দুর্নিবার, বিশেষ করে তরুণ ও শিক্ষার্থীদের। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশে এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। এর অন্যতম কারণ, সংশ্লিষ্ট সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সহ জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষের অবহেলা, যথাযথ ঐতিহাসিক পণ্ডিত ব্যক্তির অভাব, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল, তদুপরি প্রত্নসম্পদ ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণে চূড়ান্ত অযত্ন ও অবহেলা, সর্বোপরি যথেষ্ট প্রচার-প্রচারণার ঘাটতি।
এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো রাজধানীর সন্নিকটে ফরিদপুর শহরের অম্বিকাপুরে জসীমউদ্্দীন জাদুঘর ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। পল্লীকবি জসীমউদ্্দীনকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার অবকাশ রাখে না। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন আবহমান গ্রামবাংলার সমুজ্জ্বল প্রতিনিধি, যিনি সর্বাধিক জনপ্রিয় কবর, আসমানিসহ নক্সীকাঁথার মাঠ, সোজনবাদিয়ার ঘাট গীতিনাট্যসহ অগণিত অমূল্য কবিতার লেখক। উত্তর আধুনিক কবিতার প্রেক্ষাপটেও এসব কবিতার আবেদন চিরন্তন চিরঅম্লান। পল্লীকবি জসীমউদ্্দীনের নামে তাঁর পুণ্যস্মৃতি বিজড়িত নানা নিদর্শনের সুরক্ষায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় জাদুঘরের একটি শাখা কবির গ্রামের বাড়ি অম্বিকাপুরসংলগ্ন স্থানে প্রতিষ্ঠা করা হয় পল্লীকবি জসীমউদ্্দীন জাদুঘর ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নামে। চার একর জমির ওপর নির্মিত জাদুঘর ও সংস্কৃতি কেন্দ্রটি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখভাল করার জন্য নয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন, যাদের চারজন স্থায়ী এবং বাকিরা মাস্টাররোলে কর্মরত। এছাড়াও নিরাপত্তা রক্ষায় রয়েছেন ছয়জন আনসার সদস্য। কিন্তু বর্তমানে অযত্ন অবহেলায় ধুঁকছে পল্লীকবির স্মৃতিরক্ষার্থে নির্মিত জাদুঘরটি। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের অর্থায়নে পরিচালিত হলেও সর্বত্র অযত্ন অবহেলার ছাপ। গ্যালারিতে প্রদর্শিত ১৬০টি নিদর্শন যেমন- কবির ব্যবহৃত খাট, বিছানা, টেলিফোন, নক্সীকাঁথা, কবিতা ও সাহিত্যের অমূল্য পাণ্ডুলিপিগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে যেনতেনভাবে। জসীমউদ্্দীন রচিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য পাশেই একটি উন্মুক্ত মঞ্চ থাকলেও বছরে আদৌ কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় না। ফলে, দিন দিন জৌলুস হারাচ্ছে জাদুঘর ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি। দর্শনার্থীরাও ২০ টাকা দিয়ে প্রবেশ করে তেমন কিছু দেখতে না পাওয়ায় হতাশ হয়ে ফিরে যান। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আগ্রহ ও প্রচারেরও যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। এমতাবস্থায় নানা সমস্যায় জর্জরিত জাদুঘরটি অচিরেই সংস্কার, আধুনিক ও সচল করার দাবি জানিয়েছেন আগত দর্শনার্থী ও স্থানীয় জনসাধারণ। মনে রাখতে হবে, জাতীয় এসব অমূল্য সম্পদের সুরক্ষা করতে হবে যে কোনো মূল্যে।

প্যানেল

×