
আড়াইশ’ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশে এই প্রথম অনুষ্ঠিত হয়েছে সিভিল সার্জন সম্মেলন, অনেকটা জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনের আদলে। দুইদিনব্যাপী সম্মেলনে প্রায় সব জেলার সিভিল সার্জনরা অংশগ্রহণ করেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন যে, আগের আমলের মানসিকতা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে বেরিয়ে আসতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, আমরা একটি গুহা থেকে বেরিয়ে এসেছি। তিনি বলেন, ‘যেভাবে আছে ওভাবেই, এই পরিস্থিতির মধ্যেই সব অভাব ও ঘাটতির মধ্যেই আমরা এর চেয়ে ভালো করব। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি স্বাস্থ্যসেবার ২৫ শতাংশ ভালো হয়ে যাবে। যদি একটু চিন্তা করি আমরা এর চেয়ে ভালো হব’। পরিবর্তনের সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য সিভিল সার্জনদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা স্বাস্থ্যহীন হয়ে গেছে। এর জন্য দোষারোপ করলে তো আর স্বাস্থ্যহীনতা দূর হবে না। বরং এর প্রতিকার করতে হবে। যাতে করে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যায়। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি কমানো এবং বন্ধ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সম্মেলনের কার্য অধিবেশনগুলো অনুষ্ঠিত হয় হোটেল ইন্টারকনের পাশে শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে। সিভিল সার্জনদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে নিজেদের কিছু সমস্যা, দাবি ও প্রস্তাব তুলে ধরেন ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন মো. জিল্লুর রহমান।
দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা অবৈধ ক্লিনিক, হাসপাতাল, ল্যাব ও ভুয়া চিকিৎসক, দালালচক্র ও ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে সিভিল সার্জনদের সীমিত আকারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা-এসব দাবির অন্যতম। এছাড়াও দেশের প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে নিরাপত্তার অভাবে স্বাস্থ্যকর্মী এমনকি ডাক্তার নার্সরাও প্রায়ই হুমকি ও হামলার সম্মখীন হন। বিভিন্ন হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। ওষুধপত্র ও সরঞ্জাম চুরির বিষয়টিও অস্বীকার করা যায় না। সে অবস্থায় বিশেষ করে সব সরকারি হাসপাতালের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আনসার বা স্বাস্থ্য পুলিশ গঠন ও মোতায়েন করা যেতে পারে। সিভিল সার্জনদের এসব দাবির যৌক্তিকতা অস্বীকার করা যায় না। এর পাশাপাশি দক্ষ যোগ্য ও সৎ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণের উদ্যোগও গ্রহণ করা যেতে পারে। তদুপরি স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বাড়ানোসহ লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়া বাঞ্ছনীয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহির প্রকট অভাব রয়েছে। এসব দূর না হলে যতই চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ দেওয়া হোক না কেন কাক্সিক্ষত সাফল্য পাওয়া যাবে না।’ দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ৭ হাজার সুপারনিউমারি পদ সৃষ্টি এবং নতুন তিন হাজার চিকিৎসক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে বলা যায় যে, এই সম্মেলনের মাধ্যমে স্বাস্থসেবার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে বলেই প্রত্যাশা।
প্যানেল