
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী পরিস্থিতিতে মবস ন্ত্রাস ও বিবিধ অপরাধ দমনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তেমন সফলতার পরিচয় দিতে পারেনি। সারাদেশে যে নৈরাজ্য এবং অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছে প্রশাসন সেটা দমাতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। গত আট মাসে আমরা লক্ষ্য করতে পারি সব থেকে বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে আমাদের রাজধানী শহর ঢাকাতে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে তার মধ্যে বনশ্রীতে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে স্বর্ণ লুটে নেয়া হয়। এছাড়া চলন্ত বাইকে বসে ছিনতাইকারীরা পথচারীদের থেকে ছিনতাই করে। কেউ কেউ আবার শয়তানের নিঃশ্বাস নামে এক ধরনের ড্রাগ দিয়ে ছিনতাইয়ের অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করে। পুলিশ জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিলেও দেখা যায় গ্রেপ্তারের পর ছিনতাইকারীরা আবার ছাড়াও পায়। তাই জনগণ যখন ছিনতাইকারীদের ধরতে সমর্থ হয় তখন নিজেরাই হয়তো বাধ্য হয়ে নিজের হাতে আইন তুলে নেয়। যদিও এটা অনুচিত।
আমরা সংবাদমাধ্যম বা গণমাধ্যমে দেখতে পাইছে ছিনতাইকারীদের পিটিয়ে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, নয়তো গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। এসব ছিনতাইকারীর মধ্যে কেউ পেশাদার আবার কেউ নামি-দামি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এরই মধ্যে গত ২৬ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায় সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় নীল রঙের শাড়ি পরিহিতা একজন নারীকে যার হাতে একটি ব্যাগ ও ট্রলি ছিল সঙ্গে। মুহূর্তের মধ্যে সামনে আসা প্রাইভেট কার থেকে একটা হাত এসে নারীটির দিকে বাড়িয়ে দেয়। তার ব্যাগসহ তাকে ধরে টেনে হিঁচড়ে চলন্ত গাড়ির সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় কয়েকজনকে। ভিডিওটি ছড়িয়ে যাবার পর জনমনে আবারও ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে। পরে সংবাদমাধ্যমে জানা গেছে তিনি বেঁচে আছেন। কিন্তু এই ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে।
শুধু রাজধানী নয় দেশের প্রতিটি বিভাগেই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ছিনতাইয়ের ঘটনা যত ঘটছে তত অপরাধী শাস্তি পাচ্ছে না। কারণ মামলায় ছিনতাইয়ে ঘটনাকে ‘হারানোর ঘটনা’ উল্লেখ করা হয় বলে ছিনতাইকারীরা সহজে মুক্তি পেয়ে যায়। আইনি এসব কার্যক্রম পরিবর্তন করা উচিত। খুলনায় এক অটোচালকের অটো ছিনতাই করে খুন করা হয়েছে। প্রকাশ্যে দিবালোকে এলোপাতাড়ি ছুরি বসানো হচ্ছে। প্রশাসনের কাছে এর জবাবদিহিতা চাইলে তারা অজুহাত দেখান। কিন্তু আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পাই অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে আবারও পুনরায় অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।
ছিনতাই থেকে রক্ষা পেতে হলে দামি গহনা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। একা চলাচল করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া দেশের প্রতিটি স্পটে দায়িত্বরত পুলিশ রাখতে হবে এবং সংবিধানে আইনের কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি যেন সহজে কোনো ছিনতাইকারী মুক্ত না হতে পারে এবং এদের কঠোর শাস্তিরও বিধান করা জরুরি বলে মনে করি। দেশ ও জনগণের শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য সকলের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন এবং আইনের একান্ত সহযোগিতা কাম্য। জনতার প্রত্যাশা ছিনতাইসহ সব অপরাধ দমনে চলুক জোরদার অভিযান।
সরকারি বি এল কলেজ, খুলনা
প্যানেল