ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

কিছু গণমাধ্যম হাসিনার পালিয়ে যাওয়াকে লেখে ’ক্ষমতা ছেড়ে চলে গেলেন’ :আশরাফ কায়সার

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ৮ মে ২০২৫; আপডেট: ১০:২৪, ৮ মে ২০২৫

কিছু গণমাধ্যম হাসিনার পালিয়ে যাওয়াকে লেখে ’ক্ষমতা ছেড়ে চলে গেলেন’ :আশরাফ কায়সার

ছবি : সংগৃহীত

সাম্প্রতিক এক টেলিভিশন টকশোতে বিশিষ্ট সাংবাদিক আশরাফ কায়সার বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যমের একটি ক্যামোফ্লেজড বা ছদ্মবেশী চেহারা প্রকাশ পাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, যারা বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সঠিক শব্দ ব্যবহার করছেন না, তারা নিজেরাই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে ফেলছেন।

 

 

তিনি বলেন, “যারা শেখ হাসিনার বিদায়কে ‘পলায়ন’ বলেন না, তার বদলে ‘ক্ষমতা ছেড়ে চলে গেলেন’—এইরকম শব্দ ব্যবহার করেন, তারা আসলে ঘটনাটিকে গণঅভ্যুত্থান বা বিপ্লব বলতে চান না। তারা ‘পট পরিবর্তন’ শব্দ ব্যবহার করে আসল ঘটনাকে আড়াল করতে চান।”

আশরাফ কায়সার আরও বলেন, শব্দচয়ন থেকেই বোঝা যায় কার অবস্থান কোথায়। অনেকেই নিজেদের সুশীল ভেবেছেন, অথচ বারবার বড় রাজনৈতিক শক্তিকে বিষোদগার করেছেন, অপপ্রচার চালিয়েছেন। কারও কারও অবস্থান ছিল একেবারে হাসিনাপন্থী, কেউ কেউ ফ্যাসিবাদী মনোভাব পোষণ করেছেন, কেউ আবার নিজেদের প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে ফ্যাসিজমের সুবিধা নিয়েছেন।

 

 

গত কয়েক মাসে গণমাধ্যমে নানা রকম মুখোশ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। অনেকে এখন ছাত্রনেতাদের বই প্রকাশের মাধ্যমে অতীতের কুকর্ম ধুয়ে ফেলতে চাইছেন, কেউ কেউ শেষ মুহূর্তে অভ্যুত্থানের সাথে নিজেদের সংযুক্ত করতে চাইছেন। আশরাফ কায়সারের মতে, “আমরা বলছি না, আপনারা অযৌক্তিক রিপোর্ট করুন বা মন্তব্য ছাপুন। আমরা চাই, সত্য ও যৌক্তিক ভিত্তিতে কথা বলুন। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গণমাধ্যমকে সৎভাবে ভূমিকা রাখতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যম চাইলে একটি দেশের গণতন্ত্রকে মজবুত করতে পারে, আবার চাইলে রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে দুর্বল করে নিজেই ছায়া সরকার হয়ে উঠতে পারে। “আমাদের দেশে কিছু গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান শুরু থেকেই সেই মতলব নিয়ে এসেছে। তারা রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়ে এখন গণমাধ্যমে বসে ছায়া শাসক হতে চাচ্ছেন,” বলেন কায়সার।

 

 

এ সময় তিনি সমালোচনা করেন, কেউ কেউ অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় প্রশ্ন না করে নিজের মন্তব্য জুড়ে দিচ্ছেন। “বাংলাদেশের মানুষ এসব সাংবাদিকের ব্যক্তিগত মতামতের জন্য অপেক্ষা করছে না,” বলেন তিনি।

প্রফেসর ইউনূসের উদাহরণ টেনে আশরাফ কায়সার বলেন, “আমি তার ভারতের বিষয়ে মন্তব্যগুলো গুরুত্ব সহকারে শুনি, কারণ রাজনৈতিক শক্তিগুলোর শেখার রয়েছে। কিন্তু কোনো কোনো গণমাধ্যম ইচ্ছাকৃতভাবে ভারতের অবস্থানকে হালকা করে উপস্থাপন করে, যাতে নিজেরা ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে টিকে থাকতে পারে।”

তিনি শেষ পর্যন্ত বলেন, বাংলাদেশ এখন এক নতুন ধাপে প্রবেশ করছে, যেখানে গণমাধ্যম, ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, সুশীল সমাজ এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রত্যেককে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। “আমার ধারণা, যে রাজনৈতিক শক্তি বিদায় নিয়েছে বা পরাজিত হয়েছে, তারা শুধু নয়, আমরা সবাই এই মুহূর্তে নতুন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করার পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি,” বলেন সাংবাদিক আশরাফ কায়সার।

আঁখি

আরো পড়ুন  

×