ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

এক অন্ধকার অধ্যায়

আব্দুর রাব্বি হাসান ওয়ালিদ

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ৭ মে ২০২৫

এক অন্ধকার অধ্যায়

ছবি সংগ্রহীত

আধুনিক নগরজীবনের এক অন্ধকার অধ্যায়ের নাম ‘ছিনতাই’। শহরের ব্যস্ত রাস্তাঘাটে, যানজটে কিংবা অন্ধকার গলিতে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো মানুষ ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরের মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোতে এই অপরাধ প্রায় মহামারির রূপ নিয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, শুধু রাজধানীতেই প্রতি মাসে গড়ে ২০০টির বেশি ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ। অধিকাংশ ভুক্তভোগী সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা ও পুলিশের জটিলতা এড়াতে মামলা করতে চান না। ফলে এ অপরাধ ছায়ার আড়ালে থেকেও দিনে দিনে বিস্তৃত হচ্ছে।
ছিনতাইয়ের ধরনেও এসেছে বৈচিত্র্য। কখনো তারা পথচারীর গলা থেকে চেইন ছিনিয়ে নেয়, কখনো চলন্ত বাসে উঠে মোবাইল বা মানিব্যাগ নিয়ে পালায়, আবার অনেক সময় মোটরসাইকেলে এসে হঠাৎ আক্রমণ করে দ্রুত পালিয়ে যায়। এমনকি অ্যাপ-ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবার ছদ্মবেশেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়, এই অপরাধে প্রাণহানিও ঘটছে অহরহ।
বিশ্লেষকদের মতে, বেকারত্ব, মাদকাসক্তি, পারিবারিক অবহেলা ও দ্রুত অর্থ উপার্জনের লোভ ছিনতাইয়ের মূল কারণ। অপরদিকে অপরাধ দমনে পুলিশের সীমিত সক্ষমতা, প্রযুক্তির অপব্যবহার এবং আইনের দুর্বল প্রয়োগ পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে।
এই সমস্যা সমাধানে চাই সমন্বিত উদ্যোগ। সিসিটিভি ক্যামেরা ও আধুনিক নজরদারি বাড়ানো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা উন্নয়ন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি ছিনতাইকারীদের চিহ্নিত করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করতে হবে। স্কুল-কলেজ পর্যায়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি, যুবকদের কর্মসংস্থান এবং মাদক নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
জনসচেতনতা বৃদ্ধি না হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা এককভাবে সফল হবে না। নাগরিকদেরও চলাফেরায় সতর্কতা ও সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। নিরাপত্তা কেবল পুলিশের দায়িত্ব নয়Ñ এটি আমাদের সবার।
ছিনতাইকারীদের সামাজিক ও মানসিক প্রেক্ষাপট বুঝে অপরাধের মূল উৎপাটন করাই হবে টেকসই সমাধান। একসঙ্গে কাজ করলেই গড়ে উঠবে নিরাপদ, মানবিক ও অপরাধমুক্ত সমাজ।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে

প্যানেল

×